সন্তানের জন্য রক্ত পেলেন না সেই ‘এম্বুলেন্স দাদা’ করিমুল

নিজের সংসারের দিকে তাকাননি কোনো দিন, রাত-দুপুরে প্রতিবেশী;গ্রামের মানুষের রক্ত সংকট হলে ছুটে গিয়েছেন নিজের তৈরি ‘মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্স’ নিয়ে। করিমুল হক জীবন বাঁচাতে রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রাম ঘুরে।
এম্বুলেন্স দাদা করিমুল হক
জলপাইগুড়ির মানুষ ভালোবেসে এম্বুলেন্স দাদা ডাকেন করিমুল হককে। ছবি: সংগৃহীত

নিজের সংসারের দিকে তাকাননি কোনো দিন, রাত-দুপুরে প্রতিবেশী;গ্রামের মানুষের রক্ত সংকট হলে ছুটে গিয়েছেন ‘মোটরসাইকেল অ্যাম্বুলেন্স’ নিয়ে। করিমুল হক জীবন বাঁচাতে রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রাম ঘুরে।

নিজের মোটরসাইকেলকে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে নিজের গ্রাম ধলাবাড়ি ও এর আশপাশের ২০টি গ্রামের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। তাই ভালোবেসে এলাকার সবাই তাকে 'এম্বুলেন্স দাদা' ডাকে।

শুধু তাই নয়, প্রত্যেক মাসে দুটি কিংবা তারও বেশি রক্তদান শিবিরের উদ্যোগ নিয়ে হাজার হাজার মানুষের রক্তের জোগান মেটান পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার সমাজকর্মী করিমুল। তার কাজের স্বীকৃতি দিয়ে চলতি বছর দেশের শ্রেষ্ঠ সরকারি সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ প্রদান করে ভারত সরকার। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে তার জনহিতকর কাজের খবর।

কিন্তু করিমুল হক নিজের সন্তানের জন্যই প্রত্যাশিত রক্ত পেলেন না, সেটাও তার নিজের জেলার জলপাইগুড়ি ব্লাড ব্যাংক থেকে। সেখানে তার একমাত্র কন্যা সন্তান শিমু বেগম রক্ত সংকটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে করিমুল তার কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শনিবার। তিনি বলেন, “নিজের পরিবারের দিকে কোনও দিন তাকানোর সময়ই পাইনি। অন্যের বিপদ নিজের বিপদ ভেবে দৌড়ে যাই আজও। অথচ, ভাগ্যের কি পরিণতি, আমার সন্তান মৃত্যুর মুখে, আর আমিই রক্ত পাচ্ছি না।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রক্ত-স্বল্পতায় অসুস্থ হয়ে গত কয়েক দিন ধরেই জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে করিমুল হকের একমাত্র কন্যা সন্তান শিমু বেগম। শুক্রবার তাকে ‘ও’ পজেটিভ রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু রক্ত দেওয়ার চার-পাঁচ ঘণ্টা পর ফের রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেই সময় ব্লাড ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ব্যাংকে আর রক্ত নেই।

করিমুল হক অভিযোগ করেন, ব্যাংকের কর্মীদের কাছে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তাকে নিয়ে তারা হাসি-ঠাট্টা করেন। ব্লাড ব্যাংকের বোর্ডে ‘ও’ পজেটিভ রক্ত থাকার তথ্য থাকার পরও রক্ত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ এই সমাজকর্মীর।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন ওই সময়ে ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী চন্দ্র দত্ত। তিনি বলেন, “আমি তাকে চিনতে পারেনি। পরে নাম শুনে পদ্মশ্রী করিমুল হককে চিনেছি। তাকে সবিনয় বলা হয়, যে গ্রুপের রক্ত তার প্রয়োজন সেই গ্রুপের রক্ত ব্যাংকে নেই। তাই একজন দাতাকে নিয়ে এসে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।”

ব্লাড ব্যাংকে রক্ত আছে বলে যে লেখাটা ছিল সেটা না মুছে দেওয়ার এই বিপত্তি হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করে নেন।

করিমুল হকের এই অভিযোগ গুরুত্বের তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা জগন্নাথ সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। শিমু বেগমের চিকিৎসা নিশ্চিত করার পর পুরো ঘটনার তদন্ত করে দেখা হবে।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, করিমুল হকের মতো সমাজকর্মীর সঙ্গে রক্ত নিয়ে যা করা হয়েছে, লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা গিয়েছে। তার সামনে আমরা মুখ দেখাবো কি করে?

জলপাইগুড়ি জেলা শাসক রচনা ভক্ত বলেন, শুধু করিমরুল হক কেন জেলার কোনো মানুষ যেন এক ফোটা রক্তের অভাব বোধ না করেন সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। পুরো ঘটনার তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনিও সাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago