আতঙ্কের সীমান্তে শান্তির ছায়া, কিন্তু...

জিপিএস সব সময় সঠিক পথ দেখায় না। সেদিন আমাদেরও দেখাল না। হাইওয়ে ধরে পৌঁছানোর কথা ‘ইমজিনগাক’। জিপিএসের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢুকে গেলাম পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা গ্রামের পথে। ড্রাইভিং সিটে বসা বাংলাদেশি কোরিয়ান এমএন ইসলাম। তাঁকে কিছুটা চিন্তিত মনে হলো। রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে, পাশের সিটে বসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। কারণ যাচ্ছি আতঙ্কের সীমান্তে।

জিপিএস সব সময় সঠিক পথ দেখায় না। সেদিন আমাদেরও দেখাল না। হাইওয়ে ধরে পৌঁছানোর কথা ‘ইমজিনগাক’। জিপিএসের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢুকে গেলাম পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা গ্রামের পথে। ড্রাইভিং সিটে বসা বাংলাদেশি কোরিয়ান এমএন ইসলাম। তাঁকে কিছুটা চিন্তিত মনে হলো। রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে, পাশের সিটে বসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। কারণ যাচ্ছি আতঙ্কের সীমান্তে। সীমান্তে না গিয়ে আতঙ্কের দেশে ঢুকে গেলাম না তো! বলছি দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়া সীমান্তের কথা। এটা ২০১৬ সালের ঘটনা।

সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যতম আতঙ্কের সীমান্ত। সীমান্তের দক্ষিণ কোরিয়ার অংশ ইমজিনগাক যাব। জিপিএস নিয়ে এসেছে গ্রামে। কোন দেশের গ্রাম, দক্ষিণ কোরিয়ার না উত্তর কোরিয়ার? জানি, উত্তর কোরিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও পথ ভুল করে আতঙ্ক কাটছে না। ইউরোপে যেমন সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে ঘুরতে জার্মানিতে ঢুকে গেলে বা ইতালি থেকে অস্ট্রিয়ায় ঢুকে গেলে, বোঝার উপায় থাকে না কোন দেশ। তেমন তো এখানে হওয়ার কথা নয়। তারপরও ভয় কাটে না। কিম জং উনের ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। দক্ষিণ কোরিয়ানরা তো বটেই, সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করে- ভয়ও পায়।

দু’তিনবার জিপিএস পরিবর্তন করে, পানমুনজম’র সামনে দিয়ে পৌঁছলাম ইমজিনগাকে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেখছি উত্তর কোরিয়া, পৃথিবী বিচ্ছিন্ন যেন এক নিষিদ্ধ দেশ।

১৯৫৩ সালের সর্বশেষ কোরিয়া যুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে, টুরিস্ট এলাকা হয়ে উঠেছে ইমজিনগাক। দক্ষিণ কোরিয়ার হাইওয়ে, সোজা চলে গেছে উত্তর কোরিয়ায়। কিন্তু যাতায়াত নেই। ১৯৫৩ সালের যুদ্ধে ক্ষত- বিক্ষত একটি ট্রেন ইঞ্জিন, পর্যটকদের দর্শনীয় বস্তু। দক্ষিণ কোরিয়ার অংশের ট্রেন লাইন, স্টেশন ঠিকই আছে। উত্তর কোরিয়ার অংশের অবস্থা কেমন, কেউ তা জানে না। দক্ষিণ কোরিয়ান-আমেরিকান পতাকা পাশাপাশি উড়ছে, আমেরিকান ঘাঁটির অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়ে।

ইমজিনগাক আসার আগে পথ ভুল করে যে ‘পানমুনজম’ দেখে এলাম, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট একে অপরকে আলিঙ্গন করলেন। সেই ভয়ঙ্কর আতঙ্কের সীমান্তে এখন শান্তির বাতাস।

উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে লাগোয়া দক্ষিণ কোরিয়ার ইমজিনগাক। ছবি: স্টার

২.

এ বছর আবার দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলাম গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সিউল থেকে সোজা পিয়ংচ্যাং। সিউল থেকে দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। দ্রুত গতির ট্রেনে সময় লাগে সোয়া ঘণ্টার মতো। উইন্টার অলিম্পিক উপলক্ষে যাওয়া। ড. ইউনূস ছিলেন উইন্টার অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি।

আমাদের গাড়ির চালক উন মি। ৩২ বছরের যুবক।

পিয়ংচ্যাং থেকে উত্তর কোরিয়া সীমান্ত কত দূর?

উন মি বললেন, ‘৯০ কিলোমিটার হবে হয়ত। পরে আরেকজন বললেন ৬০ কিলোমিটার।’

উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গ আসতেই উন মি নিজের থেকে বললেন, ‘উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বোন এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়।’

খুব আনন্দিত উন মি। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের প্রায় পুরোটা জুড়ে কিমের বোনের খবর। রোবটের মত শক্ত হয়ে হাসছেন কিমের বোন, সেই ছবি পত্রিকায় প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে- টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। উইন্টার অলিম্পিকের মূল আসরের চেয়ে কিমের বোন হয়ে উঠেছেন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। কবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করবেন, কোথায় যাবেন, কী খাচ্ছেন, কী খাবেন- সব ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়।

তোমাকে খুব খুশি মনে হচ্ছে?

‘হ্যাঁ, আমরা তো চাই দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি ফিরে আসুক। বিরোধ থাকায় তো সবারই ক্ষতি’- বললেন উন মি।

ক্ষতি কেন?

‘কোরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি থাকার তো কোনো দরকার নেই। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে আমেরিকান ঘাঁটির পেছনে। আমেরিকাই তো বিরোধ টিকিয়ে রেখেছে। কখন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে, সব দক্ষিণ কোরিয়ানরা এই আতঙ্কে দিন কাটান।’

সব দক্ষিণ কোরিয়ানই কি চান বিরোধ মিটে যাক?

‘আমরা তরুণরা চাই, বাবা-চাচারা মানে পুরনোরা সবাই চান না। তারা উত্তর কোরিয়াকে সহ্য করতে পারেন না। ১৯৫৩ সালের যুদ্ধ তাদের মনে ঘৃণা জন্ম দিয়েছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ায় আমেরিকার বিশাল সামরিক ঘাঁটি। ৩ হাজার ৪৫৪ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই সামরিক ঘাঁটি। ৪৫ হাজার সৈন্য ও তাঁদের পরিবার থাকে সেখানে। নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১১০০ কোটি ডলার। সব খরচ দক্ষিণ কোরিয়াকে বহন করতে হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাজেটও বিশাল, ৩৯.২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের মধ্যে ব্যয়ের দিক দিয়ে দশম। আবার আমেরিকার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এ নিয়ে কোরিয়ান তরুণরা ক্ষিপ্ত। সিউলের পাশে ঘাঁটি থেকে রাত-দিন হেলিকপ্টার উড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। উন মি ক্ষিপ্ততার সঙ্গে বললেন, ‘কোরিয়ায় কিছু নাইট ক্লাবে আছে, সেগুলোতে আমেরিকান সেনারা যায়। সেখানে কোরিয়ান মেয়েরা যেতে পারে, ছেলেরা যেতে পারে না।’

এই রাস্তাটি সোজা চলে গেছে উত্তর কোরিয়ায়। ছবিটি দক্ষিণ কোরিয়ার অংশ থেকে তোলা। ছবি: স্টার

কী ভাবছেন উত্তর কোরিয়ানরা?

দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে দাঁড়িয়ে দূর থেকে উত্তর কোরিয়া দেখা যায়। মানুষের ভাবনা জানা যায় না, বোঝা যায় না। কেমন আছেন উত্তর কোরিয়ানরা, জানা যায় না। বিশ্ব গণমাধ্যম যে করুণ চিত্র জানায়, তার উপর নির্ভর করা যায় না। এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে সীমান্তে লাউড স্পিকার লাগিয়ে বিকট শব্দে প্রচারণা চালায়। বিশ্ব গণমাধ্যম যেসব সংবাদ নানা রং লাগিয়ে জানায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের একটা বড় অংশের মনে বিশ্বাস তৈরি হয়ে আছে যে কোনো সময় উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করবে। অর্থনীতি-সামরিক দুদিক দিয়েই শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বিশ্বাস করে আমেরিকা তাদের রক্ষা করবে। আমেরিকা বিষয়ে নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দুই মতই প্রায় সমানভাবে বিদ্যমান। তরুণরা আমেরিকান ঘাঁটি থাকার বিরোধী, বয়স্করা অনেকে আমেরিকার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

এমন একটা অবস্থায় দুই কোরিয়া কাছে আসার নীতি দৃশ্যমান করেছে। সীমান্তে লাউড স্পিকারে পরস্পরের প্রতি বিষোদগার বন্ধ হয়েছে।

৩.

২০১৬ সাল। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ফুজি পর্বতের লেকের পাশে দাঁড়িয়ে জাপানি যুবক কারাওকা বলছিলেন, ‘ফুজি থেকে অগ্নুৎপাত শুরু হলে পুরো টোকিও শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যাতে টোকিওর সব মানুষকে সরিয়ে নেওয়া যায়, সব সময় জাপান সরকারের সেই প্রস্তুতি থাকে। তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প নিয়েও জাপানিরা আতঙ্কে থাকেন না। ভূমিকম্প থেকে বাঁচার প্রযুক্তি তারা করায়ত্ত করেছেন। ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প প্রবণ জাপান মাটির উপরে স্তরে স্তরে পাঁচ সাত তলা সমান ফ্লাইওভার, ট্রেন লাইন এবং মাটির নিচে আট দশ তলা পর্যন্ত মেট্রো রেল নির্মাণ করেছে। ফুজির অগ্নুৎপাত বা ভূমিকম্প নিয়ে জাপানিরা আতঙ্কিত নয়। বাঁচার উপায় তারা জানে।

তারা চিন্তিত উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ানদের মতো জাপানিরাও বিশ্বাস করেন, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে। উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র মারলে জাপান সময় পাবে কয়েক মিনিট। হিরোশিমা, নাগাসাকির পারমানবিক বোমার আতঙ্ক তাদের এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সেই জাপানিরা সারাক্ষণ উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়ে থাকেন। তারা জানেন, উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করতে হবে।

জাপান তা পারবে না।

অর্থনৈতিকভাবে এত সমৃদ্ধ জাপান, যারা সামরিক শক্তির পেছনে বছরে খরচ করে ৪৫.৪ বিলিয়ন ডলার। ব্যয়ের হিসাবে পৃথিবীতে অষ্টম। সেই দেশের জনগণের দিন কাটে উত্তর কোরিয়ার আতঙ্কে। সত্তর আশির দশকে জাপানিদের অপহরণ করে উত্তর কোরিয়া ভীতিকর পরিবেশ টিকিয়ে রেখেছে।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে তাঁদের বাঁচার জন্যে নির্ভর করতে হবে আমেরিকার উপর।

জাপানের হয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের কাজটি করে দেবে আমেরিকা। জাপানে যে আমেরিকান ঘাঁটি আছে, তাঁরাই রক্ষা করবে জাপানকে। প্রায় ৪৭ হাজার আমেরিকান সৈন্য আছে জাপানে।

দক্ষিণ কোরিয়ানদের মতো জাপানিরাও দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ মনে করে আমেরিকান সৈন্যরা তাঁদের রক্ষা করবে। জাপানে আমেরিকান ঘাঁটি দরকার আছে। আরেকভাগ তীব্রভাবে আমেরিকান ঘাঁটির বিরুদ্ধে। তাঁরা মনে করেন, জাপান সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে আমেরিকান ঘাঁটির পেছনে। যার কোনো দরকার নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকান ঘাঁটির বিরুদ্ধে জনমত তীব্র হচ্ছে। যদিও জাপানি তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। তাঁরা পড়তে-বেড়াতে আমেরিকায় যেতে চায়, যায়। খাওয়া-পোশাকেও পছন্দ আমেরিকান স্টাইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত তাদের মনের কোনো স্থানেই আছে বলে মনে হয় না।

কোরিয়া যুদ্ধের স্মৃতি ধারন করে আছে এই রেল ইঞ্জিনটি। এই রেল লাইনটি চলে গেছে উত্তর কোরিয়ার দিকে। ছবি: স্টার

কোরিয়ানদের মনে হৃদয়ে জাপানিদের দ্বারা নির্যাতনের ক্ষত রয়ে গেছে। আবার জাপানের উন্নয়ন মডেল তাঁরা হুবহু গ্রহণ করেছে।

পুরো কোরিয়া দেশটা যেন জাপানের ফটোকপি। রুচি- চাকচিক্যে জাপান এখনও এগিয়ে।

কোরিয়ার রাস্তা-ব্রিজ-ফ্লাইওভার-ট্রেন সবই হুবহু জাপানের মতো। জাপানিজ উন্নয়নের মডেল দক্ষিণ কোরিয়া যোগ্যতা-দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। গাড়ির ক্ষেত্রেও তারা জাপানিদের নীতি অনুসরণ করে সফল হয়েছে।

৪.

অর্থনৈতিক সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেও জাপানি ও কোরিয়ানরা আতঙ্কিত দিন কাটায়। উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে যে আতঙ্ক,সেখানে শান্তির যে পরিবেশ দৃশ্যমান হয়েছে, বৈরিতা বা শত্রুতা কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে, তা আসলে কতটা স্থায়ী হবে? কতদূর যাবে? ১৮ বছরের নেপথ্য চেষ্টার ফসল, দুই প্রেসিডেন্টের পানমুনজম সীমান্তে মিলন। এই মিলন প্রক্রিয়া স্থায়ী বা এগিয়ে নেওয়া যে শুধু দুই কোরিয়ার উপর নির্ভর করছে না, তা কম-বেশি সবারই জানা। এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া। আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু চীন। চীনের আশীর্বাদ বা সমর্থনে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া। অর্জন করেছে পারমানবিক সক্ষমতা। চীনের কারণে রাশিয়ার অবস্থান পুরোপুরিভাবে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে। চীনের সঙ্গে দ্বীপ নিয়ে জাপানের বিরোধ প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষার নামে চীন সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো চব্বিশ ঘণ্টা তৎপর। মার্কিন প্রভাব ধরে রাখার জন্যে যা অপরিহার্য। যার বিপুল ব্যয়ের পুরোটা বহন করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া।

দুই কোরিয়া এক যদি নাও হয়, শত্রুতার পরিবর্তে মিত্রতা যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, দক্ষিণ কোরিয়ানদের মন থেকে উত্তর কোরিয়া ভীতি কেটে যাবে। উত্তর কোরিয়া ভীতি থাকবে না জাপানিদের মনেও। মার্কিন ঘাঁটি থাকা নিয়ে জাপানে গত কয়েক বছর ধরে বিক্ষোভ চলছে। তা আরও তীব্র হবে। তখন দক্ষিণ কোরিয়াতেও মার্কিন ঘাঁটি থাকার প্রয়োজন থাকবে না।সরকার চাইলেও, কোরিয়ানরাও ঘাঁটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীনের সীমান্ত আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি, উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক বোমার সক্ষমতা, কোরিয়া হয়ে উঠবে অপ্রতিরোধ্য শক্তিশালী রাষ্ট্র। যা আবার জাপানের জন্যে স্বস্তিদায়ক হবে না।

চীন তার প্রভাব ধরে রাখতে চাইবে সর্বশক্তি দিয়ে। রাশিয়া তো চীনের পাশে আছেই। আমেরিকা কোনোভাবেই চাইবে না এক বা বন্ধুত্বপূর্ণ দুই কোরিয়ার উপর তার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাক। তাহলে পুরো অঞ্চলে আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ হারাবে। একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে চীনের, সঙ্গে রাশিয়ারও।

কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক কতটা সফল হবে, কেমন প্রকৃতির হবে- তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশ্লেষণে - কোনো বিবেচনাতেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। আমেরিকা-চীন-রাশিয়ার নেপথ্যের কৌশল কী, কে কীভাবে স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে, কে কতটা ছাড় দেবে- তার প্রায় সম্পূর্ণটা অস্পষ্ট।

যা দেখা যায়, তা সব সময় সত্যি হয় না। এখানে সন্দেহ আছে, আছে গভীর রহস্য। নোবেলের গল্পও আছে, একটি চুক্তির সম্ভাবনা আছে। শান্তি? প্রত্যাশা আছে, ‘যদি’ ‘কিন্তু’...আছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকা বলেছে,উত্তর কোরিয়াকে অবিলম্বে সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প থেকে পুরোপুরিভাবে উত্তর কোরিয়া সরে না আসলে অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া হবে না। ট্রাম্প- কিম আলোচনার আগে এই শর্ত যদি কঠিনভাবে সামনে আনা হয়, আশাবাদের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করানোই যদি আমেরিকার প্রধান কৌশল হয়, সাফল্যের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

দুই কোরিয়া ইস্যুতে পরাশক্তিগুলোর অবস্থান দৃশ্যমানভাবে যা মনে হচ্ছে, তাদের মনের চাওয়াটাও তেমনই কিনা- সময় ছাড়া এই প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব না।

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago