মুমিনুলের ব্যাটের দাপটে বাংলাদেশের দিন

শেষ আধঘন্টা বাদ দিলে বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এক দিনেই উঠেছে ৩৭৪ রান।
দারুণ সেঞ্চুরির পর মুমিনুলকে জড়িয়ে মুশফিকের উল্লাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দিনের তখন বাকি আর ছয় ওভার। ১২০ রানে দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পর দলের রান পেরিয়ে গিয়েছিল সাড়ে তিনশ।  অসাধারণ দিন শেষের প্রতীক্ষায় তখন গোটা দল। খানিকটা গড়বড় এরপরই। পর পর দুই উইকেট হারিয়ে মুমিনুল হকময় দিনেও মিলছিল বিপদের আভাস। পরে অবশ্য কিছুই ম্লান হয়নি। আপন আলোয় উদ্ভাসিত মুমিনুলের ব্যাটের দাপটে দিনশেষে চওড়া হাসি বাংলাদেশেরই। 

শেষ আধঘন্টা বাদ দিলে বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই। এক দিনেই ৪ উইকেটে উঠেছে ৩৭৪ রান।  টেস্টের প্রথম দিনে এটাই বাংলাদেশের তোলা সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দিনে ৩৬৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। 

৪ উইকেটের বদলে আনায়াসে ২ উইকেটে ৩৭৪ রান তুলে দিন শেষ করতে পারত বাংলাদেশ। দলের ৩৫৬ রানে সুরাঙ্গা লাকমালের আউটস্যুয়িংয়ে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। সেঞ্চুরি করতে তখন তিনি আর ৮ রান দূরে। এই রান করতে মুশফিক লাগিয়েছেন ১৯২ বল। ১০ চারের ইনিংসে স্ট্রাইকরেট পঞ্চাশেরও নিচে। উইকেটে জমে গিয়েছিলেন, যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন ভারি পা যেন নড়ছিলই না। ঠিক পরের বলেই লিটন দাস যে কাণ্ড  করেছেন তাতে সারাদিনের জৌলুস যেন মাটি হওয়ার জোগাড়। লাকমালের অফ স্টাম্প বরাবর বল কি ভেবে যে তিনি ছাড়তে গেলেন, তিনিই ভালো জানেন।  

পর পর দুই বলে উইকেট হারানোর ক্ষত আর বাড়তে দেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। মুমিনুলের সঙ্গে থেকে পার করেছেন দিনের বাকিটা। দিনশেষে ১৭৫ রানে ব্যাট করা মুমিনুলের হাতছানি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির। অধিনায়ক সঙ্গ দিচ্ছেন ৯ রান নিয়ে।

দিনের শুরুতে সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। আগ্রাসী ব্যাট করে তুলে নেন ফিফটি। তামিম ফিরলেও তা বেধে দেওয়া সে সুরে তাল মিলিয়ে আসর জমিয়েছেন মুমিনুল হক। ওপেনিংয়ে তামিম পেয়েছিলেন ইমরুল কায়েসের সঙ্গ। মুমিনুল পেলেন মুশফিকুর রহিমের। জুটিতে দুই সঙ্গীর ভূমিকা আর মেজাজেও মিল। তামিম-মুমিনুলের আগ্রাসনে ধীর গতি রেখে ভারসাম্য দিয়েছেন ইমরুল-মুশফিল। প্রথমটি থেমেছিল ৭২ রানে। পরেরটি আর থেমেছে রেকর্ডের পর। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২৩৬ রানের ম্যারাথন জুটি থেমেছে মুশফিকের আউটে। 

আগের দিনই দুদলের কথায় ইঙ্গিত মিলছিল ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষার। স্কোয়াডে ছয় স্পিনার থাকায় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘বুঝতেই পারছেন কী হতে যাচ্ছে’। লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল হেসেই বলেছিলেন, ‘অবশ্যই এটা খুব টার্নিং উইকেট ।’ চান্দিমালদের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আরেকটু স্পষ্ট হয়ে বলেছিলেন- ‘দুদলের ব্যাটসম্যানদের জন্যই হতে যাচ্ছে কঠিন পরীক্ষা।’

প্রথম দিনে অন্তত সেসবের কোন ছিঁটেফোটা মিলল না। সারাদিনে ওভারপ্রতি ৪.১৫ করে রান হয়েছে। উইকেট পড়েছে চারটি, যার দুটিই আবার একদম শেষ বিকেলে। ইমরুল রিভিউ নিলে উইকেট পড়ত আরেকটি কম। দিলরুয়ান পেরেরা  ২৪  ওভার  বল করে ওভারপ্রতি চারের  উপর রান দিয়েছেন, সান্দাকানের হাত থেকে খসেছে প্রায় সাড়ে চার করে রান। সবচেয়ে অভিজ্ঞ যিনি সেই রঙ্গনা হেরাথ পারেননি সুবিধা করতে। দুই প্রান্ত থেকেই  হাত ঘুরিয়েছেন ২০ ওভার, ১০০ রান দিয়ে উইকেট শূন্য লঙ্কার সেরা বোলার।

শ্রীলঙ্কান বোলারদের নাজেহাল করে ছেড়েছেন মূলত মুমিনুল হকই। ক্রিজে যখন এসেছিলেন দলের রান হয়ে গেছে ৭২। প্রথম ঘন্টায় দারুণ শুরুর পর কেবল ফিরেছেন তামিম। অন্যদিকে সময় নিয়ে খেলতে থাকা ইমরুলের সঙ্গ নিয়ে ঠিক তামিমের ভূমিকা নেন মুমিনুল। লাঞ্চের ঠিক আগে ৪০ রান করে ইমরুল ফিরলে পরে দুই সেশনের জন্য মুশফিককে পাকাপাকিভাবেই পেয়ে যান মুমিনুল।

লাঞ্চের পর খই ফুটতে থাকে মুমিনুলের ব্যাটে। চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভে বল পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে। সুইপ লেগেছে ব্যাটের মাঝখানে, ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে পেয়েছেন পুরো আত্মবিশ্বাস। বাহারি সব স্ট্রোকে ওয়ানডের মেজাজে তরতর করে বাড়তে থাকে মুমিনুলের রান।



৯৬ বলে টেস্টে দেশের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর পর করেছেন অন্যরকম উল্লাশ, পরেও খেলেছেন একই গতিতে।  দিনশেষে  ২০৩ বলে ১৭৫ রান করে বেরিয়ে গেছেন মুমিনুল। যাতে ১৬ চারের সঙ্গে আছে হেরাথকে মারা এক ছক্কা। একদিনে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস এটিই। এই ইনিংসেই স্পর্শ করেছেন দেশের হয়ে দ্রুততম দুহাজার রানের মাইলফলক। দ্বিতীয় দিনে মুমিনের সামনে ডাবল সেঞ্চুরির তো আছেই, অপেক্ষা করছে আরও বড় কোন রেকর্ডও। 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(প্রথম দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৭৪/৪  (৯০) (তামিম ৫২, ইমরুল ৪০, মুমিনুল ব্যাটিং  ১৭৫* , মুশফিক  ৯২, লিটন ০, মাহমুদউল্লাহ  ব্যাটিং  ৯* ; লাকমাল ২/৪৩, কুমারা ০/৬৪, দিলরুয়ান ১/৯৮, হেরাথ ০/১০০, সান্দাকান ১/৫৮, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ০/১১)

টস: বাংলাদেশ 

Comments

The Daily Star  | English
Road crash deaths during Eid rush 21.1% lower than last year

475 killed in road accidents in November: Jatri Kalyan Samity

As many as 475 people died and 605 others were injured in 566 road accidents across the country in November this year, said a report of Bangladesh Jatri Kalyan Samity

23m ago