শিশুদের বই থেকে সু চি-কে বাদ দেওয়ার দাবি
মেয়ে শিশুদের অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল গুড নাইট স্টোরিজ অব রেবেল গার্লস। কিন্তু এই বইটি থেকে অং সাং সু চি’র নাম বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন অভিভাবক মহলের একটি অংশ।
নারী বৈমানিক এমেলিয়া ইয়ারহার্ট, পদার্থবিজ্ঞানী মেরি কুরি থেকে শুরু করে হালের রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিন্টনের সাথে সু চি’র কথাও ছিল এই বইয়ে। কিন্তু বইটির ক্রেতা অভিভাবকদের একাংশ এখন বলছেন রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের মধ্যেও চুপ থাকা সু চি কারও অনুপ্রেরণা হতে পারেন না। তাই বইটির পরবর্তী সংস্করণে তাকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
ছয় বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের জন্য গত বছর সংকলিত গুড নাইট স্টোরিজ অব রেবেল গার্লস বইটিতে মোট ১০০ জন নারীর বক্তব্য ও তাদের জীবন সম্পর্কে দুই পৃষ্ঠায় সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও ছবি রয়েছে। বইটিতে সু চি’র গৃহবন্দী জীবন প্রসঙ্গে বলা হয়: “শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সু চি তার দেশ জনগণ সাথে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আর এর সবই করেছেন ঘরে বন্দী থেকে।” বইটিতে সু চি’র একটি উদ্ধৃতি হিসেবে লেখা হয়: “যেহেতু আমরা এই পৃথিবীতেই বাস করি তাই পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য আমাদের সবটুকু ঢেলে দিতে হবে।”
বইটির লেখিকাদ্বয় মিয়ানমারে দীর্ঘ সামরিক শাসনের মধ্যেও গণতন্ত্রের জন্য অবিচল থাকা সু চি’কে শীর্ষ ১০০ নারীর তালিকার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু নিজ দেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিয়ে নিশ্চুপ থাকায় ও সেনাবাহিনীর সাফাই গেয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে সু চি’র একের পর এক খেতাব ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গত নভেম্বরে তার ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড’ কেড়ে নেয় নগর কর্তৃপক্ষ।
গুড নাইট স্টোরিজ অব রেবেল গার্লস এর ফেসবুক পেজে লেনকা উজাকভ নামের একজন লিখেছেন, “বইটির ৯৯ শতাংশই অনুপ্রেরণামূলক। কিন্তু গণহত্যার জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে এমন একজনকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এখানে অং সাং সু চির কোনো স্থান থাকতে পারে না। গণহত্যা, ধর্ষণ, শিশুদের পুড়িয়ে মারার সাথে সরাসরি তিনি জড়িত। এই বইয়ে তার নাম থাকায় আমি বাকরুদ্ধ।”
আরেকজন অভিভাবক গেরি পিভ লিখেছেন: “মেয়েদের জন্য প্রথাগত বইগুলোর বাড়বাড়ন্ত থেকে আমার তিন বছরের মেয়েকে রক্ষা করার জন্য আমি এই বইটি কিনেছিলাম। এখানে এমন সব নারীদের কথা রয়েছে যারা রূপকথার গল্পের মত কোনো রাজপুত্রের জন্য অপেক্ষা করে থাকেনি। কিন্তু এখানে সু চি’কে যেভাবে মহীয়সী হিসেবে দেখানো হয়েছে তা আমাকে আতঙ্কিত করেছে। আমি আশা করব প্রকাশকরা বইটি একটি নতুন সংস্করণ বের করবে যেখানে সু চি’র পতনের কথা লেখা থাকবে।”
অভিভাবকসহ রাজনৈতিক মহলের দাবির মুখে বইটির লেখিকারা এখন বলছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বইটির পরবর্তী মুদ্রণে সু চি’কে বাদ দেওয়ার ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
Comments