বারবার উৎসবের আয়োজন পরিণত বিষাদে

প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতবে বাংলাদেশ। এমনটা ধরে নিয়ে বিকেল থেকেই মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছিল জায়ান্ট স্ক্রিন। খেলা দেখানো হয়েছে সিনেমা হলেও। টান টান উত্তেজনায় বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে বাড়ছিল রোমাঞ্চ। শেষ বলে ছক্কা মেরে জড়ো হওয়া সব উৎসবে জল ঢেলে দিয়েছেন দীনেশ কার্তিক।
Bangladesh Cricket supporter
বড় স্ক্রিনে খেলা দেখতে শাহবাগে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফিরেছেন বিষাদ আর কান্না নিয়ে। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিতবে বাংলাদেশ। এমনটা ধরে নিয়ে বিকেল থেকেই মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছিল জায়ান্ট স্ক্রিন। খেলা দেখানো হয়েছে সিনেমা হলেও। টান টান উত্তেজনায় বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে বাড়ছিল রোমাঞ্চ। শেষ বলে ছক্কা মেরে জড়ো হওয়া সব উৎসবে জল ঢেলে দিয়েছেন দীনেশ কার্তিক।

বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য এই কষ্ট পাওয়া অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। সেবারও ২০ রান দিয়ে খলনায়ক বনে যান রুবেল হোসেন। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হার। খরুচে ওভার করে ওই ম্যাচে ভিলেন হয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন। ২০১৬ সালে আরেকবার ফাইনাল হার। এই ভারতের কাছে। সেটিও ছিল একটি টি-টোয়েন্টি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটি তাই দ্বিতীয় ফাইনাল হার। দুবারই প্রতিপক্ষ ভারত। 

আজকের আগে বাংলাদেশ ফাইনাল হেরেছিল এই জানুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় কাপে ফেভারিট ছিল বাংলাদেশই। হেরে যায় ব্যাটিং ব্যর্থতায়। 

ভারতের কাছে এই হারে কাকে ভিলেন বানিয়ে সান্ত্বনা খুঁজবেন দর্শকরা। চাইলে ১৯তম ওভারে ২২ রান দেওয়া রুবেলকে আবার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়। কিন্তু এই রুবেলই যে আগের তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ছিলেন দলের সেরা বোলার। দোষারোপে পড়তে পারেন সৌম্য সরকার। কিন্তু বেচারা তো অনিয়মিত বোলার। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এক ওভারে ১২ রান ডিফেন্ড করা খুবই কঠিন। রশিদ খান বা সুনিল নারাইনের মতো বোলারদের পক্ষে হয়ত কখনো কখনো সম্ভব। কিন্তু সৌম্য! তবু সৌম্য প্রথম ৫ বলে ৭ রান দিয়ে নিয়ে ফেলেছিলেন ১ উইকেট। শেষ বলটাই ক্ষত হয়ে এল। ক্ষত হয়ে এল দীনেশ কার্তিকের ব্যাট। হয়ত আরেকটি হিসেব নিকেশ করে বোলারদের ব্যবহার করতে পারতেন সাকিব আল হাসান। দারুণ বল করা মোস্তাফিজুর রহমানের একটি ওভার রেখে দেওয়া যেত শেষের জন্য। তবে এসব যদি, কিন্তু,হয়ত ক্রিকেটে দিনশেষে কেবল কথারই কথা। কিংবা কষ্টে দেয় কিছুটা প্রলেপ। 

রোববার রাতেও কষ্টের এসব প্রলেপ মেখে বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরেছেন উৎসব করতে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষ। কেউ ফিরেছেন চোখে জল নিয়ে, কারো চোখেমুখে হতাশা আর আক্ষেপ। একটুর জন্য আরও একবার হয়নি বাংলাদেশ। কেউ কেউ বলছেন, 'বারবার কেন একটুর জন্য বাংলাদেশকেই...।'

এই নিয়ে ভারতের কাছে টি-টোয়েন্টির ৮ দেখায় সববারই হারল বাংলাদেশ। এরমধ্যে খুব কাছে গিয়ে হার আছে একাধিক। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩ বলে লাগত ২ রান। তাও নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ওই তিন বলেই ৩ উইকেট হারিয়ে হেরেছে এক রানে। আরও একবার হারতে হলো শেষ বলে গিয়ে। 

তবে টুর্নামেন্টের শুরুতে হয়ত দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ এতটুকু ছিল না। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে সব ফরম্যাটে হেরে দল ছিল ছন্নছাড়া, শুরুতে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। কিন্তু কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার ঘরের মাঠে ওদের ২১৫ রান তাড়া করে হারিয়ে সবাইকে নাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া পরের ম্যাচে ফের টানটান উত্তেজনা আর নাটকীয়তার পর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। সেদিন দুই বলে ৬ রানের সমীকরণ মাহমুদউল্লাহ মিটিয়েছিলেন ছক্কা মেরে। সেই ছক্কা নিয়ে মাতোয়ারা ছিলো গোটা দেশ। ৪৮ ঘণ্টারব্যবধানে আরেকটি ছক্কায় এখন দেশজুড়েই যেন বিষাদের চাদর। 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago