এবার ডোবালেন বোলাররা

ব্যাটসম্যানরা এনে দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ। বোলাররা নেমেছিলেন বাজে বোলিংয়ের প্রতিযোগিতায়। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাই পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ।
ঝড়ো ফিফটির পথে কুশল মেন্ডিসের শট। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
ব্যাটসম্যানরা এনে দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ। বোলাররা নেমেছিলেন  বাজে বোলিংয়ের প্রতিযোগিতায়। শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের ফসল বিফলে গেছে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ।
 
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিং স্বর্গে ১৯৩ রান করেছিল মাহমুদউল্লাহর দল। রান তাড়ায় ১৯ বল আগেই খেলা শেষ করে দেয় শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস, দাসুন শঙ্কা আর থিসিরে পেরেরার পিটুনিতে টাইগারদের হার ৬ উইকেটে। 
 
ইটের জবাবে যেন পাটকেল। বাংলাদেশের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জবাবে শ্রীলঙ্কার শুরুটা যেন তেমনই। দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলেকা আর কুশল মেন্ডিস পাঁচ ওভারের আগেই তুলে নেন ৫০ রান। দুই পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আর রুবেল হোসেন শুরু থেকেই ছিলেন এলেবেলে। তাদের পিটিয়ে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেন দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের ছয় ওভার ব্যবহার করতেই থতমত অধিনায়ক ব্যবহার করেছেন ৪ বোলার। 
 
প্রথম ওভার থেকে বল পাওয়া নাজমুল ইসলাম অপুই তখন সহায়। গুনাথিলেকাকে লাইন মিস করিয়ে স্টাম্পিং করিয়েছেন তিনি। আউট করেছেন উপুল থারাঙ্গাকেও। ৪ ওভারের স্পেলে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট। ট্রেডমার্ক নাগিন নাচও দিয়েছেন। তবে একজন পারফর্ম্যান্স যথেষ্ট ছিল না। আরেক স্পিনার আফিফ হোসেন মার খেলেও সবচেয়ে বড় উইকেটটি পকেটে পুরেছিলেন। ২৭ বলে ৫৩ করা কুশল মেন্ডিস আফিফকে পেটাতে গিয়ে লঙ অফে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েন। 
 
মাঝে নিজেকে বোলিংয়ে এনেও ভুল বাড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তার দুই ওভার থেকে লঙ্কানরা নিয়েছে ২৩ রান।
 
তবে সাইফুদ্দিন যেন ছিলেন সবচেয়ে উদার হস্ত। যখন তার কাছে দাবি ছিল চাপ তৈরি, তখনই বল করতে এসে হয়েছেন ছন্নছাড়া। ২ ওভার থেকেই দিয়েছেন ৩৩ রান। প্রথম ওভার থেকে ১৪ রান খসেছিল মোস্তাফিজেরও। তবে তিনি তা পরের ওভরেই কিছুটা পুষিয়ে দেন। দ্বিতীয় ওভারে পুষিয়েছেন রুবেলও। আউট করেন নিরোশান ডিকভেলাকে। সে চাপ খানিক পর আর রাখা যায়নি, দুজনেই হয়েছে আলগা। পরের দুই ওভারে মার খেয়েছেন বেদম। ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে মোস্তাফিজ থেকেছেন উইকেটশূন্য। এক উইকেট নেওয়া রুবেলের ২২ বল থেকে এসেছে ৫২ রান।
 
দাসুন শঙ্কা আর থিসারা মিলে ২০ বল আগেই শেষ করে দেন খেলা। ২৩ বলে ৪২ রানের ইনিংসে ৩টি করা ছক্কা আর চার মেরেছেন দাসুন। ১৮ বলে ৩ ছক্কা আর ৪ বাউন্ডারিতে ৩৯ তোলা থিসারার ব্যাট আরও বিধ্বংসী।
 
অথচ ইনিংস বিরতিতে বেশ চাঙ্গা ছিল বাংলাদেশ স্কোয়াড। উইকেট ব্যাট করার জন্য আদর্শ। টস জিতেও ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।  সৌম্য সরকার আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে পাওয়া গিয়েছিল চ্যালেঞ্জিং পূঁজি। 
 
ওয়ানডে, টেস্ট সব হেরে দিশেহারা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে নেমেছিল এক ঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে। সঙ্গে যোগ হওয়া ইনজুরিতে বাংলাদেশের একাদশ যেন কচিকাঁচার মেলা। তামিম ইকবাল না থাকায় অভিষিক্ত জাকির হাসানকে নিয়ে নামেন সৌম্য সরকার। টেস্ট আর ওয়ানডে থেকে বাদ পড়েছেন, দেখিয়ে দেওয়ার জন্য কেবল সৌম্যের হাতে ছিল কেবল টি-টোয়েন্টি। এই ফরম্যাটে গত বছর দেশের সর্বোচ্চ রান করা সৌম্যর শুরু শিহান মধুশঙ্কাকে চার-ছয়ে।
 
পরে ইশুরু উদানাকে টানা তিন চার মেরে আক্রমণ থেকে সরানোর পর বেরিয়ে এসে উড়িয়ে দেন গুনাথিলেকাকে। চার ওভারের আগেই উদ্বোধনী জুটিতে ৪৯। গুনাথিলেকাকে অহেতুক সুইপ করতে গিয়ে ১০ রান করা জাকিরের আউটে ভাঙে জুটি। তবে থামেনি রানের চাকা, সৌম্য চালাতে থাকেন তার মতই। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারেই ৭১। ১০ ওভারেই দলকে তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে ফেরেন সৌম্য। ৩০ বলে ৬ চার আর দুই ছক্কায় ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করার পর সৌম্য দিচ্ছিলেন বড় কিছুর আভাস।
 
লেগ স্পিনার জীবন মেন্ডিসকে রিভার্স করতে গিয়ে পেশিতে টান পড়ায় বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি। তবে লেগ স্টাম্পের বাইরে ইম্পেক্ট করে পায়ে লাগায় আউট হওয়ার কোন কারণ ছিল না। তবু আম্পায়ারের আঙুল উঠে যায়। রিভিউ না নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফেরেন দারুণ ইনিংস খেলা সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে তার ৫১ রানের জুটিতে দলের ভিত অবশ্য তখনই তৈরি। শক্ত ভিত পেয়েও শেষ ১০ ওভারে অবশ্য প্রত্যাশার চেয়ে ১৫ রান কম করেছে বাংলাদেশ। 
 
চারে নেমেছিলেন অভিষিক্ত আফিফ হোসেন। কোন রান করার আগেই অদ্ভুত আউটের ক্যারিয়ার শুরু তার। দ্রুত দুই উইকেট হারানো দলকে পথে রাখেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জমে উঠে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর জুটি। জুটিতে সমান তালে রান বাড়িয়েছেন দুজন। তাদের ৭৩ রানের জুটি থেমেছে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। ৩১ বলে ৪৩ করা বাংলাদেশ অধিনায়ক স্কুপ করতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ।
 
শেষ দিকে নেমে সাব্বির রহমান করেছেন আরও একবার হতাশ। দুই বলে খেলে ১ রানেই বোল্ড। প্রথম ১০ ওভারে ১০০ এলেও শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশ নিতে পেরেছে ৯৩ রান। 
 
৪৪ বলে ৬৬ করে অপরাজিত থাকা মুশফিকই শেষটাতেও বাড়িয়েছেন রান। তবে ১৯৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর ওইভাবে হাওয়ায় উড়ে যাবে তখনই কে ভেবেছিল!
 
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
বাংলাদেশ: ১৯৩/৬ (২০)  (জাকির ১০, সৌম্য  ৫২ , মুশফিক ৬৬* , আফিফ ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, সাব্বির ১, আরিফুল ১*  ;মধুশঙ্কা ০/৩৯, গুনাথিলেকা  ১/১৬, উদানা ১/৪৫, থিসারা ১/৩৬, ধনঞ্জয়া ০/৩২, মেন্ডিস ২/২১)


শ্রীলঙ্কা:    ১৯৪/৪ (১৬.৪) (মেন্ডিস ৫৩, গুনাথিলেকা ৩০, থারাঙ্গা ৪  , দাসুন ৪২* , ডিকভেলা ১১, থিসারা ৩৯*   ; অপু ২/২৫   , সাইফুদ্দিন  ০/৩৩, মাহমুদউল্লাহ ০/২৩, রুবেল ১/৫৩, মোস্তাফিজ ১/৩২, আফিফ ০/২৬)
 
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
 
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুশল মেন্ডিস। 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

40m ago