রাজশাহীকে উড়িয়ে সবার উপরে খুলনা

ধুঁকতে ধুঁকতে কিংসরা থামল ১৪৫ রানে। বিশাল জয়ে তাই শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে মাহমুদউল্লাহর দল।
Khulna VS Rajshahi
২৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে রাজশাহীকে ধসিয়ে দিয়েছেন শফিউল। ছবি: প্রবীর দাস

শান্ত, আফিফ, পুরান, ব্র্যাথওয়েটদের ঝড়ে ২১৩ রানের পাহাড় গড়েছিল খুলনা টাইটান্স। ওটা টপকাতে তালগোল পাকালো রাজশাহী, দারুণ বল করে শফিউল নিলেন ৫ উইকেট। ধুঁকতে ধুঁকতে কিংসরা থামল ১৪৫ রানে। বিশাল জয়ে তাই শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে মাহমুদউল্লাহর দল।

সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রাজশাহী কিংসকে ৬৮   রানে হারিয়েছে খুলনা টাইটান্স। নয় ম্যাচে ছয় জয় নিয়ে ফের টেবিলের এক  নম্বরে উঠে গেছে খুলনা। সমান ম্যাচে ছয়টাই হেরে কেবল চিটগাং ভাইকিংসের উপরে থাকল আগেরবারের রানার্সআপরা।

২১৪ রানের বিশাল লক্ষ্য। জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। লুক রাইটকে নিয়ে ওপেনে নেমে মুমিনুল হক দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন। টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। শফিউলের করা তিন নম্বর ওভারেই ফেরেন দুজনেই। ভেতরে ঢুকতে থাকা বল উড়াতে গিয়ে লাইন মিস করে মুমিনুল হন বোল্ড। পঞ্চম বলে লুক রাইট লং অনের উপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়েন আর্চারের হাতে।

তৃতীয় উইকেটে জাকির হাসান ও রনি তালুকদার ৩২ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়ে অক্সিজেন জোগান দিয়েছিলেন। এক ওভারেই এই দুজনকে ফিরিয়েছেন আবু  জায়েদ রাহি। প্রথম দুই ওভারে মার খেয়ে আক্রমণ থেকে সরে যাওয়া রাহি দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই পেয়েছিলেন তাল। ২৩ বলে ৩৬ রান করা রনি ফিরেছেন ফুলটস বলে টাইমিংয়ের গোলমালে। স্লোয়ার বলে ধোঁকা খেয়ে ক্যাচ দিয়েছেন জাকির।

এক ওভার পরই শফিউলের ফের জোড়া আঘাত। পর পর দুই বলে ড্যারেন স্যামি আর মুশফিকুর রহিম কুপোকাত। শফিউল অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বল স্যামির ব্যাটের উপরে লেগে মিড অনে চলে যায় মাহমুদউল্লাহর হাতে। ওই ক্যাচের সময় স্ট্রাইকিং প্রান্তে যাওয়া মুশফিক ফিরেছেন বাজে শটে। অফ স্টাম্পের বল টেনে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। ইনিংসের প্রায় ১০ ওভার বাকি থাকতেই ফল অনেকটাই নির্ধারিত।

বাকি সময় কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর গল্প। তাতে সবচেয়ে বেশি অবদান মিরাজের। ২৯ রান করে এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার ম্যাচের আয়ুই বাড়িয়েছেন।

 টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া টাইটান্সের শুরুটা করে দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টপ অর্ডারে নেমে গতি ধরে রেখে ফিফটি তুলেছেন আফিফ হোসেন। মিডল অর্ডারে নেমে ঝড় তুলে ফিফটি করেন নিকোলাস পুরান। শেষ দিকে তরতর করে রান বাড়ানোর ভারটা কাঁধে নিয়েছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। তাতেই হয়েছে। খুলনা টাইটান্স দাঁড় করার এবারের আসরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

বিপিএলের শুরু থেকেই রান খরায় ভুগছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই বাঁহাতি এবার শুরু করলেন দারুণ। প্রোটিয়া আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর সঙ্গে নেমে তিনিই থাকলেন বেশি আগ্রাসী। অবশ্য ওপেনিং জুটি খুব একটা জমল না। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই ফিরতে হয়েছে রুশোকে। মোস্তাফিজের বল পয়েন্টে ঠেলে দিয়েই সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন। ওখানে জাকির হাসান ছিলেন ক্ষিপ্র। তার মাপা থ্রো নিরাপদে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছাতে দেয়নি রুশোকে।

এরপরই দুই তরুণের ২৭ বলে ৪৯ রানের জুটি। ওয়ানডাউনে নামা আফিফ হোসেন ছিলেন চনমনে। সিঙ্গেলস-ডাবলসের পাশাপাশি পিটিয়েছেন কেবল ছক্কা। তার একটি মোস্তাফিজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে উড়িয়ে। শান্ত দেখাচ্ছিলেন মুন্সিয়ানা, খুব একটা তেঁড়েফুঁড়ে মারেননি। কিন্তু ঠিকই গ্যাপ বের করে পেয়েছেন বাউন্ডারি, মেরেছেন ছক্কা, স্কোরবোর্ড রেখেছেন সচল। তবে কাছে গিয়েও করতে পারলেন না ফিফটি। জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনের বলে ধোঁকা খেয়ে তিনি থেমেছেন ৩১ বলে ৪৯ রান করে।

খানিকপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকেও ফিরিয়েছেন ফ্র্যাঙ্কলিন। অ্যারাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে এসে দিয়েছিলেন অফ স্টাম্প বরাবর স্লোয়ার। মাহমুদউল্লাহ ড্রাইভ করতে গিয়ে টেনে নিয়েছেন স্টাম্পে।

পাঁচে নেমে আফিফের সঙ্গে জোট বাঁধেন নিকোলাস পুরান। আফিফকে ছাপিয়ে জুটিতে তিনিই আগ্রাসী। ২৬ বলে ছয় চার আর তিন ছক্কায় ৫৭ করে ফ্র্যাঙ্কলিনের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে আফিফের সঙ্গে ৮৮ রানের জুটিতে অধিকাংশ রানই তার। আফিফ টিকে ছিলেন এক প্রান্তে। ৩৬ বলে তুলে নেন প্রথম ফিফটি। যাতে কোন চার নাই, আছে ৫টা ছক্কা। আর আউটই হননি যুবদলের সহ-অধিনায়ক।

ওদিকে পুরানের আউটে ক্রিজে নামা ব্র্যাথওয়েট পেয়েছিলেন তাল। তার ব্যাট বল লাগলে যা হতে পারে তাই হলো। বিশাল তিন ছক্কা আর তিন চারে করেছেন ১৪ বলে ৩৪। মিসটাইমিংগুলোও পেরিয়েছে বাউন্ডারি লাইন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইটান্স:২১৩/৫ (শান্ত ৪৯, রুশো ৬,  আফিফ ৫৪*, মাহমুদউল্লাহ ১, পুরান ৫৭, ব্র্যাথওয়েট ৩৪,  আরিফুল ১* ;  সামি ১/২২, মিরাজ ০/৪২, মোস্তাফিজ ০/৪৮, উইলিয়ামস ০/৪৬,  ফ্র্যাঙ্কলিন ০/৫০)   ;

রাজশাহী কিংস: (মুমিনুল ১১, রাইট ১, রনি ৩৬, জাকির ১৯,  স্যামি ১, মুশফিক ১১, ফ্র্যাঙ্কলিন ১৪,  মিরাজ ২৯,  সামি, মোস্তাফিজ,     ; রাহি ২/৪৮, অ্যাবট ০/২২,  শফিউল ৫/২৬, আর্চার ১/১৫, ব্র্যাথওয়েট ০/১৭, মাহমুদউল্লাহ ১/৯, আফিফ ১/৭)

টস: রাজশাহী কিংস।

ফল: খুলনা টাইটান্স ৬৮ রানে জয়ী। 

Comments