তিস্তায় আপত্তির পর মমতার অভিযোগ: ‘আত্রাইয়ের পানি আটকে রাখছে বাংলাদেশ’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছেই। এবার তাঁর অভিযোগ, আত্রাই নদীতে বাংলাদেশ বাঁধ দিয়ে ভারতকে পানি থেকে বঞ্চিত করছে। আত্রাইয়ের পানি প্রবাহ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেই রিপোর্ট নিয়ে সরব হবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা।
বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে মমতা আত্রাই নদী নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। আত্রাই নিয়ে মমতা বলেন, “আন্তর্জাতিক কোনও চুক্তি হয়নি। কিন্তু তার পরও এরকম কেন হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে আগেও বলা হয়েছিল। আমরা রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। কেন্দ্রের কাছে লিখতে হবে।”
বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা দিয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের সাফানগর দিয়ে ভারতের প্রবেশ করেছে আত্রাই নদী। এরপর ওই নদী জেলার বালুরঘাট ব্লক দিয়ে ৫২ কিলোমিটার পথ শেষ করে ডাঙ্গিজলঘর হয়ে বাংলাদেশে নওগাঁ জেলায় ঢুকেছে আত্রাই।
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি-মোহনপুর এলাকায় আত্রাই নদীতে একটি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। ওই ড্যামের কারণে খরা মৌসুমে পানি প্রবাহ আটকে যায়। এতে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা শহর বালুরঘাট ও কুমারগঞ্জ ব্লকের কয়েক লাখ কৃষক সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
তবে বালুরঘাটের স্থানীয় বাসিন্দা এবং একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান সুরজ দাস টেলিফোনে দ্যা ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করে বলেন, দেখুন আত্রাই নদী নিয়ে যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে বালুরঘাটের মানুষ হিসেবে আমাদের চোখে তেমন কোনও সমস্যা আমারা দেখি না। তবে শুনেছি বাংলাদেশের মোহনপুরে আত্রাই নদীতে একটা রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া এমনিতেই আত্রাই নদীর জল কম থাকে। হাঠাৎ করে আত্রাই নদী নিয়ে প্রশাসনের সরব হওয়ার পেছনের কারণ তার কাছে রহস্যময় বলে মনে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেখুন আমি অরাজনৈতিক মানুষ, তবে বিষয়টি যে রাজনীতি সেটা শুধু আমার কাছে না গোটা বালুরঘাটের মানুষের কাছেই মনে হবে।
এদিকে তিন দিনের জেলা সফরের অংশ হিসাবে বুধবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মমতা। সেদিন বিকালে জেলার বুনিয়াদপুর নারায়ণপুর হাইস্কুল মাঠে এক সভাতেও বক্তব্য রাখেন তৃণমূল নেত্রী। ওই সভায় দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, আত্রাই নদী নিয়ে আমার কাছে তথ্য আছে। বাঁধ দিয়ে জল আটকে রাখা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমার পুরো তথ্য চাই। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে মুখ্য সচিব এবং জেলা প্রশাসন আমাকে রিপোর্ট দেবেন।
ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই যে তিনি সরব হবেন সেটার ইঙ্গিত দেন মমতা নিজে। বলেন, আত্রাই নদী নিয়ে রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখবো। কারণ আত্রাইসহ অনেক নদীই আছে যেগুলো এই দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাণ। এই প্রাণ ভ্রমরকে মেরে দেওয়া চলবে না।
গত ২৫ এপ্রিল কোচবিহারের এক সভায় দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আত্রাই নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন। বলেছিলেন, আত্রাই নিয়ে প্রবলেম আছে। আমি বাংলাদেশের বন্ধু সরকারকে বলবো, কেন আত্রাই নদীতে বাঁধ নিয়ে জল আটকে দিচ্ছেন। বাঁধ খুলে দিন। বালুরঘাটের মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন।
নারায়ণপুর হাইস্কুল মাঠের জনসভায় মমতা ব্যানার্জি আত্রাই নদী নিয়ে তাঁর কঠোর অবস্থান শরীরিভাষায় বুঝিয়েছেন বলেও স্থানীয় সাংবাদিকরা এই প্রতিবেদকে জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, মমতা ব্যানার্জি আত্রাই নদী নিয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন হয়তো।
দিল্লিতে শেখ হাসিনার সফরের সময় তিস্তার পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে মমতা বলেছিলেন, তিস্তা নয় তোর্সা-জলঢাকা নদী থেকে পানি নিক বাংলাদেশ।
কিন্তু ঢাকায় ফিরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা কড়া অবস্থান নিয়ে জানান, ‘তোর্সা নয় তিস্তার জলই চান’- এর পর থেকেই মমতা উল্টো আত্রাই নদীতে বাংলাদেশ বাঁধ দিয়ে জল আটকে রেখেছে বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন। ঢাকা-দিল্লিকে চাপে রাখার কৌশল হিসাবেই মমতা আত্রাই ইস্যুকে সামনে আনছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
Comments