পশ্চিমবঙ্গে এবার ‘মরা মুরগি’ আতঙ্ক, চলছে সাঁড়াশি অভিযান
ফরমালিনযুক্ত মরা মুরগি বিক্রি এবং সেই মুরগি হোটেলে রান্না করে বিক্রির মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগে সরগরম রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যটির রাজধানী কলকাতা ছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া উত্তর-চব্বিশ পরগনা জেলায় এই ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সংশ্লিষ্টদের কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া মাত্র রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে মরা মুরগি জব্দ এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সাঁড়াশি অভিযান। এই পর্যন্ত অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। জব্দ হয়েছে কয়েক হাজার মরা মুরগিও।
উত্তর-চব্বিশ পরগনার জেলা প্রশাসক অন্তরা আচার্য জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরই তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। জেলার বাদুড়িয়া এলাকা থেকে মরা মুরগিসহ সাতজনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছেন বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার পি সাবোরি রাজকুমার।
জানা গেছে, গতকাল (২১ মার্চ) বাদুড়িয়াসহ উত্তর-চব্বিশ পরগনার বেশ কয়েকটি এলাকায় এই অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া মরা মুরগির নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে জেলা প্রশাসক অন্তরা আচার্যের সভাপতিত্বেও অভিযান নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলার দুই পুলিশ সুপার ছাড়াও প্রাণী বিকাশ দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েকদিন কলকাতার গণমাধ্যমে প্রকাশিত মরা মুরগি বিক্রি এবং হোটেলে রান্না করে খাওয়ানোর খবর পড়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ মমতা ব্যানার্জি। গতকাল বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের প্রাণী বিকাশ দফতরের সচিবকে কার্যত ভৎসনা করেন তিনি। দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। মরা মুরগি বিক্রির খবর সরকারকে জানালে তাকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্লাস্টিকের চাল, প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে এর আগে রাজ্যটিতে তুমুল আলোচনা শোনা গিয়েছিল। এমনকি, বেশ কিছু দিন আগে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা শহরে ভারতের নামী কমল পানীয় সংস্থার বোতলে ‘কীটপতঙ্গ’ পাওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। সেটাও ছিল আলোচিত বিষয়।
পোলট্রির মরা মুরগি হোটেলে পরিবেশনের প্রথম ঘটনা সংবাদমাধ্যমের চোখে পড়ে উত্তর-চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের বাদুড়িয়া এলাকায়।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মরা মুরগির ব্যবসা চলছিল। জেলা শহরের এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী কলকাতাতেও। বিশেষ করে নিউমার্কেট এলাকায় মরা মুরগি ফরমালিনের পানিতে ডুবিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হোটেলের রান্না ঘরে রাখা হচ্ছে এবং সেই মাংসই ব্যবহার করা হচ্ছিল।
কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধকরণ বিভাগের মেয়র অতিন ঘোষ এই বিষয়ে জানিয়েছেন, গত ২১ মার্চ থেকে কলকাতার ১৬টি এলাকায় অভিযান করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিউমার্কেট এলাকার বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কোথাও মরা মুরগি রান্নার ঘটনা সনাক্ত হয়েছে কী না সেটি তিনি জানাননি।
Comments