লঙ্কানদের রান উৎসবে বাংলাদেশের নেতিয়ে পড়ার দিন

লঙ্কানদের রান উৎসবে নেতিয়ে পড়েছে টাইগারদের শরীরী ভাষাও। তৃতীয় দিনশেষে মলিন বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে।
শ্রীলঙ্কানদের দাপট কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেছে বাংলাদেশ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান তুলে বেশ তরতাজাই ছিল বাংলাদেশ। অথচ সেই রানকে পাত্তাই দিচ্ছে না শ্রীলঙ্কা। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর কুশল মেন্ডিস খেলেছেন ম্যারাথন দুই ইনিংস। রোশান ডি সিলভাও আছেন তিন অঙ্কের পথে। লঙ্কানদের রান উৎসবে নেতিয়ে পড়েছে টাইগারদের শরীরী ভাষাও। তৃতীয় দিনশেষে মলিন বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে।

১ উইকেটে ১৮৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। শুক্রবার দিনভর পড়েছে আর মাত্র ২ উইকেট। লঙ্কানদের বোর্ডে যোগ হয়েছে আরও ৩১৭ রান। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের স্কোর থেকে মাত্র ৯ রান পিছিয়ে আছে তারা। ৮৭ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন রোশান ডি সিলভা, অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল অপরাজিত ৩৭ রানে।  জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছুটির দিনে জড়ো হওয়া হাজার তিনেক দর্শকদের বিরক্তির উদ্রেক করেছে বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং। ম্যাচের মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলা টাইগারদের শরীরী ভাষাতে ছিল না তেতে উঠার ঝাঁজ।

পুরো দিনে এমন দৃশ্যের দেখা মেলা ছিল ভার। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
দিনের শুরু আর শেষটা সবচেয়ে বাজে কেটেছে মাহমুদউল্লাহর দলের। কেবল দ্বিতীয় ইনিংসে দুই সেঞ্চুরিয়ানকে আউট করাই পুরো দিনের সাফল্য। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া আর মেন্ডিস মিলে প্রথম সেশনে তুলে ফেলেন ১০৮ রান।

থই পাচ্ছেন না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
উইকেট ফেলতে না পারার হতাশা নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া বাংলাদেশ ফিরে এসে কিছুটা তেজ পায়। বিশেষ করে নতুন বল হাতে নিয়ে শ্রীলঙ্কানদের ভুগিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দিনের প্রথম সাফল্যও তার হাত ধরে। ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকা ধনঞ্জয়া বলের পেস বুঝতে না পেরে টপ এজে বল তুলে দেন আকাশে। উইকেটকিপার লিটন দাস সহজেই তা হাতে জমিয়ে ফিরিয়ে দেন ১৭০ রান করা ধনঞ্জয়াকে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে তুলেন ৩০৮ রান।

খানিক পর লিটনই অবশ্য আরেক উইকেটের সঙ্গী হতে পারতেন। মিরাজের বলে ১ রানে থাকা রোশন ডি সিলভার স্টাম্পিংয়ের কঠিন সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। জীবন পাওয়া রোশন দিনশেষে অপরাজিত আছেন ৮৭ রানে। বড় ইনিংসের অভ্যাস থাকা এই ব্যাটসম্যান দিচ্ছেন আরও বিপদজনক হওয়ার আভাস।

লঙ্কানদের সবচেয়ে দামি  উইকেটটি পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনও উইকেট নেওয়ার মতও বেশ কটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি। দারুণ খেলা কুশল মেন্ডিস ভালো বলে চওড়া ব্যাট নিয়ে খেললেও ভুল করেছেন ডাবল সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে। ১৯৬ রানে তাইজুলকে অহেতুক উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে। গত বছর গলে বাংলাদেশে বিপক্ষে ১৯৪ রানে উইকেট বিলিয়ে ফিরেছিলেন মেন্ডিস, তার পুনরাবৃত্তি হলো চট্টগ্রামেও।

দিনের সেরা দুই ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া আর মেন্ডিস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
মেন্ডিসের উইকেট নিয়ে চা-বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের খুঁজে পাননি শেষ সেশনে। অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে মিলে নির্বিঘ্নে বাকিটুকু পার করে দেন রোশান। শেষ সেশনে ৩২ ওভার খেলে ৮৮ রান তুললেও কোন উইকেট দেয়নি তারা। তড়িঘড়ি না করে শান্ত মেজাজে খেলে গেছে তারা। ওদিকে লঙ্কানদের মানসিক দৃঢ়তা দেখে ক্রমশ ছন্নছাড়া বাংলাদেশের বোলিং। চট্টগ্রামের পিচ রান ফোয়ারা থাকলেও তৃতীয় দিনে পাওয়া যাচ্ছিল টার্ন। মাঝে মাঝেই জায়গায় বল ফেলে বল ঘুরাচ্ছিলেন স্পিনাররা। তবে অভাব ছিল ধারাবাহিকতার। সানজামুল-মিরাজরা ওভারে দুই বল জায়গায় ফেললেও বাকি চারটিই দিয়েছেন আলগা। তাতে চাপে ফেলা যায়নি শ্রীলঙ্কাকে।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সফল বোলার মোস্তাফিজ। ২৫ ওভারে ৮৮ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ৫১ ওভার বল করে তাইজুল ১ উইকেট পেতে দিয়েছেন  ১৪৪ রান। দলের সেরা স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ পুরো ইনিংসে মাত্র ১৯ ওভার বোলিং । ০ রানে প্রথম উইকেট নেওয়ার পর ৯৭ রান দিয়েও অবশ্য সাফল্যের দেখা পাননি তিনি।

 

 

 

Comments