রিজার্ভ ডেতে চার্লস-ম্যাককালামের বাজিমাত, ফাইনালে রংপুর

জনসন চার্লসের সেঞ্চুরি আর ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের ঝড়ে তাদের করা ১৯২ রানের পাহাড় ডিঙ্গুতে পারেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মাশরাফি বিন মর্তুজা
তামিমদের বিদায় করে বিপিএলের ফাইনালে মাশরাফিরা। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ম্যাচ ফল নিয়ে দ্বিধা শেষ হয়েছে আগেই। তবে শেষ উইকেটই যেন হয়ে থাকল গোটা ম্যাচের চিত্র। রুবেলের বলে এলোপাথাড়ি ঘুরিয়েছিলেন আল-আমিন। মিড অফ থেকে দৌঁড়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা হাতে জমান রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা। এই ক্ষিপ্রতা নিয়েই যেন ফাইনালে পৌঁছালো তার দল।

বৃষ্টি, প্লেয়িং কন্ডিশন নিয়ে নাটকের পর মাঠের খেলায় তাগদ দেখিয়েছে রংপুর রাইডার্স। জনসন চার্লসের সেঞ্চুরি আর ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের ঝড়ে তাদের করা  ১৯২ রানের পাহাড় ডিঙ্গুতে পারেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০ ওভার খেলে তামিমরা থেমেছে ১৫৬ রানে।

প্লেয়িং কন্ডিশন বদলে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক আলোচনায় থাকা ম্যাচ শেষ হয়েছে দুদিনে।  মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত রোববার ৭ ওভার হওয়া ম্যাচের বাকিটুকু শেষ হলো সোমবার। তাতে ৩৬ রানে আনায়াস  জিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠল রংপুর রাইডার্স।

১৯৩ রানের লক্ষ্যে কুমিল্লার শুরুটা হয় জুতসই। সোহাগ গাজীর প্রথম ওভারে চার-ছক্কা দিয়ে শুরু করেন লিটন দাস। তবে ওদিকে তামিম ফিরতে পারতেন শুরুতেই। রুবেলের বলে পরাস্ত হয়েছিল কুমিল্লা অধিনায়ক। জোরালো এলবিডব্লিও আবেদন সাড়া দেননি আম্পায়ার । যদিও রিপ্লে দেখে বোলার রুবেলকে দুর্ভাগাই মনে হয়েছে। ওইসময় উলটো ওভার থ্রুতে চার রান পেয়ে যান কুমিল্লা। বেঁচে গিয়ে রুবেলকে চার-ছয়ে চাপ সরান তামিম। প্রথম তিন ওভারেই ৩৬।

তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে বার দুয়েক রান আউট হতে পারতেন লিটনও। বেঁচে যান রংপুর ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়। চতুর্থ ওভারে সহজ সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ইশুরু উদানার বলে মিড অফে তার লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন নাহিদুল ইসলাম। পরের ওভারেই অবশ্য এসেছে সাফল্য। প্রান্ত বদল করে বল করতে আসা মাশরাফির বলে সোজা আকাশে তুলে দেন তামিম, এবার মিড অফে নিরাপদে তা হাতে জমান সোহাগ গাজী। পরের ওভারে বল করতে এসেও মাশরাফিকে হাসি উপহার দিয়েছেন এই গাজী। তার সোজা বলে তেঁড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন ইমরুল কায়েস। তবুও প্রথম ছয় ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেটে ৫৭ রান ছিল কুমিল্লার বোর্ডে।

ওই তাল পরে ক্ষণে ক্ষণেই হারিয়েছে ভিক্টোরিয়ান্স। চারে নামা শোয়েব মালিক ছিলেন বড় ভরসা। একেবারেই হতাশ করেছেন এই পাকিস্তানি। ১৪ বলে খেলে মাত্র ১০ রান করে নাজমুল ইসলাম অপুর ক্যাচ দিয়েছেন লং অফে। ওপেনে নেমে টিকে থাকা লিটন দাস নেন রান বাড়ানোর দায়িত্ব। বেশিক্ষণ চলেনি তার ব্যাটও। ৩৯ রান করে উদানার বলে ঘুরাতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

৯৬ রানে চার উইকেট নেই। জিততে হলে শেষ ৮ ওভারে করতে হবে আরও ৯৭ রান। কঠিন সমীকরণে মারলন স্যামুয়েলসের সঙ্গে যোগ দেন পুরো  টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ জস বাটলার। দুই ব্যাটসম্যানেরই সামর্থ আছে তাণ্ডব চালানোর। উইকেটে থিতু হতে দুজনেই নেন সময়। নো বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া স্যামুয়েলস পারেননি ঝড় তুললে। বাটলারের ব্যাটে দেখা দিয়েছিল ঝাঁজ। তবে রান এতটাই বেশি যে দুদিক থেকেই রান না এলে তীরে ভেড়া কঠিন। হয়নি কিছুই। বাটলার ২৬ আর স্যামুয়েলস ২৭ রানে থামিয়েছেন তাদের দৌঁড়।

কুমিল্লার বাকি লেজটুকু মুড়তে কোন সমস্যাই হয়নি উদানা আর রুবেলের। ম্যাচজুড়ে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করা উদানা ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। ৩৪ রানে ৩ উইকেট রুবেলের।

রংপুর রাইডার্স
আগের দিন বৃষ্টি নামার আগে রংপুরের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৫৫ রান, খেলা হয়েছিল ৭ ওভার। বৃষ্টি, নাটক, একদিনের বিরতি কোন কিছুই জনসন চার্লসকে যেন ছুঁতে পারেনি। যেখানে শেষ করেছিলেন, শুরু করলেন সেখান থেকেই। বিপিএলে এসে উইকেটের আচরণে রীতিমতো বিভ্রান্ত ব্র্যান্ডন ম্যাককালামও এদিন পেয়ে গেলেন তাল। দ্বিতীয় উইকেটের জম্পেশ জুটিতে দুজনে মিলে তুললেন দেড়শ রানের জুটি।  সময়ে সময়ে আরও খুনে হয়েছেন ম্যাককালাম। এক, দুই বা চার বাদ দিয়ে কেবল মারতে শুরু করেন ছক্কা। পুরো ইনিংসে নয় ছক্কার পাশে তার চার মাত্র একটি।  দারুণ কিপটে বোলিং করা হাসান আলিও খেয়েছেন মার। তবে সবচেয়ে বেশি পিটিয়েছেন আল-আমিনকে।

আগের দিন টুর্নামেন্টে তৃতীয়বারের মত ক্রিস গেইলকে আউট করেছিলেন মেহেদী হাসান। এদিন বাকি থাকা এক ওভার বল করে পাননি সাফল্য, উলটো মার খেয়েছেন তিনিও। চড়তে থাকা রানের লাগাম তবু খানিকটা থমকেছে হাসান আলির শেষ ওভারে। এক ছক্কা খেলেও ডানহাতি এই পেসার পুরো ওভার ভুগিয়ে বোল্ড করে দেন ম্যাককালামকে। ৪৬ বলে ৯ ছক্কায় ৭৮ রান করেন সাবেক কিউই অধিনায়ক।

চার্লস আর থামেননি। শেষ ওভারে গিয়ে ৬২ বলে করে ফেলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শেষ বলটিতেও মেরেছেন আরেক চার। দলকে ১৯২ রানের বিশাল পূঁজিতে নিয়ে চার্লস অপরাজিত ছিলেন ১০৫ রানে। পুরো ইনিংসে নয় চারের পাশাপাশি মেরেছেন ৭ ছক্কা। রংপুরে ইনিংসে সবগুলো বাউন্ডারিই এসেছে এই ম্যাককালাম-চার্লসের ব্যাট থেকে। দুজনে মিলে মেরেছেন ১৬টি ছক্কা, চার আরও ছয়টি কম।

প্লেয়িং কন্ডিশনে না থাকলেও ‘বিপিএলের স্বার্থে’ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ রিজার্ভ ডেতে খেলতে রাজি হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বৃষ্টিতে কাটঅফ টাইম পার হওয়ায় নির্ধারিত নিয়মে ফাইনালে উঠা যাওয়ার কথা ছিল তাদেরই।কিন্তু সুপার ওভার আর রিজার্ভ ডে নিয়ে অনেক দেন-দরবারের পর রিজার্ভ ডেতে এসে বিদায় নিতে হলো তৃতীয় আসরের চ্যাম্পিয়নদের।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ১৯২/৩ (চার্লস ১০৫*, গেইল ৩, ম্যাককালাম ৭৮, বোপারা ০, মাশরাফি ০*  ; মেহেদী ১/৪৪, আলি ১/২৩, মালিক ০/৪, সাইফুদ্দিন ০/৩৮, আল-আমিন ০/৪২, ক্রেমার ০/৩৮)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স:১৫৬/১০ (তামিম ৩৬, লিটন ৩৯, ইমরুল ০, মালিক ১০ , স্যাম্যুয়েলস ২৭, বাটলার ২৬, হাসান আলি ৬,  সাইফুদ্দিন ০, ক্রেমার ১*, মেহেদী  ০, আল-আমিন ০    ; গাজী ১/১৫  , মাশরাফি ১/৪০, রুবেল ৩/৩৪, উদানা ২/২৪, বোপারা ২/১৭ , নাজমুল ১/২৫ )

টস: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

ফল: রংপুর রাইডার্স ৩৬ রানে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

Now