খুলনাকে বিশাল রানের নিচে চাপা দিল ঢাকা

খুলনার উইকেট ফেলে ঢাকার উল্লাস
খুলনার উইকেট ফেলে ঢাকার উল্লাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০৩ রানের টার্গেট। জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। ওসব অনেক দূরের পথ। খুলনা টাইটান্স প্রায় পুরো ম্যাচে পরাজয়ের ব্যবধান কমাতেই যেন ব্যস্ত ছিল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পরে করেছে ১৩৭ , হেরেছে ৬৫  রানে । দ্বিতীয় ম্যাচেই তাই দাপুটে খেলে জয়ে ফিরল ঢাকা ডায়নামাইটস।

রান তাড়ায় শুরুতেই ঝড় তুলেছিলেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। তড়ঘড়ি নাজমুল হোসেন শান্ত  ও কার্লোস ব্রেথওয়েইটকে হারালেও ওয়ালটনের তান্ডবে ম্যাচে ছিল খুলনা টাইটান্স। কিন্তু ১৩ বলে ৩০ রান করে ওয়ালটন থামলে থেমে যায় খুলনাও। এরপর একের পর এক উইকেটের পতন। ঢাকার বিপুল রানের নিচে চাপা পড়ে ইনিংসের অর্ধেকের আগেই ম্যাচের বাইরে মাহমুদউল্লাহর দল।

উইকেট পতনের শুরু শান্তকে দিয়ে। আবু হায়দার রনির বল মাঝব্যাটে লাগাতে পারেননি শান্ত। লং অনে পোলার্ডের সহজ ক্যাচ। বোলিংয়ে এসেই বিপদজনক কার্লোস ব্র্যাথওয়েইটকে এলবিডব্লিও করেন অধিনায়ক সাকিব। ২০৩ রান তাড়ায় ৮ রানেই নেই ২ উইকেট। এরপরই ওয়ালটের ছোটখাট তান্ডব। তা থামিয়েছেন সাকিবই। সাকিবের স্লাইডারে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে সাঙ্গাকারার হাতে জমা দেন ক্যাচ। খানিকপর মাহমুদউল্লাহকে নিজের বলে দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচে ফিরিয়ে দেন আবু হায়দার রনি। এসবের মাঝেও দুই চার আর ছক্কা মেরে খুলনার শেষ আশা ছিলেন রাইলি রুশো। তাকে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ শহীদ। নিজের হোম গ্রাউন্ডে বিপিএলের অভিষেকটা দারুণ রাঙানো হয়েছে ঢাকার হয়ে খেলা সৈয়দ খালেদ আহমেদের। নিজের প্রথম বলেই আরিফুলকে বোল্ড করে দেন এই পেসার। পরের ওভারে ফিরে আকিলা ধনঞ্জয়াকে আউট করেন তিনি।

৮৮ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর খুলনার পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন জোফরা আর্চার। ২৪ বলে ৩৬ রান করে একাদশে জায়গা পাকাপোক্ত করে রাখলেন তিনি। তাকে ছেঁটেছেন সুনিল নারিন। দুই স্লিপ নিয়ে বল করতে এসেই উইকেটের পেছনে আর্চারকে ক্যাচ বানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে রানে ফিরে মোশারফ রুবেলকে আউট করেছেন আবু হায়দার রনি। শফিউল ইসলামকে বোল্ড করে লেজটা মুড়েন নারিন।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং পেয়েছিল ঢাকা, তারকাবহুল ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও আগের ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতা। মাত্র ১৩৫ রান করে সিলেটের কাছে ৯ উইকেটে হার। ঢাকা ডায়নামাইটসের নামডাকওয়ালা ব্যাটসম্যানরা পড়েছিলেন প্রশ্নের মুখে। তবে  কানকথা বড় হতে দেননি, জ্বলে উঠেছেন দ্বিতীয় ম্যাচেই।  এভিন লুইসের সঙ্গে ঝড়ো সূচনার পর কুমার সাঙ্গাকারা ফিরেছেন ২০ রান করে। এরপরের গল্প লুইস আর ক্যামেরন ডেলপোর্টের। খুলনা টাইটান্সের বোলারদের ইচ্ছেমতো পিটিয়েছেন দুজন। ১১ ওভারেই স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ১২০ রান। দ্রুত ফিফটি পেয়েছেন দুজনই। শুরুতে লুইসের তান্ডব বেশি থাকলেও খানিকপর থিতু হয়ে তাকে ছাড়িয়ে যান ডেলপোর্ট। মাত্র ২১ বলে তুলে নেন ফিফটি।

ডেলপোর্টের আগ্রাসন দেখে খানিক থামলেও পরে ফের রুদ্রমূর্তি লুইসের। শফিউলের বল পাঠিয়েছেন মাঠের সবচেয়ে লম্বা দিকের গ্যালারিতে, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছক্কা।  পরে ৩৯ বলে ৬৬ রান করে সেই শফিউলের বলে টাইমিংয়ে গড়বড়। কাভারে ছুটে গিয়ে তার ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।  

এরপরই ঢাকার ঝড় থামাতে নতুন কৌশল নেয় খুলনা। অফ স্টাম্পের বাইরে ওয়াইড লাইনে বল করে রানার চাকা থামিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তারা। কার্লোস ব্রেথওয়েট তাতে সবচেয়ে সফল। তার এক ওভারে রানার চাকা আটকে থাকার পরের ওভারেই আবু  জায়েদ রাহির বলে এলবিডব্লিও হয়ে ফিরে যান ডেলপোর্ট। যদিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে রাহির বলটা পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। এই দুজনের আউটের পরই যেন প্রান ফিরে পায় খুলনার বোলাররা। ব্রাথওয়েট পরের ওভারেই আরও তেতে উঠেন। সাকিবকে চেপে ধরে রাখছিল, হতাশা থেকেই ভুল করে বসেন ঢাকার অধিনায়ক। পয়েন্টে লাফিয়ে চৌকস ক্যাচ নিয়েছেন শফিউল ইসলাম।

রকেট গতিতে ছুটতে থাকা ঢাকার চাকা হুট করে মন্থর। সুনীল নারিন নেমে আবার খানিকটা গতি আনেন , নারিনকে ফিরিয়ে গতিতে আবার বাধ সাধেন রাহি। তাতেও ২০২ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ফেলে তারা। যার জবাব দেওয়ার মতো তাগদ ছিল না খুলনার ব্যাটসম্যানদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০২/৭  (সাঙ্কাকারা ২০, লুইস ৬৬, ডেলপোর্ট ৬৪, সাকিব ১,নারিন ১৬, মোসাদ্দেক ১০*,জহুরুল ৩,আবু হায়দার ২*   রাহি ২/২৯, আর্চার ১/,ব্র্যাথওয়েট ১/৩৪)

খুলনা টাইটান্স:       (ওয়ালটন ৩০, শান্ত ৫, ব্র্যাথওয়েট ০, রুশো ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৪, আরিফুল ৫, ধনঞ্জয়া ৭, আর্চার ৩৬, মোশাররফ রুবেল ১৭,  শফিউল ২, রাহি ১*; রনি ৩/১৩, সাকিব ২/২৫) 

 

Comments

The Daily Star  | English

Tk 2 for a day's labour: Prisons chief pushes to reform inmate pay

"This is why prison-made products are so cheap. But this also makes inmates lose interest in work"

22m ago