ভাইকিংসকে বিদায় করে টিকে রইল রাজশাহী

কে আগে বাদ পড়বে সে লড়াইয়ে জিতল রাজশাহী। তাতে বল হাতে চার উইকেট নিয়ে আলো কাড়লেন তরুণ বাঁহাতি পেসার কাজি অনিক।
Kazi Onik
১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হিরো কাজি অনিক। ছবি: প্রবীর দাস

ঘরের মাঠে এসে ব্যাটিংটা বেশ ভালোই হচ্ছিলো চিটাগাং ভাইকিংসের, প্রায় সব ম্যাচেই জমা করতে পারছিল বড়োসড়ো স্কোর। এদিন জ্বলে উঠেছিলেন বোলাররা। এনে দিয়েছিলেন ১৫৮ রানের মাঝারি টার্গেট , অথচ এবার ব্যাটসম্যানরা নিতে পারলেন না সে চ্যালেঞ্জ। কে আগে বাদ পড়বে সে লড়াইয়ে জিতল রাজশাহী। তাতে বল হাতে অভিষেকে চার উইকেট নিয়ে আলো কাড়লেন তরুণ বাঁহাতি পেসার কাজি অনিক।

বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দেখায় রানে  ৩৩  জিতেছে রাজশাহী কিংস । গাণিতিক হিসাবে টুর্নামেন্টে টিকে রইল ড্যারেন স্যামির দল। এই ম্যাচ হেরে খাতায় কলমেও ছিটকে পড়েছে চিটাগাং ভাইকিংস।

১৫৮ রান তাড়ায় শেষ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ভাইকিংস করতে পেরেছে ১২৪ রান।  ছন্দে থাকা লুক রনকি ফিরেছেন শুরুতেই। দুই চার মেরে খাতা খুলেছিলেন রনকি। ফিরেছেন আরেক বাউন্ডারি মারার চেষ্টায়। মোহাম্মদ সামির বল উড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড উইকেটে।

ওয়ানডাউনে নেমেই হাত খুলেন এনামুল হক বিজয়। মোস্তাফিজের প্রথম ওভার থেকে নেন ১২ রান। আরেক ওপেনার সৌম্য তখনও জড়তা কাটাতে পারেননি। মিরাজকে ছক্কা পিটিয়ে পরে রাখতে পারেননি তাল। পরের স্পেলে ফিরেই সৌম্যকে ছেঁটেছেন মোস্তাফিজ। ওই ওভারে দেন মাত্র ১ রান। আগের ম্যাচের ফর্ম ধরে রেখে এদিনও ছন্দে ছিলেন এনামুল, কিন্তু টানতে পারেননি বেশিক্ষণ। এনামুলকে আউট করেছেন টুর্নামেন্টে প্রথমবার নামা পেসার কাজি অনিক।

এরমাঝে দ্বিতীয় ওভারে  চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। বাদ বাকি সময় কিপিং করেছেন জাকির হাসান।

মাপা বোলিং করে রাজশাহী ম্যাচে থেকেছে পুরোটা সময়েই। পাকিস্তানি লেগ স্পিনার উসামা মির মাঝের ওভারগুলোয় বল করতে এসে বেশ ভুগিয়েছে ভাইকিংস ব্যাটসম্যানদের। ওই সময় শ্লথ হয়ে পড়া রানের চাকা বাড়াতে গিয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। মিরের ফুলটস বল পেটাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপে। বাউন্ডারি লাইনে অনেকখানি দৌঁড়ে সে ক্যাচ হাতে জমান নাঈম ইসলাম জুনিয়র। মিরের শেষ ওভারেও পড়েছে আরেক উইকেট। লুইস রিস এসেই হন রান আউট, করতে পেরেছেন মাত্র ৩ রান।

অনিকে পরের ওভারে ফন সিলকে আউট করাতেও অবদান নাঈম জুনিয়র আর উসামা মিরের। অনিকের বলটাতে ভালোই টাইমিং করতে পেরেছিলেন স্টিয়েন ফন সিল। ফের ডিপে অনেকখানি দৌঁড়ে বাউন্ডারি লাইনে লাফিয়ে বল ভেতরে এনে দেন নাঈম, পাশেই দাঁড়ানো মির নিয়েছেন সহজ ক্যাচ।

যুবদলের বাঁহাতি পেসার অনিকের দিনটি মনে রাখবার মতো। নিজের পরের ওভারে পেয়েছেন আরও দুই উইকেট। প্রথম বলে সানজামুলের স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়ার পর চার নম্বর বলে আউট করেন তানবীর হায়দারকে। তিন ওভার ২ বল করে ১৭ রানে পেয়ে যান চার উইকেট।

টুর্নামেন্টে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে দুদলই। গানিতিক হিসাব নিকেসে সুযোগ আছে পরের রাউন্ডে যাওয়ার। হারলে সেই হিসাবও নেই। এমন ম্যাচ টস জিতে আগে ব্যাটিং নিলেন ড্যারেন স্যামি। শুরুটা হলো বাজে। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরলেন মুমিনুল হক। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল থার্ড ম্যানে দিয়েছেন ক্যাচ।

ওয়ানডাউনে নেমে এদিনও চনমনে ছিলেন জাকির হাসান। দুই চার আর এক ছক্কায় ১১ বলে ১৭ রান করে রিসের বলে হয়েছেন বোল্ড। ২৫ রান করা লুক রাইট ক্যাচ দিয়েছেন সানজামুলের বলে। চারে নেমে ছন্দে ব্যাট করছিলেন মুশফিক। পাচ্ছিলেন বাউন্ডারি। কিন্তু নাঈম হাসানকে উড়াতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়ে ফেরত যান তিনি।

পঞ্চম উইকেটে জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনকে নিয়ে বাকিটা এগিয়ে নিয়েছেন অধিনায়ক স্যামি। জুটিতে এসেছে ৬৯ রান। দল পেরিয়েছে দেড়শ রানের কোটা। শেষ ওভারে গিয়ে দুজনকেই আউট করেছেন লুইস রিস। ২৫ বলে তিন ছক্কা আর দুই চারে স্যামি করেন ৪০ রান, অনেকটাই মন্থর ছিলেন ফ্র্যাঙ্কলিন। ক্রিজে হাঁসফাঁস করেছেন,  ৩০ রান করতে তার লেগেছে ৩০ বল। ম্যাচ শেষে অবশ্য এই মন্থর ব্যাটিং কোন আক্ষেপের কারণ হয়নি কিংসদের। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস:১৫৭/৬ (মুমিনুল ৭, রাইট ২৫, জাকির ১৭, মুশফিক ৩১, ফ্র্যাঙ্কলিন ৩০, স্যামি ৪০  , উসামা ১*, মিরাজ ০* ; সিকান্দার ০/৩, তাসকিন ১/৩৬ , এমরিট ০/২৭, রিস ৩৩/৩, সানজামুল ১/২৬, তানবীর ০/৯,  নাঈম ১/৯, সৌম্য ০/১৩)

চিটাগাং ভাইকিংস:১২৪/১০  (রনকি ৮, সৌম্য ১৩, বিজয় ২০, ফন সিল ২৭  , রাজা ১৭, রিস ৩, তানবীর ১৩, এমরিট ১, নাঈম ২*, তাসকিন ১, সানজামুল ০  , তাসকিন    ; সামি  ১/২৯, মোস্তাফিজ ২/১৮ , মিরাজ ০/৩৩, মির ১/১৫ , অনিক ৪/১৭ , ফ্র্যাঙ্কলিন ১/১০)

টস: রাজশাহী কিংস।

ফল: রাজশাহী কিংস ৩৩  রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ড্যারেন স্যামি।    

Comments