মুমিনুল, জাকিরের ব্যাটে সহজেই জিতল রাজশাহী

১৪৭ রানের টার্গেটে পৌঁছাতে তাই রাজশাহী কিংসের খোয়াতে হলো মাত্র ৩ উইকেট। খেলার জন্য তখনো হাতে বাকি ছিল ১৫ বল।
ছবিঃ ফিরোজ আহমেদ

বোলাররা কাজটা সেরে রেখেছিলেন আগেই। ওপেনিং জুটিতে মুমিনুল হক-রনি তালুকদারের শুরুটাও হলো দারুণ। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাকি কাজ সেরেছেন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা জাকির হাসান। সিলেট সিক্সার্সের বোলাররাও থাকলেন সাদামাটা। ১৪৭ রানের টার্গেটে পৌঁছাতে তাই রাজশাহী কিংসের খোয়াতে হলো মাত্র  ৩ উইকেট। খেলার জন্য তখনো হাতে বাকি ছিল ১৫ বল।

১৪৭ রান তাড়ায় দুই ওপেনার মুমিনুল হক আর রনি তালুকদার প্রথম পাওয়ার প্লেতেই নিয়ে ফেলেন ৪৬ রান। যার ৩১ রানই মুমিনুলের। তাও মাত্র ২২ বলে। টুর্নামেন্টে দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম ফিফটি পাওয়া এই বাঁহাতি ওপেনিংয়ে যেন পেয়েছেন নিজের আসল জায়গা। সার্কেলের ভেতরে থাকা ফিল্ডারদের ফাঁকি মেরে বল পাঠাচ্ছেন বাউন্ডারিতে। তার খেলা লফটেড শট লাগছে মাঝব্যাটে। ওদিকে থিতু হয়ে রনিও খেলছিলেন বড় শট। জম্পেশ ওপেনিং জুটি শেষে থেমেছে রনির আউটে। নবম ওভারে নাসিরের বলে স্টাম্পিং হয়ে ২৪ রান করে ফিরেছেন তিনি। ততক্ষণে ম্যাচের লাগাম রাজশাহীর হাতে।

ওয়ানডাউনে নেমে দ্রুতই ফিরেছেন সামিথ প্যাটেল। তাতে কিছু আসে যায়নি ড্যারেন স্যামিদের। প্রথমবার সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির হাসান। সিলেটের এই ক্রিকেটার মওকা পেয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন সিলেটেরই বিপক্ষে। ১৬ রানেই অবশ্য থামতে পারত তার ইনিংস। নাবিল সামাদের বলে দিয়েছিলেন সহজ ক্যাচ, ফিল্ডারের হাতও ফসকায়নি। কিন্তু ওদিকে নাবিলের পা লাইন ফসকে এগিয়েছিল অনেকখানি। নো বলে জীবন পেয়ে মিড উইকেটের উপর দিয়ে পরপর মেরেছেন দুই ছয়। আর তাকে আউট করা যায়নি। খেলেছেন চোখ জুড়ানো কয়েকটি শট।  তুলে নিয়েছেন প্রথম ফিফটি। যাতে ছিল তিন ছক্কার আর চারটি বাউন্ডারি। এবারের মুমিনুলের পর দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র দ্বিতীয় ফিফটি জাকিরের।। 

আরেকটি ফিফটি পেতে পারতেন মুমিনুলও। কিন্তু ৪২ রান করে রাজুর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। জাকিরের সঙ্গে বাকি কাজটা সেরেছেন মুশফিক।

টুর্নামেন্টে তলানিতে পড়া থাকা রাজশাহী পঞ্চম ম্যাচে এসে পেল দ্বিতীয় জয়। টেবিলে সাত থেকে লাফ দিয়ে পাঁচে উঠে গেছে আগেরবারের রানার্সআপরা। হারলেও আপাতত দুইয়েই থাকছে সিলেট।

টস হেরে আগে ব্যাট করা সিলেট ১৪৬ রানেও পৌঁছাতে পারত না। একের পর এক উইকেট পতন। রানের চাকার মন্থর গতি। সব মিলিয়ে বেশ ফ্যাসাদে ছিল নাসিরের দল। শেষ দিকে ঝড় তুলে সিক্সার্সদের অক্সিজেন যোগান সাব্বির রহমান ও টিম ব্রেসনান।

টুর্নামেন্টে সিলেটের সফল ওপেনিং জুটি এক ম্যাচ পরেই ফিরেছিল খেলায়। তবে জমেনি এবার। চোট থেকে ফিরে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হন আন্দ্রে ফ্লেচার। মোহাম্মদ সামির বলটা টপ এজ হয়ে গেল মিড অন ফিল্ডারের হাতে। দুই ওভার পরই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার উপুল থারাঙ্গাকে ক্ল্যাসিক্যাল অফ স্পিনে বোল্ড করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চার ওভার বল করে মাত্র ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন রাজশাহীর অফ স্পিনার।

চারে প্রমোশন পেয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। হেলায় নষ্ট করেছেন তা। ধীরস্থির শুরুর পর উইলিয়ামসের ফাঁদে কাবু হয়েছেন।  ফাইন লেগে ফিল্ডার রেখে শর্ট বল করে যাচ্ছিলেন কেসরিক উইলিয়ামস। সোহান সে ফিল্ডার দেখলেন কিনা কে জানে। ১০ রান করে সোজা ক্যাচ দিলেন ওখানেই।

আক্রমণে এসেই অধিনায়ক নাসির হোসেনকে তুলে নেন সামিথ প্যাটেল। ১০ বলে ৯ রান করা নাসির বোল্ড হয়েছেন লাইন মিস করে।  ৩৩ রান করার পর গুনাথিলেকার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। তাকে কাচুমুচু হয়ে অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি। আর ৭ রান যোগ করে তার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন লঙ্কান বাঁহাতি। এবার আর মিস করেননি  মুমিনুল। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন গুনাথিলেকা ফিরে যাচ্ছেন সিলেটের রান তখন ৫ উইকেটে ৭২।

সেটা  ১৪৬ পর্যন্ত যেতে পেরেছে সাব্বির রহমান আর টিম ব্রেসনানের কারণে। সিলেটের আইকন প্লেয়ার শুরুর কয় ম্যাচে ছিলেন ম্রিয়মান। সপ্তম ম্যাচে এসে পেলেন রান। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ২৬ বলে ৪১ রান করেছেন তিনি। মেরেছেন ৪টি ছক্কা। ৬, ৬, ৪, ৬, ৬। আউট হওয়ার আগের পাঁচ বল থেকে ২৮ রান নেন সাব্বির। ওদিক  শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ব্রেসনান । করেছেন ১৭ বলে ২৯ রান। শেষ ৫ ওভারে বোর্ডে আরও ৬৯ রান তুলে নেয় সিক্সার্স। ওই রান যে রাজশাহীকে ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়, খানিক পরেই বোঝা গেছে তা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সিক্সার্স:১৪৬/৬ (থারাঙ্গা ১০, ফ্লেচার ০, গুনাথিলেকা, সোহান ১০,  নাসির ৯, সাব্বির ৪১, ব্রেসনান ২৯, প্লাঙ্কেট ৬      ; মিরাজ ১/১২, উইলিয়ামস ২/৩২, সামি ১/৩৬)



রাজশাহী কিংস: ১৫০/৩ (রনি ২৪, মুমিনুল ৪২, সামিথ ১, জাকির ৫১*, মুশফিক ২৫,  ;নাসির ১/২০, রাজু ১/১৭)

টস:রাজশাহী কিংস।

ফল: রাজশাহী কিংস ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাকির হাসান। 

Comments

The Daily Star  | English
power outage in rural areas

Power outages on the rise again

Power cuts are getting more frequent as power generation has failed to keep up with the high demand caused by the rising mercury.

10h ago