ইসলামের প্রতি নেতিবাচক ধারণাকে কেন্দ্রে রেখে নীতি নির্ধারণ করছেন ট্রাম্প

ছবি: এএফপি

ইসলামের প্রতি নেতিবাচক ধারনা পোষণকারী একজন আমেরিকান নাগরিকের মনোভাব ঠিক কেমন হতে পারে তা গত বছর আগস্ট মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রথমবারের মত পূর্ণরূপে দেখা গিয়েছিল। ওই ধারনাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আমূল পাল্টে দিচ্ছে।

ওহায়োর ইয়াংসটাউনে ট্রাম্প বলেছেন, বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় হুমকি মোকাবেলা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বক্তব্য দেওয়ার এক মাস আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণভাবে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। তিনি বলেন, যখন ইসলামিক স্টেট মধ্যপ্রাচ্যে নির্মমতা চালাচ্ছে তখন পশ্চিমা দেশগুলোর অভিবাসীরা নাইটক্লাবে, অফিসে ও চার্চে বেকসুর লোকজনকে হত্যা করছে। এটা বন্ধ করতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “কট্টর ইসলামের ঘৃণায় পূর্ণ মতাদর্শকে অবশ্যই আমাদের সমাজে থাকতে ও বাড়তে দেওয়া যাবে না।”

ট্রাম্পের এই বক্তব্য নতুন কিছু নয়। গত ২০ বছরে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যেসব ইসলামবিরোধী তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে তারই প্রতিধ্বনি ছিলো ট্রাম্পের কথায়। ইসলাম সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক ধারনা ট্রাম্প গ্রহণ করেছেন তার নিজের অনেক সহযোগী এসব ধারনা প্রচারের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে সুপরিচিতরা হলেন, ট্রাম্পের বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লে জে মাইকেল টি ফ্লিন ও শীর্ষ কৌশল নির্ধারণকারী স্টিফেন কে বান্নোন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি হানটিংটনের ‘সভ্যতার সংঘাত’ ও মোটা দাগের ইসলাম সমালোচকদের কাছ থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছেন তিনি।

এ ধরনের সমালোচকরা মাঝে মধ্যেই আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মত সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে মুসলিম ব্রাদারহুড, তার শাখা সংগঠন এমনকি সারা বিশ্বের ১৭০ কোটি মুসলমানকে মিলিয়ে ফেলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে এ রকম দৃষ্টিভঙ্গির লোকজন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেন। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে, সরকারের ভেতর জঙ্গিদের ঢুকে যাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন শরীয়া আইন চালু হওয়ার বিপদ।

যারা এরকম দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেন তারা মনে করেন, চরিত্রগতভাবেই ইসলাম একটি উগ্র মতবাদ এবং এই মতবাদে বিশ্বাসীরা খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের শত্রু মনে করে সহিংসতা বা মগজধোলাইয়ের মাধ্যমে তাদের বশীভূত করার চেষ্টা করে।

গত শুক্রবারের ট্রাম্পের মুসলমান নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশকে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধরনা পোষণকারীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এর পরবর্তী ধাপ হলো, মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করা সংগঠন ইসলামিক ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেওয়া যা নিয়ে হোয়াইট হাউজে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সাতটি মুসলমান প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও শরণার্থী না নেওয়ার মধ্য দিয়ে বরং আরেকটি বিষয় ঘোষণা করা হয়েছে। সেটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশ ও তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল নীতি বা শরীয়া আইনের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখবে।

যারা ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন তাদের বেশিরভাগই প্রেসিডেন্ট ওবামার মতো ইসলাম সম্পর্কে এমন মনোভাব দূরে সরিয়ে রাখলেও ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থিদের মধ্যে এই প্রবণতাটা তৈরি হতে দেখা যায়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন তৈরির কেন্দ্রে চলে এসেছে তারা।

তবে ট্রাম্প বলছেন, এই নির্বাহী আদেশ মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার জন্য দেওয়া হয়নি। আর তার সমর্থকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে রক্ষা করার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত এটা। এই আদেশে ইসলাম বিদ্বেষ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, গত আগস্ট মাসে ইসলামের সংস্কারবাদীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস বলতে চেয়েছে ট্রাম্প ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারনা পোষণ করেন এটা পুরোপুরি সঠিক নয়।

ট্রাম্পের আরেকজন নিরাপত্তা উপদেষ্টাও মুসলমান নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশের সাফাই গেয়ে বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের ওপর চাপ বাড়ার ফলে এই পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া ১০ হাজার বিদেশি জঙ্গি মধ্যপ্রাচ্য ছাড়বে। এদের মধ্য থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। এমনও হতে পারে শরণার্থীর নাম করে এরা আসার চেষ্টা করছে।

কিন্তু সমালোচকরা মনে করছেন ইসলাম সম্পর্কে যে ভুল ধারনা উপদেষ্টারা ট্রাম্পের মধ্যে বদ্ধমূল করেছেন তার ফল হিসেবে বিদেশি মুসলমানদের প্রতি কঠোর আচরণ করছেন ট্রাম্প।

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ইসলাম অ্যান্ড ডেমোক্রেসির চেয়ারওম্যান আসমা আফসারউদ্দিন বলেন, “৯/১১ এর পর থেকেই তারা ভয় ও সন্দেহের মধ্যে ঢুকে রয়েছেন।” ট্রাম্পের সমর্থকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “জঙ্গি হামলার খবর ছাড়া ইসলাম বা মুসলমান সম্পর্কে তারা আর কিছুই জানে না।”

সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসীদের যুক্তিকেই শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন আসমা। সন্ত্রাসীরা প্রচার করে, ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা আরও প্রসারিত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

New Trump tariffs: early modelling shows most economies lose – the US more than many

The tariffs will compel foreign producers to lower their prices. But these price decreases only partially offset the cost of the tariffs, so US consumers pay higher prices.

45m ago