নিখোঁজের ১০ বছর পর সন্ধান

নতুন বছরে দেশে ফিরতে চান জামালপুরের মোর্শেদা খাতুন

নতুন বছরে নিজের বাড়িতে ফিরতে চান পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর মহকুমা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামালপুরের বাসিন্দা মোর্শেদা খাতুন। জামালপুর থেকে ১০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মোর্শেদার মানসিক চিকিৎসা চলছে সেখানে। চিকিৎসায় এখন অনেকটা সুস্থ দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা মোর্শেদা। তবে নাগরিকত্ব প্রমাণের কূটনৈতিক জটিলতায় দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।
জামালপুরের বাসিন্দা মোর্শেদা খাতুন
নাগরিকত্ব প্রমাণের কূটনৈতিক জটিলতায় দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জামালপুরের মোর্শেদা খাতুনের। ছবি: স্টার

নতুন বছরে নিজের বাড়িতে ফিরতে চান পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর মহকুমা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামালপুরের বাসিন্দা মোর্শেদা খাতুন। জামালপুর থেকে ১০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মোর্শেদার মানসিক চিকিৎসা চলছে সেখানে। চিকিৎসায় এখন অনেকটা সুস্থ দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা মোর্শেদা। তবে নাগরিকত্ব প্রমাণের কূটনৈতিক জটিলতায় দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। 

সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে ৫ জানুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশের মোর্শেদা খাতুন। প্রথম দিকে শুধু ডাক্তারি চিকিৎসা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে কাউন্সেলিং, মিউজিক থেরাপি, যোগ ব্যায়ামসহ নানা ভাবে সুস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে অঞ্জলি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

ওই সংস্থার কর্মকর্তা অদিতি বসু এবং মোর্শেদার মিউজিক থেরাপি বিশেষজ্ঞ স্বাতীলেখা ধরগুপ্ত দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, মোর্শেদা খাতুন তার স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন বেশ কিছু দিন আগেই। এর মধ্যে ব্যক্তিগত মাধ্যমে মোর্শেদার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংস্থাটি। এমন কি মোর্শেদার সঙ্গে তাদের টেলিফোনে কথাও হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এখনও মোর্শেদার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও আবেদন এসে পৌঁছায়নি বহরমপুরের হাসপাতালটিতে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবিহীন কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিতে পারছে না।

মোর্শেদার উদ্ধৃতি দিয়ে অঞ্জলি সংস্থা দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, বাংলাদেশের জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা নমাজ উদ্দিন নন্দা মিয়ার মেয়ে মোর্শেদা খাতুন। তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার নিজের গ্রামের পাশের গ্রাম গোজামানিকা গ্রামের বাসিন্দা স্বামী হাবিবুর শেখের সঙ্গে সংসারে বিরোধ ছিল। একরাতে মোর্শেদাকে জোর করে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে হঠাৎই একদিন নিখোঁজ হয়ে যান মোর্শেদা খাতুন। এরপর মোর্শেদা ভারতের ভুবনেশ্বর রাজ্যে ঘুরে বেড়ান। সেখান থেকে কিভাবে কিভাবে তিনি বর্ধমান পৌঁছান। বর্ধমানের পুলিশ অচেনা ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের মনে হয়েছে মোর্শেদা মানসিকভাবে অসুস্থ। তারাই ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি মোর্শেদাকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে।

সেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে মোর্শেদাকে ‘মিউজিক থেরাপি’ দেওয়ার কাজ যিনি সামলাচ্ছেন, সেই স্বাতীলেখা ধরগুপ্ত মোর্শেদার কাছ থেকে বাংলাদেশের তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এবং নিজের উদ্যোগে স্বাতীলেখা তার এক আত্মীয়ের সাহায্যে মোর্শেদার বাবা-মা কে খুঁজে পান।

দ্য ডেইলি স্টার অনেক চেষ্টার পর মোর্শেদা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়। মোর্শেদা জানিয়েছেন, ছেলে-মেয়ের কথা মনে পড়ে তার। বাবা-মায়ের কথাও মনে পড়ে। মনে পড়লে ভীষণ কষ্ট হয়, কান্না পায়। নতুন বছরে দেশে ফিরে যেতে চান তিনি। এর জন্য দুই দেশের সরকারের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারের যোগাযোগ করা হলে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত চৌধুরী টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, মোর্শেদা এখন অনেকটাই সুস্থ। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

বেসরকারি সংস্থা অঞ্জলি এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান সংস্থাটির অন্যতম কর্মকর্তা অদিতি বসু।

Comments

The Daily Star  | English

Don’t stop till the job is done

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday urged key organisers of the student-led mass uprising to continue their efforts to make students’ and the people’s dream of a new Bangladesh come true.

4h ago