ভরসা তার দুই দলেই!
তাকে সাধারণ বিএনপি নেতা বললেও কম হবে। এক সময় দলের প্রতি তার আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। দলের প্রয়োজনে যা কিছু দরকার তাই করতেন। অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর থেকে শুরু করে নেত্রকোনায় কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বাড়িতেও হামলার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।
তার এহেন “কর্ম” বিফলে যায়নি। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় সহ-সভাপতির পদ পেয়েছিলেন। হয়েছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও।
কিন্তু, ঘটনার পরিক্রমায় এখন তিনি আর শুধু বিএনপির নয় আওয়ামী লীগেরও নেতা বনে গেছেন। শুধু কি তাই, আসন্ন ইউপি উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদের জন্য মনোনয়নও পেয়ে গেছেন। আগামী ২৯ মার্চ এই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আলোচিত এই ব্যক্তিটি হলেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতির পদে থেকেও সম্প্রতি তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেছেন। কিন্তু, কীভাবে তিনি ‘রাজনৈতিক ডিগবাজি’-তে এতটা পারঙ্গম হয়ে উঠলেন তা নিয়ে ধন্দে রয়ে গেছেন দুই দলের নেতাকর্মীরা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আজাদকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর দুদিন পরই বিএনপির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় দলীয় নিয়ম ভঙ্গের কারণে থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সম্প্রতি, দ্য ডেইলি স্টারের নেত্রকোনা প্রতিনিধির কাছে আজাদ দাবি করেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে সহযোগিতা না করায় তিনি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তবে সুর পাল্টে এখন বলছেন, ২০০৩ সালের আগে থেকেই তিনি নাকি আওয়ামী লীগের কর্মী।
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মুরাদের কাছে পরাজিত হন আজাদ। গত ১৩ জানুয়ারি মুরাদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়।
মোহনগঞ্জ বিএনপির সভাপতি একেএম শফিকুল হকের মতে, আজাদ কখনোই দল থেকে পদত্যাগ করেননি। “আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। কেননা, তিনি দলবিরোধী কাজে নিয়োজিত হয়েছিলেন।”
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে আজাদ ও তার সমর্থকরা মুরাদের ওপর আক্রমণ করে বলে অভিযোগ ছিল। সেসময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙ্গচুর এবং হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ করারও অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে, আজাদকে প্রধান আসামি করে মুরাদ দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সে সাত জন ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মুরাদের বিধবা স্ত্রী সামিয়া জামান। তিনি আগামী ২৯ মার্চ এই নির্বাচনের জন্যে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। এরপরও, আজাদকেই বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। ফলে সামিয়া এখন আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ডেইলি স্টারকে সামিয়া বলেন, তিনি “গ্রাম্য রাজনীতির শিকার”। তার আক্ষেপ, মৃত্যুর ৪০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতারা তার স্বামীর অবদান ভুলে গেছেন।
কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ধারণা, আওয়ামী লীগের মোহনগঞ্জ শাখার সভাপতি এবং পৌরসভার মেয়র লতিফুর রহমান রতন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আজাদের হয়ে তদবির করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে রতন বলেন, আজাদ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। “সবদিক বিবেচনা করে দল থেকে আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
তাহলে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আজাদ কীভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রতন বলেন, “আপনি একজন ভুয়া সাংবাদিক। তাই আপনি এমন প্রশ্ন করছেন।” এরপর, তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যেহেতু স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মোমিন মিলে শুধুমাত্র আজাদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তাই তাকে মনোনয়ন দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
সেই এলাকা থেকে উঠে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজাদ কখনোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এমনকি, তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যও নন।
আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতা আজাদের গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পোস্টার পাশাপাশি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। তাদের বিস্ময়, কীভাবে এই ব্যক্তির অতীতের সমস্ত কর্মকাণ্ড ভুলে গিয়ে দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হলো!
Comments