ডাকসু নির্বাচন

‘দেশবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি’

এনামুল হাসান অনয়। ছবি: সংগৃহীত

দেশবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে 'অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এনামুল হাসান অনয়।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বামপন্থী তিন ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেলের এই জিএস প্রার্থী বলেন, একাত্তর, নব্বই ও চব্বিশে এই ভূখণ্ডের আপামর গণমানুষের লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার নিরিখে আমরা একটা মানবিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করতে চাই। এই ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে যাত্রা, সেই যাত্রায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারাটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আমাদের প্যানেলের বিশেষত্ব হলো সবাই রানিং স্টুডেন্ট। ফলে তারা ক্যাম্পাসের বর্তমান সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে জানে-বোঝে। তারা ডাকসু নেতৃত্বে এলে সেটা হবে বেশি প্রতিনিধিত্বশীল। প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা আমাকে পাশে পেয়েছেন। এজন্যই শিক্ষার্থীরাও লড়াইয়ের মুখগুলো চিনে নেবেন।

নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে অনয় বলেন, নির্বাচিত হলে এক বছর কাজ করার সময় পাওয়া যাবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এত এত সংকট আছে, তা বিবেচনায় এই সময় অপ্রতুল। কিন্তু আমি শিক্ষার্থীদেরকে নিশ্চিত করতে চাই যে, শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের যে মৌলিক অধিকার বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা ও যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ, সেগুলো নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য গণতান্ত্রিক সহবস্থান জারি রাখতে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন সংগঠিত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর থাকব এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেই রোডম্যাপ সংযুক্ত করে দেবো। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামুখী ও জ্ঞানবিজ্ঞানের চারণভূমি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ নিশ্চিত করব। যদি নির্বাচিত নাও হতে পারি, যারা নির্বাচিত হবেন, তারা যাতে এগুলো করেন, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি বিনির্মাণে দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় আমরা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা লালন করেছিলাম। কিন্তু সার্বিক চিত্র যতটা আমেজময় হবে বলে আশা করেছিলাম, বাস্তবে তা আশানুরূপ নয়। পাশাপাশি আমরা দেখেছি, কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ঘাটতি আছে। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যে সংকোচন নীতি প্রশাসন অবলম্বন করছে, এর পেছনে কী এজেন্ডা আছে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। সব মিলিয়ে প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের যথেষ্ট গাফিলতি আছে।

'দেশবিরোধী এই অপশক্তিকে রুখতেই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি' মন্তব্য করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির এই শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, ছাত্রশিবিরের ঘৃণ্য রাজনীতি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে চাই না। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের চুক্তির বিষয়টি আমরা জানি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের তৎকালীন নেতাদের দিয়েই ১৯৭৭ সালে ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। একাত্তরে তাদের স্বাধীনতা-বিরোধী যে এজেন্ডা, তারা যে এখনো সেটাই বাস্তবায়ন করতে চায়, তার প্রমাণ আমরা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে দেখেছি।

এত কিছুর পরেও ছাত্রশিবিরকে তো আমরা আমাদের ঐতিহাসিক লিগ্যাসি ভুলে গণহত্যার দায় থেকে মুক্তি দিতে পারি না। এরপরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোলে চেপে ছাত্রশিবির যদি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, আমরা জানি, শিক্ষার্থীরা ব্যালটযুদ্ধে এসব চিহ্নিত দেশবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করবে—যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Election Commission has proposed stricter amendments to the election law

Fugitives can’t run in national elections

The Election Commission has proposed stricter amendments to the election law, including a provision barring fugitives from contesting national polls.

10h ago