চলন বিলে পানির নিচে বোরো ধান
চলন বিলের বোরো ধান চাষের সময়সূচি সারা দেশের থেকে একটু ভিন্ন। ফসল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা মাথায় রেখে এখানে আগেভাগেই বোরো রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ করতে হয়। কিন্তু এ বছর খেত থেকে পরিকল্পমতো ধান ঘরে তুলতে পারেনি কৃষকরা।
গত বছরের অতি বর্ষণের কারণে জমি থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় দেরিতে বোরো রোপণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকেই। এখন বৃষ্টিতে পাকা ধান তলিয়ে গিয়ে এর মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম এই জলাভূমির বোরো চাষিদের।
এক সপ্তাহ আগেও চলন বিলে বাতাসে দোল খাচ্ছিল বোরো ধানের বিস্তীর্ণ খেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঝড় বৃষ্টিতে কৃষকদের নতুন ধানের স্বপ্ন এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। ঝড়ে অনেক জমির ধান পড়ে গেছে। অনেক এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে ধানগাছ।
শুধু চলন বিল এলাকাতেই নয় দেশের বেশ কিছু এলাকাতেই কৃষকদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবছরের আগাম ঝড়-বৃষ্টি। সারা দেশে ৩ দশমিক ৪৭ কোটি টন বোরো ধানের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই উৎপাদিত হয় এসব জেলায়।
চলন বিল এলাকার এক কৃষক হোসেন আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর ৩ দশমিক ৬৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তিনি। মৌসুমের শুরুতেই অতি বৃষ্টিতে তার জমির ধান ডুবে গেছে। তিনি বলছিলেন, আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার জমি থেকে ধান ঘরে তোলার উপযোগী হয়ে যেত। কিন্তু এক দিনের বৃষ্টিতেই তার ধান এখন পানির নিচে। গত রবিবার তিনি ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু ডুবে যাওয়া ধান কাটতে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে তাকে।
হতাশ হয়ে হোসেন বলেন, ‘আমার আশা ছিল এবছর ৩০ মণের মত ধান পাবো। কিন্তু যা আশা করেছিলাম তার মাত্র অর্ধেক পেয়েছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভালো দামের আশায় সারাদেশে এবছর ৪৯ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর বোরো চাষ হয়েছিল ৪৪ দশমিক ৭৬ লাখ হেক্টর জমিতে।
বোরো ধানের কাটা মাড়াইয়ের কাজ সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। কিন্তু ধান কাটার ভরা মৌসুমে ঘন ঘন ঝড় বৃষ্টিতে এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ৭ মে পর্যন্ত ৪২ শতাংশ জমিতে বোরো তোলার কাজ শেষ হয়েছে। আর দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে হাওর এলাকায় এই কাজ শেষ হয়েছে ৯১ শতাংশ।
দেশের মোট বোরো উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ হয় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে । এই দুই বিভাগে মাত্র ২০ শতাংশ জমি থেকে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। জমিতে ধান পেকে থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফসল তুলতে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা।
Comments