বন্ধু, থেকো তুমি পাশে
নারী-পুরুষ প্রত্যেক মানুষের জীবনেই আসে ভালোবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি। কখনো এই অনুভূতি অযাচিতভাবে দমকা হাওয়ার মতো মনের ঘরে এসে পৌঁছায়। আবার কখনো নিভৃতে এসে হৃদয়ে কড়া নাড়ে। আসুক না, ক্ষতি কী? প্রত্যেক মানুষেরই তো বেঁচে থাকার জন্য এই অবলম্বনের দরকার পড়ে।
কিন্তু ভালোবাসার কথা বললে সঙ্গে মনে পড়ে যায় কবীর সুমনের সেই গানটি—‘মন খারাপ করা বিকেল মানে মেঘ করেছে, দূরে কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে’। বহুদিনের প্রিয় কাছের মানুষটি কখনো হারিয়ে যায়। কিংবা যাঁকে নিয়ে ধীরে ধীরে যেই স্বপ্নটি গড়ে তুলছিলেন তা ভেঙে যেতে পারে কয়েক মুহূর্তে। কিন্তু মন খারাপ করা বিকেল বেলাতেও দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। আর এখানে কয়েক পশলা বৃষ্টির ভূমিকাটা রাখতে পারে আপনার কাছের বন্ধুটি।
ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে গেলে স্বাভাবিক কারণেই মানসিকতা ভেঙে পড়ে। যা আপনার পড়াশোনা থেকে শুরু করে পেশাজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময়টায় আপনার কাছের বন্ধুর দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবারে অনেক সদস্য থাকে; কিন্তু খোলামেলা আলোচনাটা আমরা বন্ধুদের সঙ্গে করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আপনার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধুকে সবকিছু খুলে বলুন। অপর দিকে একজন বন্ধুর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটা হবে মানসিকভাবে সহায়তা দেওয়া। হয়তো আলোচনার মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া সম্পর্কটির নবোদয় হবে না। কিন্তু, হ্যাঁ বন্ধুর দেওয়া এই মানসিক শক্তির বলেই বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা সামলে নিতে পারবেন আপনার ভগ্নহৃদয় বন্ধুটি। ব্রেকআপ হওয়া মানুষটির ভেতরে কী কী সদ্গুণ আছে তার পরিচর্যা করতে উৎসাহিত করলে বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা অনেকখানি কমে যায়।
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের কাউন্সেলর মরিয়ম সুলতানা বলেন, সম্পর্ক ভেঙে গেলে বিষণ্নতা, একাকিত্ববোধ, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, ক্ষোভ—এ ধরনের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাছের বন্ধুর মনের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলে কষ্ট অনেকটাই কমে যায়। তবে তিনি এও বললেন, ‘খোলামেলা আলোচনার সঙ্গে এটাও মনে রাখুন, আপনি যাকে সব বলছেন সে সত্যিই কতটুকু বিশ্বাসী। আপনার অনুভূতির প্রতি ওই বন্ধু কতটুকু শ্রদ্ধাশীল।’
বন্ধুর করণীয়
* ব্যাপারটি সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নিন। ধৈর্য নিয়ে পুরোটা শুনে নিন। যদি এ পক্ষের দোষ থাকে তবে তাকে বুঝিয়ে বলুন, ভবিষ্যতে এমনটি করতে মানা করুন। আর যদি দোষ অপর পক্ষের হয়ে থাকে তবে তাকেও বুঝিয়ে বলুন, ‘চলার পথ এখনো অনেক বাকি, বন্ধু’।
* ভেঙে পড়া মানুষটিকে সময় দিন। একা থাকার কারণে সে আরও ভেঙে যেতে পারে। তাই তাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, কিংবা বন্ধুমহলে একসঙ্গে গল্প-আড্ডাও তাকে মানসিকভাবে ভালো রাখবে।
* তাকে সময় নিতে দিন। সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর সে কী করতে চায়, সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ তার নিজের। প্রয়োজনে আপনি তাকে পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন: ঝোঁকের বশে নতুন কোনো সম্পর্কে যেতে না করুন। কিন্তু মনে রাখবেন সিদ্ধান্তটা তার একান্তই নিজের।
* কোনোভাবেই আগের সম্পর্কের কথা তাকে মনে করিয়ে না দেওয়া। বরং তাকে সহায়তা করুন এর রেশ থেকে বেরিয়ে আসতে।
* সর্বোপরি তাকে মানসিকভাবে সহায়তা দেওয়া। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করুন। কেননা পরিবার থেকেও তার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে কোনো কাউন্সেলরের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দিতে পারেন।
Comments