বল হাতে ইন্ডিয়ানরা করুক দু-চারটা সেঞ্চুরি!

ভুবেনেস্বর কুমারের বোলিং অ্যাকশন দারুণ; মনোমুগ্ধকর। আমরা অবশ্যই তাঁর সাফল্য কামনা করি। বল হাতে তিনি সেঞ্চুরি করুন। হোক আমাদের বিপক্ষে; তবু আমরা তাঁকেই সমর্থন করব; দাঁড়িয়ে জানাবো তাঁকে অভিবাদন। যে যাই বলুন, আমরা ইন্ডিয়ান বোলারদের জয়গান গাইব।...

ভুবেনেস্বর কুমারের বোলিং অ্যাকশন দারুণ; মনোমুগ্ধকর আমরা অবশ্যই তাঁর সাফল্য কামনা করি বল হাতে তিনি সেঞ্চুরি করুন হোক আমাদের বিপক্ষে; তবু আমরা তাঁকেই সমর্থন করব; দাঁড়িয়ে জানাবো তাঁকে অভিবাদন যে যাই বলুন, আমরা ইন্ডিয়ান বোলারদের জয়গান গাইব যদি আরও দু-একজন বোলার আমাদের বিপক্ষে ভুবেনেস্বরের মতো এমন কীর্তি করতে পারেন, তাঁদেরকেও আমরা অভিবাদন জানাব আমরা পক্ষ প্রতিপক্ষ ভাবি না, আমরা ক্রিকেটটা বুঝি; ক্রিকেট ভালবাসি আমরা ভালো ক্রিকেটারকে সম্মান করতে জানি কারও অহেতুক সমালোচনার থোরাই কেয়ার করি!

এইতো কয়েকদিন আগে আমরা দলে দলে, লাখে লাখে ব্রিটিশদের সমর্থন দিলাম। যে ব্রিটিশরা আমাদেরকে প্রায় দুশো বছর শাসন-শোষণ করেছে; যে ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য আমার কত আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, সেই ব্রিটিশদের আমরা সমর্থন দিলাম। কেন দিলাম? আমরা চাইলাম যে ইংলিশরা সেদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিক। ইংলিশরা শুরু থেকেই ভাল খেলছিল, তাইতো আমাদের সমর্থনটা ওরা পেল। আমাদের কাছ থেকে এমন সমর্থন ওরা কস্মিনকালেও পায়নি। এ জন্য আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে মীরজাফর বলেছি। আমরা কেউ সিরাজ-উদ-দৌলা, মীরমদন বা মোহনলাল হতে চাইনি। আমরা লর্ড ক্লাইভকে পরাজিত করতে চাইনি। আমরা হাসি মুখে মীরজাফর হয়েছি! লর্ড ক্লাইভদের জয় কামনা করেছি। কারণ, আমরা ক্রিকেটকে বড্ড ভালোবাসি; ক্রিকেটের নতুন ইতিহাসের স্বার্থে ইংল্যান্ডের জয়টা দরকার ছিল।

তাই আমরা আন্তরিক ভাবেই চাইব, ভুবেনেস্বর বল হাতে কমসে কম একটা সেঞ্চুরি করুন। তিনি নিশ্চয় অনেক ভালো খেলোয়াড়। আইপিএল-এ তিনি আলো ছড়িয়েছেন। এ বার আমরা তাঁর সাফল্য কামনা করছি। রবীন্দ্র জাদেজাও মাঝে মাঝে অনেক ভালো বোলিং করেন। তিনিও যেন বল হাতে অনেক ভালো রান পেতে পারেন আমরা তাঁরও সাফল্য কামনা করি।

তামিম, সাকিব, রিয়াদ, মুশফিকদের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া। দেশের কৃতী সন্তান হিসেবে তাঁরা অন্যদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমাদের মুখ উজ্জল করবেন। আমরা চাইব তাঁরা ভুবেনেস্বরদেরকে সহযোগিতা করবেন; যাতে তাঁরা বল হাতে অনেক অনেক রান পান।

বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান এবং রোহিত শর্মারা অনেক রান করেছেন। এবার আশা করবো তাঁরা ভুবেনেস্বরদেরকে বল হাতে রান পেতে দেখে হিংসা করবেন না। বড় মনের পরিচয় দিবেন। খেলোয়াড় সুলভ আচরণ করবেন। তাঁরাও ভুবেনেস্বরদের সাফল্যে আনন্দিত হবেন। তাহলে আমরা সবাই দলগত পার্থক্য ভুলে এক সঙ্গে ভুবেনেস্বরদের বল হাতে রান পাওয়ার রেকর্ড উদযাপন করব। নতুন ইতিহাস গড়বো।

নতুন ইতিহাস গড়ার জন্য আমরা আশা করবো, ইন্ডিয়ান ভাইয়েরা অতীত ইতিহাস ভুলে যাবেন। তাঁরা ভুলে যাবেন যে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই তাঁদের বিদায় নিতে হয়েছিল। তাঁরা আরও ভুলে যাবেন যে পাঁচ বছর পর ২০১২ সালে বাঙ্গালদেশের ভাইদের কাছে হেরে তাদেরকে এশিয়া কাপ থেকেও বিদায় নিতে হয়েছিল। আবার পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালে বড় কোন আসরে তাঁরা বাংলাদেশের মুখোমুখি। এবারও যদি হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হয় তাহলে বেশি মাইন্ড করবেন না! খেলায় হার-জিত আছে!

তবে আমরা আমাদের মাশরাফি, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের জন্য অমন সাফল্য কামনা করি না। ওরা আমাদের নিজেদের ছেলে; ওদের জন্য অল্প চাইলে ওরা মাইন্ড করবে না। ওরা বল হাতে দু-চারটা করে উইকেট পেলেই তাঁদের সাথে সাথে আমরাও খুশিতে বাকবাকুম করব।

আমাদের ক্রিকেট ভক্তদের দিকে নজর দিতে পারে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। ভারতের সঙ্গে আমাদের সেমিফাইনাল নিয়ে রসিকতার ঝড় উঠেছে ফেসবুক জুড়ে। এক তরুণ ফেসবুকে লিখেছেন, সেমিফাইনালের বাকি তিনটা দলই নাকি আমাদের শত্রু। কালকের সেমিতে ভারত আমাদের শত্রু। পাকিস্তান ছিল বাবাদের শত্রু। ইংল্যান্ড ছিল দাদাদের শত্রু। এক অগ্রজ সাংবাদিক তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে আমরা সবাই উপনিবেশিক চাচাত-মামাত ভাই-ব্রাদার।

এ যে দেখছি ক্রিকেটের অভাবনীয় সাফল্য। ইতিহাস চর্চা ভালোই জমে উঠেছে। ইতিহাসকে এতো সহজ, রসিকতায় প্রকাশ করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সালের মধ্য আগস্টের আগ পর্যন্ত ভারতবর্ষবাসীদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তাঁদের তারাতে হয়েছে। দুই দেশ – ভারত এবং পাকিস্তান হলো। বদমায়েশিতে ভরা ছিল পাকিস্তানি শাসকের দল। বাঙালিরা হার মানতে জানে না। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়েছি; জিতেছি; স্বাধীন হয়েছি। সেতো অনেক দিন আগের ইতিহাস, রাজনৈতিক ইতিহাস। ক্রিকেটের ইতিহাসে আমরা চাই নতুনদের বিজয় কেতন উড়ুক; নতুন ইতিহাস লেখা হোক। প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন বলেছেন, “একদিন শুনেছ যে সুর — ফুরায়েছে পুরনো তা — কোনো এক নতুন কিছুর আছে প্রয়োজন।”

বাংলার টাইগাররাই পারবে নতুন কিছুর প্রয়োজন মেটাতে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago