বার্সার 'ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে' কার্যক্রম বাতিল করেছে লা লিগা

এফসি বার্সেলোনার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার (ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে) কার্যক্রম বাতিল করেছে লা লিগা, যার মাধ্যমে ক্লাবটি পাও ভিক্টর ও দানি ওলমোকে নিবন্ধন করেছিল। নয়টি পয়েন্টে বিভক্ত কঠোর এক বিবৃতি প্রকাশ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হাভিয়ের তেবাসের নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি।

এই অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার কার্যক্রম এসেছিল সেইসব প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে, যেখানে স্পটিফাই ক্যাম্প ন্যুতে ভিআইপি বক্সের কর্পোরেট লেনদেন নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এই বিষয়টি লা লিগাকে জানায় বার্সা। বিবৃতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা বিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বের বিষয়টি জোর দেওয়া হয়েছে।

লা লিগার মতে, বার্সেলোনা আবারও 'ফেয়ার প্লে' মানদণ্ড হারিয়েছে, অর্থাৎ '১:১ নিয়ম' কার্যকর নেই এবং তারা দানি ওলমো ও পাও ভিক্টরকে নিবন্ধন করার সামর্থ্য হারিয়েছে। কারণ, ক্লাবের নিরীক্ষক বার্সেলোনার বর্তমান হিসাব-নিকাশে স্পটিফাই ক্যাম্প ন্যু'র ভবিষ্যৎ ভিআইপি বক্স বিক্রির আয় অন্তর্ভুক্ত করেননি, যা ১০০ মিলিয়ন ইউরোর সমান। বার্সেলোনা ৪৭৫টি ভিআইপি বক্স বিক্রির নথিপত্র ৩১ ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়সীমার পর লা লিগায় জমা দেয়।

তবে, স্পেনের উচ্চ ক্রীড়া পরিষদের (সিএসডি) সাময়িক আদেশের কারণে দানি ওলমো এবং পাও ভিক্টরকে অস্থায়ীভাবে নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ৭ তারিখের মধ্যে আসার কথা।

লা লিগা বার্সেলোনার মধ্যবর্তী আর্থিক বিবরণী এবং মৌসুমের প্রথমার্ধের হিসাবের সারাংশ পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করেছে যে, উল্লিখিত কর্পোরেট লেনদেনের কোনো অর্থ লাভ-ক্ষতির হিসাবে প্রতিফলিত হয়নি, যা ক্লাব এবং নিরীক্ষক পূর্বে নিশ্চিত করেছিল। এছাড়া উক্ত নথিপত্রের বৈধতা নিশ্চিত করেছেন এমন একজন নিরীক্ষক, যিনি পূর্ববর্তী জানুয়ারিতে ভিআইপি বক্সের লেনদেনের সার্টিফিকেট দেওয়া নিরীক্ষকের চেয়ে ভিন্ন ব্যক্তি। উল্লেখ করা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে বার্সেলোনার তিনজন ভিন্ন নিরীক্ষক ছিল।

লা লিগার উল্লেখিত বিষয়গুলো:

১. লা লিগার বাজেট প্রস্তুতি বিধি (বিপিআর) অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩ জানুয়ারি বার্সেলোনার উক্ত লেনদেন সংক্রান্ত নথিপত্র গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ক্লাবের নতুন নিরীক্ষক (যিনি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন) একটি সার্টিফিকেট প্রদান করেন, যেখানে উক্ত লেনদেনকে চলতি মৌসুমের লাভ-ক্ষতির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ ছিল। এই নথিপত্র গ্রহণ করা জরুরি ছিল, কারণ এর অনুপস্থিতিতে হিসাবকে বৈধ বলে গণ্য করা সম্ভব হতো না। এই হিসাব গ্রহণের পর ৩ জানুয়ারি বার্সেলোনার স্কোয়াড কস্ট লিমিট (এসসিসিএল) বৃদ্ধি করা হয়, যা তাদের খেলোয়াড় নিবন্ধনের সুযোগ দেয়।

২. ১৪ ফেব্রুয়ারি, লা লিগা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, স্পেনের ক্রীড়া আইন (আর্টিকেল ৬৪.৪) অনুসারে উচ্চ ক্রীড়া পরিষদের (সিএসডি) কাছে নিরীক্ষকদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিদর্শনের অনুরোধ করে, যাতে লা লিগার সংগৃহীত সমস্ত তথ্য সংযুক্ত করা হয়।

৩. অনুরোধের জবাব না পেয়ে, লা লিগা ১৭ মার্চ পুনরায় সিএসডিকে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য চাপ দেয়। তবে, ২৬ মার্চ সিএসডি জানায় যে এটি তাদের ঐচ্ছিক সিদ্ধান্ত, এবং বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ফলে, সিএসডি এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে বোঝা যায়।

৪. বার্সেলোনা তাদের মধ্যবর্তী আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে দেখা যায় যে এই প্রতিবেদনে তিনটি ভিন্ন নিরীক্ষকের কাজ রয়েছে—ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪-এর আগে গ্রান্ট থর্নটন, এরপর নতুন একজন, এবং পরে ক্রো অডিটোরস এস্পানা, এসএলপি।

৫. মধ্যবর্তী আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখিত কর্পোরেট লেনদেনের কোনো অর্থ লাভ-ক্ষতির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা ক্লাব এবং নিরীক্ষক পূর্বে নিশ্চিত করেছিল।

৬. নিরীক্ষিত বিবরণী অনুযায়ী, বার্সেলোনা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ জানুয়ারি ২০২৫ বা এর পরেও খেলোয়াড় নিবন্ধনের আর্থিক সামর্থ্য রাখেনি। অর্থাৎ, 'ফেয়ার প্লে' নিয়ম মানতে পারেনি।

৭. লা লিগা, নিরীক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে, বার্সেলোনার এলসিপিডি কমিয়ে দিয়েছে।

৮. ২৭ মার্চ, লা লিগা সিএসডিকে জানায় যে, মধ্যবর্তী আর্থিক বিবরণী অনুসারে বার্সেলোনার 'ফেয়ার প্লে' লঙ্ঘন হয়েছে এবং তারা এলসিপিডি হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে।

৯. এই পরিস্থিতির আলোকে, লা লিগা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে বার্সেলোনার নিয়োগকৃত নিরীক্ষককে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং অব অ্যাকাউন্টস (আইসিএসি)-এর কাছে রিপোর্ট করবে, কারণ তিনি কর্পোরেট লেনদেনের আর্থিক হিসাব লাভ-ক্ষতির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago