মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ রয়েছে ‘প্রত্যাবাসিত’ রোহিঙ্গার

মিয়ানমারে ‘প্রত্যাবাসিত’ সেই ব্যক্তি আকতার আলমকে কেউই বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশের নাইক্ষ্যাংছড়ির তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া দেশহারা নির্যাতিত রোহিঙ্গারা তাকে ‘মিয়ানমার পুলিশের লোক’ বলে মনে করেন।
aktar alam
আকতার আলম। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে ‘প্রত্যাবাসিত’ সেই ব্যক্তি আকতার আলমকে কেউই বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশের নাইক্ষ্যাংছড়ির তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া দেশহারা নির্যাতিত রোহিঙ্গারা তাকে ‘মিয়ানমার পুলিশের লোক’ বলে মনে করেন।

মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং দেশটির মংডু শহরের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেই ব্যক্তির ভালো যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।

শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মতে, আকতার আলম মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে সীমান্ত এলাকার খবর সরবরাহ করতেন। গত বছরের আগস্টে তমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে এই ব্যক্তিও আশ্রয় নেন।

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি তার সঙ্গে যখন শরণার্থী শিবিরে এই সংবাদকর্মীদের কথা হয়, তখন তার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে বা তার সঙ্গে কথা বলে কোনভাবেই মনে হয়নি যে তিনি দেশত্যাগী বা নির্যাতনের শিকার।

গত ১৪ এপ্রিল মিয়ানমার সরকারের এক বার্তায় বলা হয়, সেদিন সকালে একটি শরণার্থী পরিবারকে প্রথম ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মিয়ানমারের ইনফরমেশন কমিটির ফেসবুক পেজে বলা হয়, “পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাখাইন রাজ্যের তাওংপিওলেতুই শহরে প্রত্যাবাসন শিবিরে ফিরে আসে।”

সেই পরিবারের সদস্যরা হলেন আকতার, তার স্ত্রী সাজেদা বেগম, মেয়ে তাহেরা, ছেলে তারেক আজিজ এবং তাদের প্রতিবেশী শওকত আরা।

বাংলাদেশের রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপাট্রিয়েশন কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম জানান, তারা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে তাদের ফিরে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমিকা নেই।

কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সরকারের নতুন করে শুরু করা রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শুরু থেকেই আকতার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। তিনি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

আকতারের সঙ্গে এই সংবাদকর্মীদের দুবার কথা হয়েছিল। প্রতিবারেই তাকে দেখা যায় ইস্ত্রী করা সাদা শার্ট পড়া অবস্থায়। দেখে মনে হয়েছে তার হাতে ছিল দামি ঘড়ি। মুখে সিগারেট ও পান নিয়ে আকতার সাবলীলভাবে বলেন, তিনি বিভিন্ন ঘটনার সময় ‘ইন্টারপ্রেটর’ হিসেবে মিয়ানমারের বিজিপি এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি-র সঙ্গে কাজ করতেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে মিয়ানমারের স্থানীয় প্রশাসনকেও সহায়তা করার কথাও তিনি জানান।

আকতার বলেন, গত আগস্টে যখন মিয়ানমারে সংঘর্ষ শুরু হয় তখন তাকে বলা হয়েছিলে তার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় তাকেও ঘর ছাড়তে হয়েছে। তবে মিয়ানমারের বিজিপি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলতেন। তার ফেলে আসা সম্পত্তির খোঁজ-খবর রাখতেন।

মিয়ানমারে তার ১০০ একরের বেশি জমি রয়েছে বলেও তিনি জানান। তার একটি দোতলা বাড়ি দুটি প্রাইভেট কার এবং একটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলেও জানান। তিনি ‘বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে’ কাঠের ব্যবসা করতেন বলেও উল্লেখ করেন।

তার বাবাও রাখাইন রাজ্যের মংডুর বালিবাজারের চেয়ারম্যান ছিলেন। রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের সময় তার সম্পত্তির কোনো ক্ষতি হয়নি এবং তিনি সেখানে ফিরে যেতে চান।

এই সংবাদকর্মীদের সামনেই তিনি মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিজিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললেন।

মধ্যম ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জহির আহমেদ বলেন, আকতার মিয়ানমারে প্রভাবশালী ছিলেন। তিনি প্রশাসনিক বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেন।

জহিরের দাবি, যদিও আকতার নো ম্যানস ল্যান্ডের মিয়ানমার অংশে বসবাস করতেন তিনি অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশে থাকতেন।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একজন নেতা দীন মোহাম্মদ বলেন, নো ম্যানস ল্যান্ডে আকতারের চলাচল ‘সন্দেহজনক’ ছিল। তিনি সবসময় বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একজন মোহাম্মদ ইরফান বলেন, আকতার মাঝ রাতে কাউকে না জানিয়ে ফিরে গেছেন। সে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বলেও মন্তব্য করেন ইরফান।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago