টাকা উড়ছে ইংল্যান্ডে, শ্বাসরুদ্ধ স্পেন

ইউরোপিয়ান ফুটবলের মানচিত্রে যেন আজ দুটি আলাদা পৃথিবী আঁকা। একদিকে ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ, যেখানে অর্থ ঢালার উন্মত্ততা আকাশ ছুঁয়েছে, রেকর্ড ভেঙেছে, আরেকটি নতুন যুগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অন্যদিকে স্পেনের লা লিগা, যেখানে বাজেটের শৃঙ্খল টান টান, ক্লাবগুলো শ্বাস নিতে হিমশিম খাচ্ছে, এবং প্রতিটি দিন যেন তাদের জন্য বেঁচে থাকার এক সংগ্রাম।

সবশেষ ইউরোপীয় ফুটবলের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আর্থিক দিক থেকে প্রিমিয়ার লিগ যেন এক অন্য গ্যালাক্সি, আর লা লিগা হাঁপাচ্ছে খরচের ঘাটতিতে। মাত্র কয়েক সপ্তাহে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো ৩ বিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করে ফেলেছে, অথচ স্প্যানিশ ক্লাবগুলো মিলে ব্যয় করেছে মাত্র ৭০১ মিলিয়ন ইউরো। এই ব্যবধানই বলে দিচ্ছে কেন শীর্ষ তারকারা ইংল্যান্ডে ছুটছে, আর কেন লা লিগার মাঝারি ও ছোট ক্লাবগুলো খেলোয়াড় নিবন্ধন করাতেও হিমশিম খাচ্ছে।

স্প্যানিশ ফুটবলের আর্থিক মন্দা যেন শেষ হওয়ার নাম নেই। কঠোর ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে নিয়ম আর কোভিড-পরবর্তী ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা, সব মিলিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের বহু ক্লাব খেলোয়াড় কিনতে তো পারছেই না, বরং নিবন্ধন করাতে গিয়েই সমস্যায় পড়ছে।

গেতাফের মতো দলকে অন্য খেলোয়াড় নিবন্ধনের জন্য উচেকে বিক্রি করতে হয়েছে, বার্সেলোনাও মাত্র ২৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক গ্যারান্টি খুঁজে নিবন্ধনের কাজ সারতে পেরেছে। সেভিয়ার অবস্থা আরও করুণ, এক ইউরোও খরচ করতে না পেরে তারা লুকেবাকিওকে ২০ মিলিয়নে বেচে দিয়েছে বেনফিকায়। ব্যতিক্রম বলতে ভিয়ারিয়াল (১০২ মিলিয়ন) আর রিয়াল বেতিস (৬২ মিলিয়ন), যারা বিক্রি থেকে পাওয়া টাকা কাজে লাগাতে পেরেছে।

অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের ছবি একেবারেই ভিন্ন। সেখানে ১৫টি ক্লাব প্রত্যেকেই ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি ব্যয় করেছে, যার মধ্যে টটেনহ্যাম, নিউক্যাসল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল সহজেই ২০০ মিলিয়নের সীমা পেরিয়েছে। শুধু লিভারপুলই খরচ করেছে ৪০০ মিলিয়নের বেশি। এমনকি প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে ছোট ক্লাবও খরচ করেছে বার্সেলোনার চেয়ে বেশি।

তবু লা লিগার আলো নিভে যায়নি পুরোপুরি। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৬ জনই স্পেনে খেলছেন। কিন্তু তারা সবাই রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায়। লামিন ইয়ামাল, পেদ্রি, জুড বেলিংহ্যাম, কিলিয়ান এমবাপে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ফেদে ভালভার্দে, এই নামগুলোই স্প্যানিশ লিগকে এখনও মর্যাদার আসনে ধরে রেখেছে। তবে বাকি তারকারা ছুটছেন ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে, হাল্যান্ড (ম্যানসিটি), বুকোয়া সাকা (আর্সেনাল), ফ্লোরিয়ান ভার্টজ (লিভারপুল), জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন)।

লা লিগার জন্য এটিই বড় প্রতিবন্ধকতা। বিশ্বসেরা তারকারা রিয়াল-বার্সায় থাকতে চাইছেন, কিন্তু বাকি ক্লাবগুলো ধুঁকছে আর্থিক সংকটে। প্রিমিয়ার লিগ যখন বিলিয়ন ইউরোর বন্যায় নতুন নতুন তারকা ভাসিয়ে আনছে, তখন স্প্যানিশ ফুটবলের বেশিরভাগ অংশ আটকে পড়েছে এক অর্থনৈতিক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে।

Comments

The Daily Star  | English

At least 10 incidents in 7 years: Why clashes between CU students and locals keep happening

Housing shortage, resentment, and administrative inaction blamed for repeated clashes

1h ago