সাভার থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা
দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোকে যুক্ত করতে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। “ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে” নির্মিত হলে রাজধানীর যানজট এড়িয়ে এক মহাসড়ক থেকে অন্য মহাসড়কে যান চলাচল সুগম হবে। সেই সাথে এশিয়ান হাইওয়েরও অংশ হবে এটি।
এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ না করেই দ্রুত গতিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছে যেতে পারবে। একইভাবে ঢাকা শহর এড়িয়ে মাওয়া ও সিলেটের দিকেও যেতে পারবে যানবাহন। আর চট্টগ্রাম ও সিলেটের দিক থেকে মাওয়া, আরিচা ও উত্তরের জেলাগুলোর দিকে যানবাহনগুলোও এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেই ঢাকার যানজট এড়াতে পারবে।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মাধ্যমে সরাসরি রাজধানীর সাথে যুক্ত হতে চলেছে। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে ওই জেলাগুলোর সাথে নারায়ণগঞ্জের মধ্যেও যান চলাচল সহজ হবে।
প্রকল্পের নথিপত্রে বলা হয়েছে, প্রধান মহাসড়কগুলো দিয়ে দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করা হলে রাজধানীর যানজটেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই প্রকল্পটি ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কেরও অংশ হবে।
প্রকল্পটিতে সরকারিভাবে বিনিয়োগের জন্য গত জানুয়ারি মাসে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশ সরকারের সেতু বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা মালয়েশিয়ার এই প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন।
এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি সরকার বিনা প্রতিযোগিতায় এক বা একাধিক কোম্পানিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দিয়ে থাকে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিনিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া ছাড়াও আরও দুটি চীনা কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সরকার চাইছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে যেসব দেশের বিনিয়োগ রয়েছে তার বাইরে নতুন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসুক।
সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকারের বিনিয়োগে ওই দেশেরই একটি কোম্পানি প্রকল্পটির কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইআরডি গত মাসেই মালয়েশিয়া দূতাবাসে চিঠি দিয়ে প্রকল্পের বিস্তারিত জানিয়েছে। আর অর্থায়নসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসহ প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও চলতি মাসের শুরুতে মালয়েশিয়ার কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ার কাছ থেকে কারিগরি প্রস্তাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ।
ইআরডি থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের দুটি অংশ থাকবে। এর মধ্যে ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৬৭৩.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর সড়কে মেঘনা নদীতে সেতু নির্মাণে খরচ হবে ১৮২.৪৩ মিলিয়ন ডলার।
যে রুট প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে হেমায়েতপুর-নিমতলী-কেরানীগঞ্জ-একুরিয়া-জিঞ্জিরা-ফতুল্লা-হাজীগঞ্জ বন্দর-মদনপুর পর্যন্ত। এশিয়ান হাইওয়ে-১ এরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে এই পথটি। এশিয়ান হাইওয়ে-১ দিয়ে বেনাপোল-যশোর-কাচপুর-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল দিয়ে ভারতের সাথে দুদিক থেকে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ।
হেমায়েতপুর থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পশ্চিম অংশ ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত পূর্ব অংশ দুটি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে নির্মাণ করা হতে পারে। এর মধ্যে পূর্ব অংশটির জন্য পাঁচ বছর ও পশ্চিম অংশ চার বছরের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারি মাসে পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্পের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেছে এর জন্য ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির মতামত নেওয়া হবে। আর ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমদ বলেছেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তারা সেতু বিভাগকে বলেছেন।
গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি দেশের ১৮টি অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য জাপানের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল। পরে সরকারি পর্যায়ে (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) বিনিয়োগের জন্য জাপানের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া।
এ ধরনের আটটি বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য এর মধ্যেই জাপানের এক ডজনের বেশি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
Comments