নিরাপত্তা পরিষদের সফরের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পাশে পাওয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আসন্ন সফরকে সুযোগ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। আগামী শনিবার বিকেলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবেন। দুই দিন অবস্থান করার পর সোমবার সকালে তারা মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। রোহিঙ্গা সংকট পর্যবেক্ষণে তারা সেখানেও দুই দিন অবস্থান করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে কক্সবাজার ও মিয়ানমারে গিয়ে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে জাতিসংঘ কার্যত ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ার পর সংস্থাটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এই সংকট পর্যবেক্ষণ করতে আসছেন। দলটিতে জাতিসংঘের যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীনের উপ স্থায়ী প্রতিনিধিরা থাকবেন। এই পাঁচটি দেশই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
এছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্য থেকে বলিভিয়া, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, নেদারল্যান্ডস, পেরু, পোল্যান্ড, সুইডেনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও আইভোরি কোস্টের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি সফরকারী দলটিতে থাকবেন।
নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র দুই বছর মেয়াদে নির্বাচিত হয়। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে পেরু। আইভরি কোস্টের স্থায়ী প্রতিনিধি সম্প্রতি মারা যাওয়ায় দেশটির পক্ষ থেকে উপ স্থায়ী প্রতিনিধি আসবেন।
উচ্চ পর্যায়ের এই সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক দূত ও বিশিষ্ট কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকৃষ্ট হবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নিরাপত্তা পরিষদের সফরের মধ্য দিয়ে এতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
তিনি বলেন, “আমরা তাদের সঠিকভাবে ব্রিফ করে সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে পারলে নিঃসন্দেহে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সফরের পরবর্তীতেও আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি প্রক্রিয়ায় হুমকি ও আগ্রাসন ঠেকানোয় করণীয় নির্ধারণ করে থাকে। আগ্রাসন প্রতিরোধ বা থামাতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন নিয়ে অর্থনৈতিক অবরোধ বা এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারে। এমনকি সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
এই সফরকে সাম্প্রতিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আখ্যা দিয়ে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সফর একটি বিরল ঘটনা। আমি আমার দীর্ঘ কার্যকালে বাংলাদেশ বা এশিয়ার এই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিষদের সফরের কথা মনে করতে পারি না।
তবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ (ইউএন উইং) সরকারের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকরা দেশে উপস্থিত থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে তারা অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল সামিট অব ইউমেন-২০১৮ তে অংশ নিতে যাচ্ছেন। চার দিনের সফরে আজ বিকেলে তারা সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এই সফর শেষে সোমবার তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সেদিনই সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দলটি মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা হবে।
নজিরবিহীন ও বিরল এই সফরের সময় দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের উপস্থিত না থাকার কথা জানতে পেরে ঢাকার কূটনৈতিক মহলের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের সফরকারী প্রতিনিধি দলটিকে কক্সবাজারে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক তারেক মাহমুদ যিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথে থেকে সংকট ও তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতির ব্যাপারে সম্যক ধারণা দিবেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে তিনি সফরকারী দলটিকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
Comments