শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকার আর নেই

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং বামপন্থী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। 

পরিবারের পক্ষ থেকে জামাতা লেখক রাজীব সরকার তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। রাজধানীর হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতাল থেকে গত শুক্রবার রিলিজ নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি কিডনি, মূত্রথলির ইনফেকশনসহ নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। 

যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তার প্রথম গ্রন্থ 'সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা' প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় 'বাংলাদেশের কবিগান', 'বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য', 'সংস্কৃতির সংগ্রাম', 'মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব'। এ প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুপাঠ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত 'গল্পে গল্পে ব্যাকরণ' বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি।

যথাক্রমে- 'কেদারনাথ মজুমদার', 'চন্দ্রকুমার দে', 'হরিচরণ আচার্য', 'সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী'। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী', 'প্রসঙ্গ মৌলবাদ' ও 'জালাল গীতিকা সমগ্র'। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আরও রয়েছে 'পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন', 'দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা', 'সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার', 'সাহিত্য নিয়ে নানাকথা' ইত্যাদি।

লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে 'পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন' গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোণায়।

 

 

Comments

The Daily Star  | English
US tariff cut helps Bangladesh garment industry

Will Bangladesh benefit from higher US tariffs on China, India?

Bangladesh's garment industry sees potential in US tariff policy

12h ago