টেবিল সাজ
ঈদের দাওয়াত। ভাবছেন আত্মীয়-স্বজনকে বাসায় ডাকবেন। নতুন জামাই কিংবা নতুন বউয়ের আত্মীয়, সবাইকেই তো ডাকতে হবে। অতিথি তালিকা গুছিয়ে নেয়ার পাশাপাশি খাবারের পরিকল্পনা চলছে একইতালে। বাজারের লিস্ট বুঝি ঘর ছাড়িয়ে এবার বাইরে গিয়ে ঠেকল! আবার ঘরের সাজসজ্জার দিকেও মনোযোগ দেয়া দরকার। নইলে কেমন দেখাবে বলুন তো?
আমাদের জীবনে বছরের এই সময়টুকু ঘুরে-ফিরে বারে বারে হাজির হয়। নানান আয়োজনে তাকে আপন করে নেই আমরা। ইট-কাট-পাথরের চার দেয়ালের মাঝে ফোটে টকটকে ভালোবাসার ফুল। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আত্মীয়তার গাঁটছড়া বাঁধা হয় আরেকটু কষে। হোক না একটা দিন। কিংবা কয়েকটা ঘণ্টা মাত্র। একটা দিনের কয়েকটি ঘণ্টাই মনের কোঠায় গাঁথা থাকে। তারপর বছরজুড়ে অতিথিদের ঘরে ঘরে চলে স্মৃতিচারণ। কে কে এলো এবারের দাওয়াতে, কী ছিল কার পরনে, কত দিন পর কে কাকে দেখলেন, কোন কথাটা বেশি মনে পড়েছে, কে আসেনি, কে তাড়াতাড়ি চলে গেল, কোন রান্নাটা বেশি ভালো ছিল, ঘরের সাজ কেমন ছিল, আপ্যায়নের টেবিলটাইবা কেমন নজর কাড়ল- গল্পে বিষয়ের কোনো শেষ নেই। ছোটগল্পের মতোই ঈদের আয়োজন শেষ হয়েও কখনো যেন শেষ হয় না। মনের মাঝে রেশ থেকেই যায়। এই রেশ ধরে রাখার জন্যই ঈদে এবার বেশ করে মনোযোগ দিন খাবারের টেবিল আর তার চারপাশের সজ্জায়।
গৃহসাজ মানে কেবল নান্দনিকতা নয়। একই সঙ্গে বাস্তবধর্মী হওয়া চাই। তাই খাবারের টেবিলের নকশা বদলের সময় একটু ভেবে নিন; যা আপনার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মেলে না, এমন কোনো ডিজাইন বা পরিকল্পনা বেছে নেবেন না। আপনি যা, যেভাবে আপনার আটপ্রহর কাটে, সেভাবেই খাবারের টেবিলের চারপাশ এবং খাবার টেবিল সাজান। যেহেতু ঘর সাজানোর বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
কী উপকরণে টেবিল সাজাবেন? কী কী লাগে? হাতে গোনা কয়েকটি নাম, সবার জানা। টেবিল ক্লথ, প্লেস ম্যাট, ন্যাপকিন এবং টেবিল রানার। টেবিল ক্লথ বা ঢাকনি বেছে নিতে প্রথমেই পরামর্শ থাকবে একেবারে ধবধবে সাদা, ক্ল্যাসিক সাদা টেবিল ক্লথ বেছে নেয়ার। তার সঙ্গে ম্যাচিং করে ন্যাপকিন বা খাবারের টেবিলের রুমাল বাছুন। কিংবা অন্য কোনো রঙের সঙ্গে মিলিয়ে যদি ঢাকনি বেছে নিতে চান, তাহলে বেসিক বা মূল রঙ হিসেবে সাদাকেই বেছে নিন ক্যানভাসে।
তথ্যমতে, সাদা কোনো রঙ নয়, সাদা হলো সাতরঙের মিশেল। বে-নি-আ-স-হ-ক-লা। আর অতিথিদের মধ্যে বাচ্চা ভয়ংকর, কাচ্চা ভয়ংকরও কেউ কেউ থাকতে পারে! তাহলে কি সাদার বদলে অন্য কোনো ক্যাজুয়াল টেবিল ঢাকনি বাছতে চান? তাও পারবেন। প্রতিদিনের ব্যবহারে কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময়েই ক্যাজুয়াল বা ভিন্ন রঙের টেবিল ঢাকনিই ব্যবহার করছি। অতিথি দেবতার কথা মনে রেখে না হয় তার সঙ্গে ন্যাপকিনটার মিল রাখলেন। এভাবে সময়ও বাঁচে। বিশেষ কোনো প্যাটার্ন বা মওসুমি কোনো রঙ বেছে নিন। এবারে ঈদ তো বর্ষার ছাঁট আর তালপাকা গরমের মিশ্র সময়ে এসে পড়েছে। তবে সাদাটে, নীল মেঘ কিংবা সবুজে রঙের কোনো শেড বেছে নিন নীলাকাশ, মেঘমেদুর বর্ষা কিংবা ধোঁয়া সবুজ পাতার সঙ্গে মিলিয়ে। প্রয়োজনে টেবিল ক্লথের নিচে একখানা টেবিল প্যাড বিছিয়ে নিন।
খাবারের টেবিল সাজের সবচেয়ে মজার অংশটি বোধ হয় প্লেস ম্যাটস। কত রঙের কত ঢঙের প্লেস ম্যাটস ব্যবহৃত হচ্ছে এখন এবং তা দিয়েও ঘরের টেবিলখানা বদলে দিতে পারেন। প্রতিদিনের সাধারণ পছন্দের ম্যাট দিন। আবার ঈদের মতো বিশেষ কোনো দিনে রাজকীয় এবং অভিজাত ভাব নিয়ে আসুন কেবল প্লেস ম্যাটস বদলে দিয়ে। আর হাতে বোনা বিশেষ ধরনের ম্যাট সবসময় আলাদা আবেদন রাখবে। এবারের ঈদে যাচাই করে দেখতে পারেন।
ন্যাপকিন বেছে নিন উদ্দেশ্য অনুযায়ী। পেপার দিয়ে তৈরি কাগজের ন্যাপকিন সহজ সমাধান। খরচ বাঁচায়। যে কোনোভাবে ব্যবহার করা যায়। একবার ব্যবহারের পর ফেলে দিতে পারেন। তবে পরিবেশবান্ধব নয়। আর এক টুকরো লিলেনের মতো রাজসিক নয় মোটেই।
রাতের বেলার খাবারের টেবিলে অবশ্যই দ্রুত পানি টেনে নেয় এ ধরনের ন্যাপকিন বাছবেন। টেবিলের ম্যাটের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা বিপরীতের ন্যাপকিন বাছতে পারেন। চাইলে একেকজনের জন্য বরাদ্দ করতে পারেন একেক প্রিন্টের ন্যাপকিন। কিংবা সাদৃশ্য বজায় রাখতে পারেন আপনার অভিরুচি অনুযায়ী। অবশ্যই সাইজ পছন্দ করে ন্যাপকিন কিনবেন। টেবিলের সব ক’টি ন্যাপকিনের সাইজ মেলাবেন। প্রশ্ন হলো কখন কোন সাইজের ন্যাপকিন বাছবেন? রাতের খাবারের জন্য বাছুন ২২ ইঞ্চি ন্যাপকিন। দুপুরের জন্য ২০ ইঞ্চি। এবং সকালের নাশতার জন্য ১৮-২০ ইঞ্চি সাইজের ন্যাপকিন।
টেবিলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী লম্বাটে টেবিল রানার পাতাই উত্তম। টেবিলে রাখার সবকিছুকেই নাটকীয়ভাবে একটি টেবিল রানার মধ্যখানে নিয়ে আসে। এতে করে টেবিলের চারপ্রান্তে বসা মানুষগুলো সমানভাবে টেবিল ব্যবহার করতে পারেন। আবার কোনো কোনো ডিজাইনার ছয়জন অতিথির জন্য টেবিলের প্রস্থে আরো দুটি টেবিল রানার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে করে একাধিকবার টেবিল সাজানোর প্রয়োজন পড়ে না। একই সজ্জাতেই টেবিলের লাইন অনুযায়ী টেবিল সাজাতে পারেন।
বাকি রইল প্লেট, বাটি, কাঁটাচামচের হিসাব-নিকাশ। হাতের বাঁয়ে গ্লাস রেখে খাবারের ধরন অনুযায়ী নানা সাইজের চামচ-কাঁটাচামচ ইত্যাদি সাজান। তবে তা নির্ভর করবে আপনার মেন্যুর ওপর। কারণ কয় কোর্স বা কয় পদের লাঞ্চ বা ডিনার সেই মতোই হবে। আর হ্যাঁ, ভুলবেন না মূল পদগুলোর চামচ আর কাঁটাচামচ থাকবে বাঁ হাতের একেবারে শেষের দিকে। যত পদ ফুরিয়ে আসবে চামচ-কাঁটাচামচ ততই প্লেটের কাছে চলে আসবে। অর্থাত দূর থেকে কাছে, বাঁ থেকে ডানে। এর সঙ্গে আশপাশ সাজাতে টেবিলের পাশের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিন পারিবারিক বড় কোনো ছবি। টেবিলের মাঝে থাক স্বচ্ছ কাচের ফুলদানিতে সাদা আর সবুজ কোনো ফুল। তবে অবশ্যই কোনো দেয়ালে দয়া করে কোনো ফল বা খাবারের ছবি টাঙাবেন না।
এবারের ঈদে যদি ডাইনিং টেবিলে বুফে সাজাতে চান, তবে টেবিলের পাশের দেয়াল প্রথমে একেবারে খালি করে ফেলুন। তারপর তাতে ঝোলান আয়না। ফ্রেম করা পারিবারিক ছবি। আসবাবও নতুন করে সাজান। দেয়াল ঘেঁষা আসবাবের পাশ থেকে কম করে হলেও তিন ফুট দূরে রাখুন বুফে টেবিল। ন্যাপকিনগুলো রিঙে পুরে স্তরে স্তরে সাজান। ধোয়া পরিচ্ছন্ন প্লেট থেকে শুরু করুন লাইন। শেষ করুন ডেজার্ট ও সালাদ দিয়ে।
বিশেষ দিনে বিশেষ সাজে সাজালেও খাবার টেবিল কিন্তু প্রতিদিনই সাজানো জরুরি। সবুজ গাছ, সাদা ফুল, রকমারি ফল কিংবা ছোট্ট মোমবাতি দিয়ে প্রতিদিনই আপনি আপনার খাবার সময়টাকে স্মৃতিময় করে তুলতে পারেন। বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগাতে পারেন। ছুটির দিনগুলোতে সৃজনশীল কোনো উপায়ে খাবার সাজাতে পারেন। প্রতিদিনকার এই চর্চা ঈদের মতো দিনে আপনার গৃহসাজকে সম্পূর্ণ করে তুলবে।
ছবি : সংগ্রহ
Comments