সেই টেস্টে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া
বল টেম্পারিংয়ের তরতাজা ঝড়ের মধ্যেই টিম পেইনের নেতৃত্বে চতুর্থ দিন মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। এক দিনের মধ্যেই ঘটে গেছে অনেক কিছু। স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার হারিয়েছেন দায়িত্ব। সাজা পেয়েছেন স্মিথ আর ক্যামেরন বেনক্রফট। মাঠের বাইরে সমালোচনার মুহুর্মুহু তীর। সব মিলিয়ে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়ার শরীরী ভাষা দেখা গেল মাঠেও। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১০৭ রানে গুটিয়ে ৩২২ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছে তারা।
রোববার কেপটাউনের নিউল্যান্ডস স্টেডিয়ামে আগের দিনের ২৩৮ রানের সঙ্গে আরও ১৩৫ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩০। সেই রান তাড়ার ধারেকাছেও যেতে পারেনি অসিরা। একদিন বাকি থাকতেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। এই জয়ে চার ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। জোহেন্সবার্গে পরের টেস্টে অস্ট্রেলিয়া পাচ্ছে না দলের সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথকেও।
৪৩০ রান তাড়া করে জিততে হলে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে হতো অসিদের। রেকর্ড দূরে থাক এই ইনিংসে ৪০ ওভারও ব্যাট করতে পারেনি তারা। বিষণ্ণ, বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়ানরা দিনের শুরু থেকেই যেন খাপছাড়া। হয়েছে বেশ কিছু মিস ফিল্ডিং। ভি ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে দিলেও তাই ডি কক, ফিল্যান্ডার আর রাবাদার ব্যাটে বড় পূঁজিই নিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা।
ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলেও ক্রমশ তলিয়ে গেছে ড্যারেন লেম্যানের শিষ্যরা। শুরুটা অবশ্য ভালো করেছিলেন দুই ওপেনার ওয়ার্নার ও বেনক্রফট। গড়েছিলেন ৫৭ রানের জুটি। কিন্তু এরপরই ধসে পড়ে পুরো ইনিংস। ৪৮ রানে পড়েছে বাকি ৯ উইকেটে।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ রান ওয়ার্নারের, ২৬ করেন বেনক্রফট। দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন আর একজনই। মিচেল মার্শের ব্যাট থেকে আসে ১৬। নেতৃত্ব হারানো স্টিভেন স্মিথ ব্যাট হাতেও করেছেন হতাশ। ২১ বলে মাত্র ৭ রান করে মরকেলের বলে ক্যাচ দেন তিনি। এই মরনে মরকেলই এই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ানদের মূল হন্তারক। ২৩ রানেই ৫ উইকেট নেন তিনি। কেশব মহারাজ নিয়েছেন ৩২ রানে দুটি, এক উইকেট গেছে কাগিসো রাবাদার পকেটে।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১১ রানের জবাবে ২৫৫ করতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৩৭৩ রান করে বিশাল লিড পায় প্রোটিয়ারা। সেই লিডের পিছু নেওয়ার অবস্থাতেই যেতে পারেন সফরকারীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসের ম্যাচের সবচেয়ে ঘটনাবহুল সময়। ম্যাচের ফল ছাপিয়েই যেন বড় খবর হয়েছে বল টেম্পারিং ইস্যু।
শনিবার টেস্টের তৃতীয় দিনে বল টেম্পারিং করেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ক্যামেরন বেনক্রফট। দুই হাত দিয়ে বলের আকৃতি বদলের চেষ্টা করা তার একটি ফুটেজ ফাঁস হয়ে যায়। এক পর্যায়ে দেখা যায় তিনি পকেটে একটাকিছুটা একটা রাখছেন। পরে সেই জিনিস আবার পকেট থেকে তার আন্ডারগার্মেন্টসের ভেতর চালান করে দেন। আরেকটি ফুটেজে দেখা যায় কোচ ড্যারেন লেম্যান ও বদলি খেলোয়াড় পিটার হ্যান্ডসকম্বের সঙ্গে ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন। হ্যান্ডসকম্ব পরে মাঠে ঢুকে বেনক্রফটকে কিছু একটা বলেন।
দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বল টেম্পারিং করার কথা স্বীকার করেন বেনক্রফট। পাশে থাকা অধিনায়ক স্মিথ জানান, তিনি পুরো ব্যাপারটি জানতেন এবং লাঞ্চের বিরতির সময় দলের লিডারশিপ গ্রুপ মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রোববার সকালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিজের হতাশা জানিয়ে বক্তব্য রাখার পর টেস্টের মাঝপথেই অধিনায়ক পদ থেকে স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক পদ থেকে ডেভিড ওয়ার্নারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রোববার খেলা চলাকালীন ঘোষণা আসে আইসিসির সাজার। বল টেম্পারিং করায় ক্যামেরন বেনক্রফটকে ৭৫% ম্যাচ ফি জরিমানা আর তিন ডিমেরিট দেওয় হয়। আর অধিনায়ক হিসেবে দায় স্বীকার করায় স্মিথকে এক টেস্ট নিষিদ্ধ করা হয়, তার ম্যাচ ফির পুরোটাই জরিমানা হয়েছে।
আলোচিত কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দুই দিন বলা হচ্ছে। মাঠের খেলাতেও হেরে কোন আলো দিতে পারল না ক্রিকেটাররা।
Comments