সোনারগাঁও ক্রসিং: যেখানে পুলিশের নাকের ডগায় চলে অনিয়ম

কারওয়ান বাজার মোড়ে গেলেই চোখে পড়ে বড় একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘বাস দাঁড়ানো নিষেধ, দাঁড়ালেই দণ্ড’। তবুও প্রায় সব বাসই নির্বিঘ্নে এখানে এসে থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করায়। অথচ একটু সামনেই রয়েছে বাস স্টপেজ এবং মোড়েই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স।

কারওয়ান বাজার মোড়ে গেলেই চোখে পড়ে বড় একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘বাস দাঁড়ানো নিষেধ, দাঁড়ালেই দণ্ড’। তবুও প্রায় সব বাসই নির্বিঘ্নে এখানে এসে থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করায়। অথচ একটু সামনেই রয়েছে বাস স্টপেজ এবং মোড়েই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স।

কারওয়ান বাজার মোড়ে বাসে যাত্রীদের ওঠানামা এবং বাসের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে বিকেল ৪টা থেকে ৪:২০ মিনিট স্টার লাইভ টিম মোড়ের পাশের দুটি উঁচু ভবন থেকে ভিডিও ধারণ করে। আমরা দেখেছি মাত্র ২০ মিনিটে প্রায় ১০৮টি গাড়ি নিয়ম ভেঙে যাত্রী ওঠানামা করিয়েছে এখানে। যেন নিয়ম না মানাই এখানকার একমাত্র নিয়ম।

কারওয়ান বাজার মোড় থেকে মাত্র ৩০ গজ উত্তর দিকে রয়েছে বাস থামার নির্ধারিত স্থান এবং যাত্রী দাঁড়ানোর জায়গা। অথচ নিয়ম ভাঙতে রীতিমতো যেন প্রতিযোগিতা চলে বাসগুলোর মধ্যে। মোড়ের ওপর গতি কমিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় প্রতিনিয়তই যানজট লেগে থাকে। সেই সাথে জীবনের ঝুঁকিতেও পড়ছেন যাত্রীরা। আর অন্যদিকে নির্বিকার ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু কেন?

এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে চায়নি আমাদের সাথে এবং পর পর তিন দিন গিয়েও কোনো ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দেখা মেলেনি। পরে ডিএমপির সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট কমিশনার (তেজগাঁও ট্রাফিক) আবিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এখানে আসল সমস্যাটা হচ্ছে, বাম দিকে বসুন্ধরা সিটি আর ডানে অনেক অফিস। প্রতিদিন বিকাল হলেই এখানে হাজার হাজার মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করে। আসলে যেখানে আমরা বাস স্টপেজটা করেছি সেখানে দাঁড়ানোর মত কোনো জায়গা নেই। স্টপেজ করলে কিছুটা ফুটপাত লাগে, মানুষকে দাঁড়ানোর জায়গা দিতে হবে। কিন্তু ওখানে কোনো জায়গা নেই। মানুষ দাঁড়ালে অটোমেটিকেলি রাস্তায় চলে আসে।”

“যেহেতু মোড়ে একটা বড় জায়গা আছে তাই মানুষ এখানেই দাঁড়ায়। আর যাত্রী দেখে গাড়িগুলোও এখানে স্লো করে ফেলে,” যোগ করেন তিনি।

মোড়ের পাশে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে একজন মাহমুদ। তিনি জানান, “বাস স্টপেজে বাস থামে না, থামে মূলত এই মোড়েই। তারা নামায় এখানে তোলেও এখান থেকেই তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এখানেই দাঁড়াতে হয়। ওখানে যে স্টপেজ আছে তা তো আমরাও জানি, কিন্তু আমরা পরিস্থিতির স্বীকার।”

আরেক অপেক্ষমাণ যাত্রী লুতফুন্নেসা বলেন, “আসলে আমরা বাধ্য হয়ে উঠি। বাস স্টপেজের নির্ধারিত স্থানে অত যায়গা নেই, তাই আমার মনে হয় এখানেই ভালো।” চঞ্চল নামের একজন বলেন, “আমাদের তো আসলে আইন মানা উচিত তবুও মানছি না কারণ বাস কম আর আমাকে তো যেতেই হবে।”

সাথি নামের অন্য এক যাত্রীর অভিযোগ, সিগন্যালের পর নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালেই বরং বাস নিতে চায় না।

কিন্তু বাস চালকদের অভিযোগ যাত্রীদের দিকে। তারা বলছেন, যাত্রীদের চাপের কারণেই তারা নির্ধারিত জায়গায় না থেমে মোড়ের ওপর থামতে বাধ্য হন। চালক নুরে আলম বলেন, “মোড়ে না নামালে যাত্রীরা গালাগালি করে, তবুও আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সামনে নামানোর।” তবে আরেক বাস চালক আব্দুর রহিম মোড়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, “আমি দাঁড়াইনি, আমি ডাইরেক্ট টান দিয়ে চলে আসছি।”

কারওয়ান বাজার মোড়ে এক ঘণ্টায় আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমরা যে অনিয়ম দেখেছি তাতে যাত্রীরা দোষ দিচ্ছেন বাস চালকদের আর চালকরা দুষছেন যাত্রীদের। অথচ এটি নগরের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় যেখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই থাকে ট্রাফিক পুলিশ। কর্তৃপক্ষের এই নির্লিপ্ততাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago