এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি: সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়া কমেছে

চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকের কয়েক সপ্তাহে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ব্যয়ে মন্থর গতির কারণে তহবিলের চাহিদা কম। আর এর ফল দেখা যাচ্ছে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতায়। সম্প্রতি সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার গতি কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত সপ্তাহে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই ওয়েজ অ্যান্ড মিন্স অ্যাডভান্সের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতে পারে, যা আয় ও ব্যয়ের অস্থায়ী ভারসাম্যহীনতা সামলাতে সহায়তা করে।

এই সময়ে সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে।

চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ব্যাংকখাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এডিপি বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করছে এবং যথাযথ ব্যয় মূল্যায়ন করছে।'

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও ধীর হয়ে গেছে। কারণ, সামগ্রিকভাবে সরকারি কার্যক্রম মন্থর। সরকার অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।'

গত অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে—সংশোধিত এডিপির মাত্র ৬৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরের পর থেকে এটিই সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সংশোধিত ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে এডিপি বাস্তবায়ন সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে—যা পুরো বছরের ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মাত্র ০.৬৯ শতাংশ।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১২টি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে তাদের বরাদ্দ থেকে এক টাকাও খরচ করেনি।

চলতি অর্থবছরের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত সরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের মতো ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৭ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

এর ফলে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের হিসাব বাদ দিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।

সরকার মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকখাত থেকে ঋণ গ্রহণ করে।

Comments

The Daily Star  | English

Simpler rules key to smooth transition from LDC

Leading entrepreneurs yesterday urged the government to create an environment more conducive to doing business as Bangladesh prepares to graduate from the UN’s least developed country (LDC) category next year.

7h ago