নতুন বছরে নতুন সারিকা

বাংলা নববর্ষ সারিকার জন্য নিয়ে এসেছে নতুন অনেক সম্ভাবনা। বিরতি থেকে ফিরে ব্যস্ত রয়েছেন অনেক কাজে। এবার বৈশাখে প্রচারিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের ‘জহির কারিগর’, যেখানে সারিকা অভিনয় করেছেন। ‘আবহমান’ নামে আরেকটি বৈশাখের নাটকে দেখা গেছে তাকে। বৈশাখেই প্রচার শুরু হয়েছে নতুন দুটি বিজ্ঞাপনের। গত বছরের বৈশাখ ছিল সারিকার জীবনের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ মেয়ের সঙ্গে প্রথম বৈশাখ উদযাপন করেছেন। এবারও মেয়ের সঙ্গে কাটিয়েছেন বৈশাখ। 

সারিকা
সারিকা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

আনন্দধারা : অনেক দিন পর নতুন করে আবার মিডিয়ায় এলেন?

সারিকা : ঠিক বলেছেন আবার নতুন করে আমার ফিরে আসা। মাঝে আমার আড়াই বছরের মতো একটা বিরতি ছিল। আসলে যে কাজটার প্রতি একটা প্যাশন থাকে, সেই কাজটা থেকে দূরে থাকা যায় না। পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তেমন একটা কাজ করতে পারিনি। তবে আমার কাজের জায়গাটাকে খুব মিস করেছি।

আনন্দধারা : আপনি যে সময় সবকিছু থেকে দূরে ছিলেন তখন আপনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন?

সারিকা : এটা ঠিক এখন আমি খ্যাতির শীর্ষে ছিলাম। কিন্তু পরিবারটাও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই দূরে থাকা। তার একটা কারণ সেটেল ডাইন করা। আর আমার কাছে মনে হয়েছে প্রফেশনাল লাইফের চেয়ে পার্সোনাল লাইফ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এতটা দিন আমার সবকিছু থেকে দূরে থাকা। দুটো বিষয় একসঙ্গে পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

আনন্দধারা : মডেলিং নাকি অভিনয় করতে বেশি পছন্দ করেন?

সারিকা : আমার অভিনয়, মডেলিং দুটোই খুব ভালো লাগে। তবে মডেলিং দিয়ে শুরু বলে মডেলিংয়ের সঙ্গে বেশি যায় মনে হয়। তবে ২০১০ সাল থেকে অভিনয় শুরু করি। তারপর থেকে অভিনয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। যখন আমি অভিনয় থেকে দূরে ছিলাম তখন ক্যামেরা, অ্যাকশন, লাইট, প্যাকআপ এই শব্দগুলো খুব মিস করতাম।

সারিকা
সারিকা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

আনন্দধারা : সিনেমায় কেন দেখা গেল না এখনো?

সারিকা : আসলে এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। আগেও অনেক সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব এসেছে। এখনো আবার আসছে অনেক সিনেমায় অভিনয় করার অফার। আমার আসলে কোনো কিছু ভেতর থেকে ফিল না এলে করতে ভালো লাগে না। তবে এখন অনেক ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। আমি এগুলোকে সাধুবাদ জানাই। এখন সিনেমা করব না এটা বলব না, তবে কখন কার কোন সিনেমা করব সেটা বলতে পারব না। তবে সিনেমা করব।

আনন্দধারা : মিডিয়ায় একটা সঙ্কট চলছে সবখানে। এটা কীভাবে দেখেন?

সারিকা : সঙ্কট চলছে এটা ঠিকই। সবাই মিলে এর মোকাবেলা করলে এটা ঠিক করা সম্ভব। সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো দেশপ্রেম। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কাজটা এমনিতে ভালো হবে। আমাদের কাজটাও ভালোবাসতে হবে। তাহলে সবকিছুর সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের দেশের নাটক, সিনেমা, গান বেশি বেশি করে শুনতে হবে, দেখতে হবে, তাহলে আমাদের সঙ্কট কেটে যাবে।

আনন্দধারা : ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সারিকা : খুব বেশি কিছু চাই না। আপনাদের মাঝে কাজ করতে চাই, ভালোবাসা চাই। আমাকে আরো ভালোবাসা দেন। আপনাদের যেন আরো ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে পারি।

সারিকা
সারিকা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

আনন্দধারা : দর্শকদের জন্য কিছু বলেন?

সারিকা : আমি যে আজকে সারিকা সেটা আপনাদের জন্যই। আপনারা আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন, আমার কাজকে ভালোবেসেছেন। আমার কাজ পছন্দ করেছেন। সেই কারণে আজ এখানে আমি অবস্থান করছি। আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছেন, প্রতিভাবান পরিচালক, লেখক, ক্যামেরাম্যান, অভিনেতা-অভিনেত্রী সব আছেন। এখন একটু দরকার আপনাদের সহযোগিতা। তাহলে যে কোনো সমস্যা পার হয়ে যাওয়া যাবে।

আনন্দধারা : অনেক মুখ আসছে, কাজ করছে, জনপ্রিয় হচ্ছে বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

সারিকা : কাজের জায়গায় নতুনরা আসবেই। প্রত্যেকের কাজে নিশ্চয়ই বিশেষত্ব আছে। আমি মনে করি, আমার কাজেও আলাদা কিছু রয়েছে। আমি আমার কাজ করে যাব।

আনন্দধারা : দর্শক কী আপনাকে আগের মতো গ্রহণ করছে?

সারিকা : এখনো বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে দর্শকের মনে আগ্রহ রয়েছে। নতুন নাটক প্রচার হচ্ছে, ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। এই প্রাপ্তি নিয়ে আরো কাজ করতে চাই।

আনন্দধারা : ফিরেই তো অনেক কাজ করছেন। কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?

সারিকা : ফিরে এসেই কয়েকটি কাজ করেছি। ৫টি একক ও একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘আমি তুমি’ নাটকে আমার বিপরীতে ছিলেন জোভান। বি ইউ শুভর ‘আকাশ বাড়িয়ে দাও’ ও সাজ্জাদ সুমনের ‘নীল ঘুম’ নাটকগুলোতে আমার বিপরীতে ছিলেন ইমন। জাহিদ হাসানের পরিচালনায় তার সঙ্গে অভিনয় করেছি ‘হৃদয় রহস্য’তে। রুবায়েত মাহমুদের ‘ফয়েল পেপারে প্রেম’ নাটকে আমার সঙ্গে ছিলেন অপূর্ব। এছাড়া আমি আর অপূর্ব ‘পাঁচফোড়ন’ নামে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি।

আনন্দধারা : জীবনের সঙ্গে অভিনয় কতখানি মিলে যায় বলে মনে করেন?

সারিকা : আমার মনে হয় অভিনয়ের সবটাই জীবন। হতে পারে এটা আমার জীবন না কিন্তু এটা কারো না কারো জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। এ কারণে আমি যখনই কোনো অভিনয় করি পুরোটাই দেয়ার চেষ্টা থাকে।

আনন্দধারা : ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেন পরিবার ও নিজের মেয়েকে?

সারিকা : পরিবার ও আমার মেয়েকে সময় দেয়ার ব্যাপারে আমি কার্পণ্য করি না। আর আমি আমার পরিবারের সবার সঙ্গেই খুব ভালো সময় কাটাই। তাছাড়া পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করে আমার কাজের ব্যাপারে।

আনন্দধারা : আগামী দিনে আপনার কাজের পরিকল্পনা কী?

সারিকা : আমি আসলে কাজ করতে চাই। থেমে থাকতে চাই না। আমার কাজ খুব ভালো লাগে। আর আসলে কাজের পরিকল্পনা বলে কিছু নেই, ভালো কাজ পেলে আমি করি।

সারিকা
সারিকা। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

আনন্দধারা : অবসরের সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী?

সারিকা : অবসরে আমি গান শুনি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারি আর মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়ি।

আনন্দধারা : নিজের কাজকে আপনি প্রাধান্য দেন কীভাবে?

সারিকা : আমি সাধারণত নিজের কাজ নয়, আগে নিজের চরিত্রকে প্রাধান্য দিই; আর ওটাকে প্রাধান্য দিলে বোধ হয় বাকিটা এমনিতেই হয়। নিজের কাজ বলে আসলে কিছু নেই যা করি দর্শকদের জন্য, তাদের ভালো লাগলেই আমি আনন্দিত।

আনন্দধারা : সবশেষে মেয়ের গল্প বলেন?

সারিকা : ওর নাম সাহরিশ, আমাকে না দেখলে খুব কান্নাকাটি করে। আমি ওকে মামমাম বলে ডাকি। ও আমাকে কখনো আম্মি বলে, মাম্মা বলে আবার কখনো আমারটা শুনে শুনে মামমাম বলেও ডাকে। ওর একটি ব্যাপার আমাকে খুব অবাক করে। আমার মেয়ের সবকিছুতে অভিনয় মিশে আছে। ও খাবে অভিনয় করে, হাঁটবে অভিনয় করে, কথা বলবে অভিনয় করে। এমনকি ও যখন কান্না করে সেটার মধ্যেও অভিনয় বোঝা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Air purifiers for Dhaka: hope or hype?

DNCC to set up 25-30 such industrial devices in public places to curb pollution; experts skeptical

18h ago