ফাইনালে আরও এক হতাশার হার

মাহমুদউল্লাহ
সাইফুদ্দিনের রান আউটের পর মাথায় হাত মাহমুদউল্লাহর। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০০৯, ২০১২, ২০১৬ সালের পর ২০১৮। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আরও এক ফাইনাল হারল বাংলাদেশ। শনিবার ২২২ রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কাকে জবাব দিতে পারেনি মাশরাফি মর্তুজার দল।

টস হেরে  উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং। উইকেটে অসমান বাউন্স ছিল তবু ২২১ রানে শ্রীলঙ্কাকে আটকে রাখা বোলাররা লক্ষ্য রেখেছিলেন নাগালের মধ্যেই। সেই রান তাড়ায় অন্ধকারে ডুবে মরেছেন ব্যাটসম্যানরা। সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ থেমেছে ১৪২ রানে। পর পর তিন বলে বাংলাদেশের শেষ তিন উইকেট তোলে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেছেন শিহান মধুশঙ্কা।

ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট জেতার জন্য শুরু থেকেই ফেভারিট ছিল বাংলাদেশ। প্রথম তিন ম্যাচে জিতেছিল দাপটের সঙ্গে। ফাইনালের আগে ৮২ রানে গুটিয়ে বিশাল ব্যবধানে হারার পর সবচেয়ে দরকারি ম্যাচটাতেও পারল না বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা শ্রীলঙ্কা বাংলাদশের মাটিতে জিতে নিয়েছে আরও  শিরোপা।  

মাশরাফি মর্তুজা
রান তাড়ায় অতি সতর্ক শুরু করতে যেয়ে গড়বড় করে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে এল মাত্র ৬ রান। সেই চাপ সরাতে বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। চামারার বলটা টাইমিং করতে পারলেন না। তামিম যখন ফিরছেন তখনই খবর এলো ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন না সাকিব আল হাসান। ফিল্ডিংয়ে বাম হাতে চোট পাওয়ার পর সেলাই লেগেছে সাকিবের। তামিমের আউটে তখন তাই দুই উইকেট হারানোর হতাশা বাংলাদেশ দলে।

এমনিতে ২২২ রানের লক্ষ্যটা আহামরি নয়। তবে সেই রান তাড়ায় দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান শুরুতেই নেই। বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন। এক ছক্কায় ১০ করে অদ্ভুত ভুলে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি। 

টুর্নামেন্টের কোন ম্যাচেই রান পাননি সাব্বির রহমান। শেষ কবে ফিফটি করেছেন নিজেও হয়ত খুব চট করে মনে করতে পারবেন না। এই ম্যাচে তার ব্যাটের দিকে আরও আশা নিয়ে তাকিয়েছিল দল। আবারও বাজে শট আউট হয়ে ডুবিয়েছেন। চামারার বলে পুল করতে গিয়েছিলেন। ব্যাটের মাঝখানে আনতে পারলেন না, পার করতে পারলেন না মিড উইকেট। স্কোরকার্ডে ২২ রানে ৩ উইকেট নেই। সাকিবের না থাকা ধরলে আসলে নেই ৪ উইকেট।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে তবু আশা দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনেই থিতু হয়ে বের করছিলেন রান। জমছিল জুটি। বাড়ছিল চান্দিমালদের দুশ্চিন্তা, তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে দেননি মুশফিক। অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার আগের বলটাতেও করতে গিয়েছিলেন রিভার্স সুইপ। বলে ভালো করে ব্যাট লাগাতে না পারলেও বিপদ হয়নি। পরের বলে আবার গেলেন সুইপ করতে। এবার শর্ট ফাইন লেগে লোপ্পা ক্যাচ জমল থারাঙ্গার হাতে। ভাঙল ৫৮ রানের জুটির প্রতিরোধ।  ততক্ষণে আশাও যেন মিইয়ে গেছে অনেকখানি।

নাসিরের বদলে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ তবু বল হাতে শুরু এনে দিতে পেরেছিলেন। ব্যাটিংয়ে করেছেন হতাশ। ৫ রান করে বোলার ধনঞ্জয়াকেই দিয়েছেন ক্যাচ।

নিভু নিভু আশার প্রদীপ আবার দপ করে উঠেছিল মাহমুদউল্লাহ-সাইফুদ্দিন জুটিতে। ৩৭ রানের জুটিতে বেশিরভাগ রানই মাহমুদউল্লাহর। তবে সঙ্গ দিয়ে সাইফুদ্দিনও জোগাচ্ছিলেন ভরসা। তাতে ফাটল ধরিয়েছে আত্মঘাতি এক রান আউট। লাকমালের বলে মিডউইকেট ফিল্ডারের হাতে ঠেলেও এক রান নিতে গেলেন সাইফুদ্দিন, তাতে বাধা না দিয়ে ভৌ দৌঁড় দিলেন মাহমুদউল্লাহও। সাইফুদ্দিন এতখানি দূরে ছিলেন যে, গুনারত্নে বল নিয়ে ছুটে এসে স্টাম্প ভাঙার সুযোগ পেয়েছেন। ওই আউটের পর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন মাহমুদউল্লাহ। হয়ত ততক্ষণে বুঝে গেছেন- কাজটা হয়ে গেছে প্রায় অসম্ভব। 

সেই অসম্ভব সম্ভব করতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফিও। সঙ্গ দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহকে। বিষন্ন হয়ে তিনি যখন ফিরছেন ভরপুর গ্যালারিও তখন বাড়িমুখো। 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। দলে আসা মিরাজ তৃতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দানুশকা গুনাথিলেকাকে। ওয়ানডাউনে নেমে কুশল মেন্ডিস সেই মিরাজকে এক হাত নেন। তার এক ওভার থেকে তিন ছক্কা আর এক চারে তুলেন ২৪ রান।

বিপদজনক হতে থাকা এই ডানহাতিকে অবশ্য পরের ওভারেই থামাতে পেরেছিলেন মাশরাফি। তবে তৃতীয় উইকেটে জমে যায় উপুল থারাঙ্গা আর নিরোশান ডিকভেলার জুটি। উইকেট আকড়ে থাকায় থিতু হতে থারাঙ্গা নিচ্ছেলেন সময়। ডিকভেলার খেলছিলেন ওয়ানডে মেজাজেই।

তাদের ৭১ রানের জুটি ভেঙে দলকে এনে দেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। শুরুর দিকে কুশলের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল রান আছে এই পিচে। তবে সময়ের সঙ্গে কমেছে রানের গতি। মাঝের ওভারে দারুণ চেপে ধরতে পেরেছেন টাইগার বোলাররা। ২৫ থেকে ৩০ এই পাঁচ ওভারে আসে মাত্র ১০ রান। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফল মিলেছে পরে। রান রেটের তাড়ায় উইকেট দিয়েছেন থিসিরা পেরেরা, অ্যাসলে গুনারত্নেরা। অধিনায়ক চান্দিমাল থিতু হয়ে এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। দারুণ এক ডেলিভারিতে তার স্টাম্প উড়িয়েছেন রুবেল হোসেন।

তার আগে থিসিরা আর গুনারত্নকেও ফিরিয়েছিলেন তিনি। এসবের ভেতরেও থারাঙ্গা তুলে নেন ফিফটি। তার ক্যাচ ছেড়েছিলেন মুশফিক। সেই আক্ষেপ ঘোচান মোস্তাফিজ। থারাঙ্গাকে বোল্ড করে নিজের ৫০তম উইকেট তুলেন। শুরুতে থারাঙ্গাকে আম্পায়ারের দেওয়া এলবডব্লিওর আউটে উদযাপন হয়েছিল, রিভিউতে সে সিদ্ধান্ত বদলে যাওয়ার এক বল পর থারাঙ্গার অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেন মোস্তাফিজ। পরের দিকে রান পাওয়া আকিলা ধনঞ্জয়াকেও আউট করে দ্বিতীয় উইকেট নেন তিনি।

স্লগ ওভারেও দারুণ বল করেছেন রুবেল। দারুণ ইয়র্কারে শিহান মধুশঙ্কার স্টাম্প উপড়ে দেন চতুর্থ উইকেট।

সেই মধশঙ্কাই ম্যাচের পরের দিকে  রুবেলের স্টাম্প উড়িয়ে উল্লাস করেছেন। হ্যাট্ট্রিক করে গুড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা:  ২২১/১০ (৫০) (গুনাথিলেকা ৬, থারাঙ্গা ৫৬, কুশল ২৮, ডিকভেলা ৪২, চান্দিমাল ৪৫ , পেরেরা ২, গুনারত্নে ৬, ধনঞ্জয়া ১৭, মধুশঙ্কা ৭, লাকমাল ২, চামারা ১* ; মিরাজ ১/৫৩, মাশরাফি ১/৩৫,  মোস্তাফিজ ২/২৯, মাহমুদউল্লাহ ০/১৮, সাইফুদ্দিন ১/১৫, সাকিব ০/২০, রুবেল ৪/৪৫)

বাংলাদেশ: ১৪২/৯ (৪১.১)   (তামিম ৩, মিঠুন, সাব্বির ২, মুশফিক ২২, মাহমুদউল্লাহ ৭৬, মিরাজ ৫,   সাইফুদ্দিন ৮, মাশরাফি ৫, রুবেল ০, মোস্তাফিজ ০*    ; লাকমাল ০/২৯, চামারা ২/১৭, থিসিরা ০/৩১, মধুশঙ্কা ৩/২৬, ধনঞ্জয়া ২/৩০, গুনারত্নে ০/৪)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৭৯ রানে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English

Election possible a week before Ramadan next year: Yunus tells Tarique

He said it will be possible if preparations completed, sufficient progress made in reforms and judicial matters

2h ago