সংক্রান্তির শেষে বৈশাখ
পুরোনোকে সবাই দূরে ঠেলে দিতে চান। দিন শেষে তাঁরা তা দেনও। আর সেই দেওয়াটাই উৎসব হয়ে ওঠে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে। এরসঙ্গে যোগ দেয় নতুনকে আবাহনের উচ্ছ্বাস। রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ।
বাংলা সংস্কৃতির এক বড় নির্দশন বর্ষবরণ। জাতিভেদে ভিন্নতা আসে আচারে-অনুষ্ঠানে কিন্তু উদ্দেশ্য একই। সবার মঙ্গল কামনা। তাই জাতি-ধর্ম-গোত্র-বর্ণ সবাই এক রঙে রাঙিয়ে নেন নিজেদের। সে রং উৎসবের। সে রং আনন্দের। কোন কিছুর সঙ্গেই এর সংঘাত নেই।
বাংলাদেশে তথা বাংলা সংস্কৃতিতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় ‘হালখাতা’ দিয়ে, এটি একটি ফারসি শব্দ। কেননা, এর প্রচলন আসে মোঘল আমলে। দিল্লির বাদশাহ আকবরের আদেশে। বাংলাপিডিয়ায় রয়েছে যে কৃষিকাজের সুবিধার্থে “সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তাঁর সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে (৫ নভেম্বর ১৫৫৬)।”
এতে আরও বলা হয়, “হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। নতুন সনটি প্রথমে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়।”
তবে বৈশাখ পালিত হয় পাঞ্জাব থেকে পাতায়া পর্যন্ত। আর এ উৎসবের ঢেউ গিয়ে লাগে আরও দূরে লাওসবাসীদের গায়েও। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া যায় সেখানে এর নাম “সংক্রান” ও “’পি মাই”।
আমাদের দেশে অন্য নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমারা বৈশাখকে স্বাগত জানান যথাক্রমে বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু নামে। তাঁরা ঐক্যের মালা গেঁথেছেন ‘বৈসাবি’ নামে।
বস্তুত, নতুন বছর আসে জাতিতে জাতিতে ঐক্যের ডাক নিয়ে। শুভ সংক্রান্তি। শুভ নববর্ষ।
Comments