শেষ ওভারের উত্তেজনায় রংপুরকে জেতালেন মাশরাফি

ইনিংস টেনেছেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, শেষ দিকে নাহিদুলকে নিয়ে কাজটা সেরেছেন মাশরাফি। আরও একবার শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে রংপুর রাইডার্স।

সিলেট সিক্সার্সের দেওয়া ১৭৪ রান তাড়ায় ঝড়ো শুরু এনে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ওয়ানডাউনে নেমে ইনিংস টেনেছেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, শেষ দিকে নাহিদুলকে নিয়ে কাজটা সেরেছেন মাশরাফি। আরও একবার শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে রংপুর রাইডার্স।

শেষ ওভারে রংপুরের জিততে দরকার ছিল ৯ রান। ব্রেসনান প্রথম বলটি দিলেন ওয়াইড। পরের বল ডট। পরেরটি লং অন দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা হাঁকালেন মাশরাফি। পরে  নিলেন সিঙ্গেল, পরেরটি সীমানা ছাড়া করে উল্লাসে মাতলেন নাহিদুল।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স।  ৯ ম্যাচে পঞ্চম জয়ে টেবিলের চারেই থাকল মাশরাফিরা। ওদিকে ১০ ম্যাচে মাত্র তিনটা জিতে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল সিলেট সিক্সার্স।

রান তাড়ায় রংপুরের ওপেনিংয়ে এদিন নতুন জুটি। ক্রিস গেইলের সঙ্গে নেমেছিলেন জিয়াউর রহমান। এই জুটিও জমেনি, গেইলই ফিরেছেন আগে। সোহেল তানভীরকে লফটেড কাভার ড্রাইভে চার মারার পর উড়াতে চেয়েছিলেন মিড অন দিয়ে। বল জমা পড়ে ওখানে দাঁড়ানো ব্রেসনানের হাতে।

জিয়া উপরে ব্যাট করার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন শতভাগ। শুরু ঝড়ে তারই সব অবদান। ১৮  বল খেলে করেছেন ৩৬ রান। পাঁচ চারের সঙ্গে মেরেছেন দুই ছক্কা। নাবিল সামাদের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পিং। রংপুরের বড় নাম ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিলেন না। এদিন তিনে নেমে খেলেছেন বুঝেশুনে।   

চার নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন বিশের ঘর পেরুতে পারেননি। ব্রেসনানের বলে ১৮ রান করে সোজা ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য ১০০ রানের  কাছে চলে গিয়েছে রংপুর। হাতে থাকা বাকি ১০ ওভার থেকে মেলাতে হতো ৮০ রানের সমীকরণ। ক্রিজে আছেন ম্যাককালাম। কিন্তু ম্যাককালাম থাকলেন জড়োসড়ো। অনেক চেষ্টা করেও বড় শট বের করতে পারছিলেন না, স্ট্রাইক রোটেটও হচ্ছিল না ঠিকঠাক, ওদিকে চড়া হচ্ছিল আস্কিং রানরেট। ইয়র্কার লেন্থে টানা বল করে যাচ্ছিলেন আবুল হাসান রাজু ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। ফলও মিলল। চাপ সরাতে রাজুকে উড়াতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাককালাম। ৪৩ রান করেছেন কিউই ব্যাটসম্যান, কিন্তু তাতে লেগে যায় ৩৮ বল। তখন ম্যাচে বেশ ভালোভাবেই ফিরে আসে সিলেট।

খানিকপর দারুণ এক থ্রোতে সামিউল্লাহ শেনওয়ারিকে রানআউট করে দেন নাসির। হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে শেষ পাঁচ ওভারে ১০ রান করে দরকার রংপুরের। রবি বোপারার সঙ্গে মিলে বাকি কাজ সারার ভার পড়ে মাশরাফির উপর। সোহেল তানভীরের  বলে ফিরতে পারতেন রবি বোপারা। এক ওভারে দুইবার তার ক্যাচ একইভাবে ফেলে দেন বদলি ফিল্ডার শুভাগত হোম। এমনিতে ভালো ফিল্ডারের সুনাম থাকলেও এদিন মিড উইকেট থেকে দৌঁড়ে এসে নিতে পারেননি সহজ দুই ক্যাচ।  ১৯ রানে জীবন পেয়ে ছক্কা মেরেছিলেন বোপারা। ২৬ রানে জীবন পেয়ে  আরও ৭ রান যোগ করে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি।  নাহিদুলকে নিয়ে বাকিটা সারতে সমস্যায় পড়তে হয়নি মাশরাফিকে। 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে শুরুটা ভালো হয়নি সিলেট সিক্সার্সের। প্রথমবার ওপেন করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। নাজমুল ইসলাম অপুর বলে এলবিডব্লিও হয়ে ফিরেন ৫ রান করে। ওয়ানডাউনে নেমে রান পাননি অধিনায়ক নাসিরও। অপুকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পিং। সেই অপু ফিরিয়েছেন আন্দ্রে ফ্লেচারকেও। শুরু থেকে তেতে থাকা এই ওপেনার উড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। টানা চার ওভারের স্পেলে এই বাঁহাতি স্পিনার ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সিলেটের ডানা ছেঁটে ফেলার কাজটা মূলত তিনিই করেছেন।

শুরুর বিপর্যয় ভালোই সামাল দেন বাবর আজম ও সাব্বির রহমান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে তুলেন ৭৪ রান। পাকিস্তানি বাবর ৩৪ বলে তুলে নেন বিপিএলে তার প্রথম ফিফটি। তবে এরপরই কাটা পড়েন তিনি। মাশরাফির বল  লং অফে ঠেলে দিয়েছিলেন সাব্বির রহমান, সিঙ্গেলস নিতে নন স্ট্রাইক প্রান্তে বেরিয়ে যান বাবর আজম। লং অফ থেকে এগিয়ে এসে নাজমুল ইসলাম অপুর মাপা থ্রো স্টাম্প ভেঙ্গে দিলে ফিরতে হয় বাবরকে। সাব্বির আউট হন দ্বিতীয় পঞ্চাশের কাছে গিয়ে। তার ৩৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি থেমেছে মাশরাফির ইয়র্কারে।

শেষের দিকে রস হোয়াইটলি ও টিম ব্রেসনান মিলে ১৭০ পার করান সিলেটকে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং বান্ধব পিচে ওই রান যে যথেষ্ট নয় পরে বুঝিয়ে দিয়েছেন রংপুরের ব্যাটসম্যানরা।



সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সিক্সার্স:১৭৩/৫ (ফ্লেচার ২৬, নুরুল ৫, নাসির ০, বাবর ৫৪, সাব্বির ৪৪, হোয়াইটলি ১৭, ব্রেসনান ১৬ ;  মাশরাফি ১/৩৯, অপু ৩/১৮, রুবেল ০/২৬, সামিউল্লাহ ০/২৮, মালিঙ্গা ০/৪৫, বোপারা ০/১৫)

রংপুর রাইডার্স:১৭৭/৬ (গেইল ৫, জিয়া ৩৬, ম্যাককালাম ৪৩, মিঠুন ১৮, বোপারা ৩৩, সামিউল্লাহ ০,  মাশরাফি, নাহিদুল ; তানভীর ১/৪৪ , নাবিল ১/৩১, ব্রেসনান ১/৪০, রাজু ১/২৫, রাব্বি /৩২  )

টস: রংপুর রাইডার্স।

ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago