ঘুষ নেওয়ার মামলায় শিক্ষক শ্যামল কান্তি কারাগারে

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এক মামলায় নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। ছবি: স্টার

ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আজ কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন ওই একই আদালত।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ মে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনার দুই মাসের মাথায় ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন নারায়ণগঞ্জের আদালতে জমা পড়ে। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক দুটি আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

তবে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শ্যামল কান্তি ভক্ত তার স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের মামলাটি গ্রহণ করা হয়।

দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ চারজনকে সাক্ষী দেখিয়ে গত ১৭ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য শ্যামল কান্তি ভক্তকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। এরপর, তিনি আরও এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করলে পরে সেই টাকাও দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৬ সালের ১২ মে কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে মোর্শেদা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে বন্দর সহকারী কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করেন।

উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সবার সামনে ওই শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করান।

ঘটনাটি তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁকে আবার স্কুলটির প্রধান শিক্ষক করা হয়।

দোষীদের বের করতে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। এই তদন্তেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় এবং বলা হয়, শ্যামলকে মারধর করে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতনের সাধারণ ডায়েরিটিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠাতে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন।

আগামী ৪ জুলাই শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে নির্যাতনের মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেছেন ঢাকার আদালত। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন সেলিম ওসমান।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

7h ago