পশ্চিমবঙ্গের মরা পশুর মাংস বাংলাদেশেও!
কলকাতাসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই এবার নতুন আতঙ্ক মরা পশুর মাংস। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী হাওড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং বেশ কিছু জেলায় পুলিশি অভিযানে বিপুল পরিমাণ মরা পশুর মাংস উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ১৪ জন অভিযুক্ত।
কলকাতাসহ শহরতলীর নামি-বেনামি হোটেল ও রেস্তোরায় সুস্থ পশুর মাংসের সঙ্গে এইসব মরা ও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা হতো বলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে। বিস্ফোরক তথ্য হচ্ছে, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে এই সব কারবারিরা প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নেপালের অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছেও এই মাংস বিক্রি করত।
দায়িত্বশীল সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করছে, বিষয়টি জানার পরই শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে স্বরাষ্ট্র দফতরের জরুরি এক বৈঠকে সীমান্তবর্তী জেলার সব থানাকে সর্তক করে দেওয়া হয়। যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মরা পশুর মাংসের চালান বাংলাদেশ বা নেপালে না যেতে পারে।
যদিও যোগাযোগ করার পরও কলকাতার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য জানাতে রাজি হননি। এবং নামী হোটেল ও রেস্তোরাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সরকারি সূত্র নিশ্চিত করছে, মরা মাংস কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভীষণ ক্ষুব্ধ। খাদ্যে এই ধরনের ভেজাল রোধে সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
সবজিতে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম রঙ মেশানো, মশলায় আটা মেশানো ছাড়াও প্লাস্টিকের চাল-ডিম গত বছর জুড়েও কলকাতা ও গোটা রাজ্য সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে জায়গা পেয়েছে বার বার।
মরা মাংসের কারবারের এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রথম নজরে আসে বুধবার ২৫ এপ্রিল। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার এলাকার পুলিশ সুপার কটেশ্বর রাও জানিয়েছেন, গোপন সূত্রের খবর পেয়ে ওই জেলার একটি গোডাউন থেকে ২০ টন মরা পশুর মাংস জব্দ করেন এবং এই সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনার নদীয়া জেলার অভিযোগ চালায় পুলিশ। সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ মরা পশুর মাংস উদ্ধার করে এবং আরও ৭ জন গ্রেফতার করা করা হয়।
একেবারে শহরের নাম করা হোটেলে এই ধরনের অনৈতিক কারবারের খবর ফাঁস হওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ চড়কগাছে উঠেছে।
প্রায় তিন কোটি মানুষের শহর কলকাতা। এখানে ছোট-বড় এক লক্ষ্যের বেশি খাবারের দোকান, রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান আছে। কলকাতা কর্পোরেশন, রাজ্য সরকারের খাদ্য দপ্তর, ভিজিল্যান্স টিম এবং পুলিশ এসব জায়গায় অনিয়মের দেখভাল করে। কিন্তু এদের প্রায় প্রত্যেক বিভাগের চোখ ফাকি দিয়ে এই ধরনের একটি ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছিল কয়েক বছর ধরে।
শহরের রেস্তোরাঁয় মরা মাংসের চালানের খবর সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত হওয়ায় গত দুদিন ধরে কলকাতায় খাবারের তালিকা থেকে মাংসের মেনু প্রায় বাদ হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ হোটেলেই রান্না করা মাংস অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দুপুরের খাবারের ডিম কিংবা সবজি দিয়ে সেরে নিচ্ছেন বাইরের কর্মজীবী মানুষ।
কলকাতার সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলের ম্যানেজার প্রকাশ সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, দুদিন ধরে মাংস বিক্রি নেই। যদিও তিনি দাবি করেন, কোনও বাইরের মাংস তারা কেনেন না। জ্যান্ত মুরগি, ছাগল কিনে কেটে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবেই রান্না করে তা বিক্রি করেন তার হোটেল। কিন্তু তা সত্যেও মানুষ আতঙ্কে খাচ্ছেন না।
Comments