চলে গেলেন রাজীব, রেখে গেলেন অভিভাবকহীন দুই ভাই
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বাস চাপায় হাত হারানো কলেজ ছাত্র রাজীব হোসেন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজ (১৭ এপ্রিল) ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) চিকিৎসকরা তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজীবের চাচা জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমাদের অনুমতি নিয়ে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসকরা রাজীবের লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন।”
গতকাল সকালে ঢামেকের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এমএস জামান শাহীন জানিয়েছিলেন গত ১০ এপ্রিল থেকে লাইফ সাপোর্টে থাকা রাজীবের অবস্থা সংকটাপন্ন।
গত ৩ এপ্রিল বাংলামটর এলাকায় ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুটি বাসের রেষারেষিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীবের ডান হাত বাস দুটির মাঝখানে চাপা পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পথচারীরা তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখান থেকে তাঁকে ঢামেকে স্থানান্তর করা হয়। রাজীবের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
২০০৭ সালে রাজীবের বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর দুই ভাই আবদুল্লাহ হৃদয় (১৪) এবং মেহেদী হাসান বাপ্পীর (১৫) অভিভাবক ছিলেন। রাজীব তাঁর মাকে হারান যখন তাঁর বয়স ছিল আট বছর এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল ১০ মাস। এরপর থেকে আত্মীয়-স্বজনরা তাঁদের দেখভাল করতেন।
২০১২ সালে এইচএসসি পাস করার পর রাজীব তাঁর ভাইদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করার জন্যে গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের কাজ শুরু করেন।
রাজীবের চাচা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “রাজীব সবসময় তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতেন সে তার ভাইদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে কাজ করে যাবে।”
রাজীবের চিকিৎসার জন্যে গঠিত সাত-সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক এমএস জামান শাহীন বলেন, চিকিৎসকরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিলেন।
দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী বিআরটিসি-র বাসচালক ওয়াহিদ আলী (৩৫) এবং সজন পরিবহনের চালক খোরশেদের (৫০) জামিন আবেদন গতকাল আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তাদেরকে দুদিনের রিমান্ডের পর গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়।
Comments