কুমিরের চামড়া থেকে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

বছরে এক হাজার চামড়া রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে ময়মনসিংহের ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’
ময়মনসিংহে খামারে রোদ পোহাচ্ছে কুমির। ছবি: স্টার

কুমিরের চামড়া রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দেশে। এশিয়া ও ইউরোপের অনেকগুলো দেশে এই চামড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম কুমিরের খামার ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ গত ডিসেম্বরে জাপানে ২০০ কুমিরের চামড়া রপ্তানি করে এক লাখ ছয় হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছে। খামারটি গত তিন বছর যাবৎ মূলত জাপানে চামড়া রপ্তানি করছে।

খামারের ব্যবস্থাপক আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৪ সালে প্রথমবারের মত ৪৩০টি কুমিরের চামড়া প্রায় দুই লাখ ডলারে পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রপ্তানি করা হয়। এর পরের বছরও সেখানে ৪০০টি চামড়া পাঠানো হয়। সে বছর আয় হয় এক লাখ ৬৫ হাজার ডলার।

তবে এখানে বাণিজ্যিকভাবে কুমির পালন শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। সে বছর প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া থেকে ৭৫টি লোনা পানির কুমির আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ছিলো পুরুষ। কুমিরগুলোর দাম পড়ে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বর্তমানে ১৩ দশমিক ৬ একরের এই খামারে বিভিন্ন বয়স ও আকারের প্রায় দুই হাজার কুমির রয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি কুমির প্রজননের পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ ধরনের ৪০টি পুকুরে এই কুমিরগুলোকে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি ফার্মটিতে ১০টি হ্যাচারি, ৬০০টি আলাদা প্যান ও চামড়া রাখার একটি গুদাম রয়েছে বলে জানান ফার্মের ব্যবস্থাপক।

ফার্মের কর্মকর্তারা জানান, বছরে এক হাজার কুমিরের চামড়া রপ্তানির করতে চান তারা।

খামারে ৪০ জন স্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি ৩০ জন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। ফার্মের ভেতরেই চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন তারা।

খামারের ব্যবস্থাপক আবু সায়েম জানান, তিন বছরে একটি কুমির চামড়ার জন্য উপযোগী হয়ে যায়। তবে প্রজননক্ষম হতে আট থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় নেয় তারা। চামড়ার আকার ও মান ভেদে দামের তারতম্য হয়। দামি হ্যান্ড ব্যাগ, ওয়ালেট, বেল্ট ও বুট তৈরিতে এই চামড়া ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, “এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে কুমিরের চামড়ার প্রচুর চাহিদা থাকলেও আমরা শুধু জাপানে রপ্তানি করছি।”

কুমিরকে কী খাওয়ান, এই প্রশ্নের জবাবে সায়েম জানান, এক থেকে তিন বছরের কুমিরকে দৈনিক মুরগি, গরুর মাংসের কিমা ও ছোট মাছ খেতে দেওয়া হয়। তবে তিন বা এর বেশি বয়সীদের একই খাবার প্রতিদিন না দিয়ে সপ্তাহে মাত্র একদিন খাওয়ানো হয়। কারণ বড় কুমিরদের খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে।

খামারের চেয়ারম্যান মেজবাউল হক বলেন, জাপানসহ ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে চামড়া ছাড়াও অন্যান্য সামগ্রী রপ্তানির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, চীন ও আমেরিকা মহাদেশের দশগুলোতে প্রচুর মানুষ কুমিরের মাংস খায়। এই মাংস আন্তর্জাতিক বাজারে কিলোগ্রাম প্রতি ২০ থেকে ২২ ডলারে বিক্রি হয়।

“তবে আমরা শুধু চামড়া ও অন্যান্য উপজাত রপ্তানি করছি। দেশ থেকে রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়ায় মাংস ফেলে দিতে হয়,” বলেন তিনি।

কুমির পালনের খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন বছর বয়স পর্যন্ত কুমির লালন করতে প্রতিটির পেছনে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এগুলোর প্রতিটির চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়।

ফার্মের কর্মকর্তারা জানান, সারা পৃথিবীতে ২৫ প্রজাতির কুমির পাওয়া যায়। এদের মধ্যে লোনা পানির কুমির সবচেয়ে বড় হয়। তবে স্বাদু পানিতেও এই কুমিরদের পালন করা যায়।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

4h ago