‘আমি ভালো আছি’

এই আমি কে, এ কি শুধুই আমি? আমি কি আমার বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান নিয়ে? এই আমি কি পাশের বাসার প্রতিবেশীকে নিয়ে না? যেখানে আমি আছি তার উপরের বা নিচের প্রতিবেশী, পাশের বিল্ডিং এর বাসিন্দা, আমার গলি, মহল্লা, ঢাকা শহর, ওই গ্রামের বিউটি না? না না তা হবে কেন? আমি কেন বিউটি, তনু হতে যাবো, আমি তো দিব্য আছি।

এই আমি কে, এ কি শুধুই আমি? আমি কি আমার বাবা-মা, ভাইবোন, সন্তান নিয়ে? এই আমি কি পাশের বাসার প্রতিবেশীকে নিয়ে না? যেখানে আমি আছি তার উপরের বা নিচের প্রতিবেশী, পাশের বিল্ডিং এর বাসিন্দা, আমার গলি, মহল্লা, ঢাকা শহর, ওই গ্রামের বিউটি না? না না তা হবে কেন? আমি কেন বিউটি, তনু হতে যাবো, আমি তো দিব্যি আছি।

পেপার খুললে ওরকম দু’ একটা লেখা চোখে পড়বেই তাতে আমার কি, ওদেরকে তো আমি চিনি না, কোনো দিক থেকে আমার আত্মীয়ও হয় না। নিশ্চয়ই ওদের এই পরিণতির পিছনে অন্য কোনো কারণ ছিল। তাছাড়া এতো ছোট ছোট ব্যাপারে আমার মাথা না ঘামালেও চলবে। আমি ও আলাদা আলাদাভাবে অথবা সবাই একমত যে- নিজের সীমানার মধ্যেই থাকি। ওই সব নিয়ে ভাববার জন্য সরকার আছে, আইন আছে। থাকলাম, নিজের সীমানার মধ্যেই থাকলাম। অন্যকারো কিছুতে আমার কী-ই বা করার আছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে ওদেরকে কে অধিকার দিল এই আমার আমি’র সীমানার মধ্যে ঢুকতে। ওরা কিভাবে আমাকে দলে, মুচড়ে ঘায়েল করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলো। ওহ খুবই দুঃখিত, আমাকে তো নয় বিউটি, তনু, ওই ছয় বছরের ছোট মেয়েকে বা ওদের চোখে যারা পড়বে, আমিতো অনেক দূরে বসে শুধু ওদের কথা পত্রিকায় পড়ব আর পত্রিকা ভাঁজ করে রেখে দিয়ে নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে যাব। আমি নিজের দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে নিজেকে নিয়ে আছি আর ওরা ওদের দৃষ্টিকে করছে প্রসারিত, প্রজ্বলিত ও প্রখর। ওরা আমার এই আমি’র সুযোগে একা প্রত্যেক আমি’কে কি লাঞ্ছিত করছে না?

এই আমি ভালোই ছিলাম, হয়তো আছিও। হয়তো কেন? কারণ আমি ভালো নেই—চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে আমি ভালো নেই--। এতো জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছা হচ্ছে যাতে সারাদেশ একেবারে স্তম্ভিত হয়ে একবার আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে সম্বিৎ ফিরে পায়। ওকে কে এই অধিকার দিল যে ‘ও’ সিদ্ধান্ত নিল, বিউটির জীবনটা কিরকম হবে। একবার ধর্ষণ করল, সমাজপতিরা তথাকথিত বিচার করলেন, মেয়েকে সরিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নিতে হলো। কিন্তু তাতেও ও পেল না বাঁচার অধিকার। ঘাতক আবার তাকে তুলে নিল তারপর তাকে আবারও ধর্ষণ করল আর এবার তাকে মেরেই ফেলল।

এত শক্তিশালী ওরা, এতবড় সাহস ওদের কিভাবে হলো, কে দিল এই সাহস? আমি দেইনি তো? দিয়েছি তো – আমি তো চুপ ছিলাম। বিউটি কালকে এসেছিল আমার কাছে—শুধু কাঁদল হাউমাউ করে। আমিও কিছু বলতে পারলাম না শুধু কাঁদলাম, একসময় আমাকে বলল—আমার শরীরটা যেন ওকে দেই ও বাঁচতে চায়! আমি চুপ করে থাকায় ও বলল—ওর আত্মাটা আর ওর শরীরে ফিরে যেতে পারছে না কারণ ও নাকি দেখেছে বিউটির শরীরটা ওরা ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলেছে, পচন ধরেছে শরীরে, পড়ে আছে নালায়। আরও অনেক কিছু বলল, ওর সব কথা আমি বুঝতে পারলাম না কারণ আমি তো কখনও নিজেকে ছাড়া কাউকে নিয়ে ভাবিনি, যেটুকু বুঝলাম—ও জানতে চাইছে ওর আর আমার মধ্যে পার্থক্যটা কী? ওর কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না কারণ ও মৃত। আর আমার কথা কেউ শুনতে পারছে না কারণ আমি বেঁচে আছি মৃতের মতই। তারপরও যখন আমি রাজি হলাম না তখন ও চলে গেল কিন্তু যাবার আগে বলে গেল—আমি আর ‘ও’ সখী হব, ঘুরে বেড়াবো সারা দেশময়, আমাদের কেউ দেখবে না ছুঁতে পারবে না, ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুর সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না।

Comments

The Daily Star  | English

What is seat-sharing and why as a voter you should know about it

In the lead-up to the national election on January 7, 2024, parties that have committed to participating in the polls have put forth their nominees

1h ago