ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় নেতানিয়াহুর গাজা দখল পরিকল্পনার অনুমোদন

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি হামাসকে পুরোপুরি নির্মূলের উদ্দেশ্যে গাজার শতভাগ এলাকার দখল নিতে চান। তার এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা দেশটির যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
অনুমোদিত পরিকল্পনার বিস্তারিত
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে অ্যাক্সিওস জানায়, 'হামাসকে পরাজিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নেবে। একইসঙ্গে, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরের অংশে অবস্থানরত বেসামরিক মানুষদের মানবিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখবে।'
বিবৃতিতে 'অধিগ্রহণ' শব্দের বদলে 'নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানিয়েছে, বেসামরিক মানুষের বাসস্থান 'অধিগ্রহণের' আইনি পরিণামের কথা মাথায় রেখে এভাবে বিবৃতির ভাষা বদলে দেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় গাজা সিটিকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলা ও গাজা উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থানরত ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোর উল্লেখ আছে।
এই পরিকল্পনার আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনার উদ্দেশে বৃহস্পতিবারে শুরু হয় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক, যা রাতভর চলে। প্রায় ১০ ঘণ্টা বৈঠক শেষে শুক্রবার ঐক্যমতে পৌঁছান ইসরায়েলি নেতারা।
বৈঠক শেষে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জেরুজালেম পোস্টকে বলেন, সামরিক বাহিনী 'গাজায় সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।' পরবর্তীতে গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোতেও সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণ ঘটানো হবে।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গাজায় মানবিক ত্রাণ বিতরণের পরিমাণ চার গুণ বাড়াতে চায় ইসরায়েল।
এ বিষয়ে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মডেল অনুসরণ করে ১৬টি নতুন মানবিক ত্রাণকেন্দ্র চালু করতে চলেছে।
অভিযানের সময়সীমা অন্তত ছয় মাস হতে পারে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেরুজালেম পোস্টকে জানান, নেতানিয়াহুর দৃঢ়বিশ্বাস, 'এটাই হামাসকে পরাজিত করার একমাত্র পথ'।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
এর আগে নেতানিয়াহু বলেছিলেন তিনি 'পাঁচ মাসে পাঁচ ডিভিশন সেনা ব্যবহার করে' গাজা দখল করবেন।
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা পুরো গাজা উপত্যকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিতে চাই। হামাসকে নির্মূল করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা গাজার নিয়ন্ত্রণভার স্থানান্তর করব।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাজার দখল নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা সেটাই করতে চাই'।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটা আমরা করতে চাই। হামাসকে পরাজিত করতে চাই। বেসামরিক প্রশাসনের হাতে গাজার শাসনভার তুলে দিতে চাই। এমন কেউ, যারা হামাস-সংশ্লিষ্ট নয়। এমন কাউকে চাই না, যারা ইসরায়েল ধ্বংসের পক্ষে প্রচারণা চালায়। আমরা এটাই চাই। গাজার মানুষকে মুক্তি দিতে চাই। হামাসের ভয়াবহ জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্তি দিতে চাই। ফিলিস্তিনিরাও এখন হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা তাদের মুক্তির জন্য লড়ছে। তারা এই ভয়াবহ স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্তি চায়। তাদের কাছে শুধু ইসরায়েলিরাই জিম্মি থাকছে না। সঙ্গে ২০ লাখ গাজাবাসীও তাদের হাতে জিম্মি। এর অবসান ঘটাতে হবে।'
'তবে (দখলের পর) আমরা এটা রেখে দেব না। আমরা একটা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে চাই। আমরা এর প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে চাই না। আমরা কোনোভাবেই (গাজার) প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না', যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্য পূরণের পর 'আরব বাহিনীর' হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণভার তুলে দিতে চায় হামাস। ওই 'আরব বাহিনীই' গাজা শাসন করবে।
তবে আরব বাহিনী বলতে কাদের কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট করেননি নেতানিয়াহু।
ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুর এই উদ্যোগে সমর্থন দেবে কী না, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েল কি উদ্যোগ নেবে, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে।'
সেনাপ্রধানের বক্তব্য
এর আগে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে একে 'ভুল' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির।
ওই ঘটনার পর প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জামির বলেন, আইডিএফ 'নির্ভয়ে তাদের অবস্থান জানানো অব্যাহত রাখবে'।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি বলেন, 'আমরা দেশের প্রতিরক্ষা ও জীবন-মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। আমরা ইসরায়েলের সেনা ও বেসামরিক মানুষদের কথা বিবেচনায় রেখেই এসব কাজ করি।'
'আমরা দায়িত্বশীলতা, সততা ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখব। আমরা শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য কাজ করব', যোগ করেন তিনি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু উল্লেখ করেন, 'আমরা গাজাকে ইসরায়েলের অংশ করব না।'
Comments