নির্বাচন কমিশন এমন কেন

​সংবিধান যে প্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে বেশি এবং সুনির্দিষ্ট করে ক্ষমতায়ন করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের আচরণ- ইমেজ এমন হবে কেন? বলছি নির্বাচন কমিশনের কথা। প্রায় প্রতিটি নির্বাচন কমিশন নিয়ে যেন একই কথা লিখতে হয়।
 সিটি করপোরেশন নির্বাচন
ফাইল ছবি

সংবিধান যে প্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে বেশি এবং সুনির্দিষ্ট করে ক্ষমতায়ন করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের আচরণ- ইমেজ এমন হবে কেন? বলছি নির্বাচন কমিশনের কথা। প্রায় প্রতিটি নির্বাচন কমিশন নিয়ে যেন একই কথা লিখতে হয়।

ব্যতিক্রম আছে। শামসুল হুদা কমিশন, তার আগে আবু হেনা কমিশন বা এম এ সাঈদ কমিশন একটা ইতিবাচক ইমেজ রেখে গেছেন। নির্বাচন কমিশনের একটা হাস্যকর ইমেজ তৈরি হয়েছিল বিচারপতি আজিজ কমিশনের সময়। গত রকিবুল হুদা কমিশন দুর্বলতার চূড়ান্ত উদাহরণ তৈরি করে গেছেন। বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন কথা এবং কাজে কোনোভাবেই যেন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। নির্বাচন কমিশনে যখন যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তাদের নিয়ে মেরুদণ্ড থাকা বা না থাকা বিষয়ক আলোচনা জোরালো হয়ে ওঠে। এখন আবার তেমন আলোচনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। নির্বাচন কমিশনাররা কথা এবং কাজ দিয়ে দেশের মানুষকে আশার পরিবর্তে হতাশা তৈরি করছেন। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরের দিন সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রাখলেন, সে বিষয়ে কিছু কথা।

 

১. ‘আমরা রিট বিষয়ে হিয়ারিংয়ের আগে জানতাম না। হিয়ারিং হওয়ার পরে জেনেছি’- নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের এই বক্তব্য সত্য ধরে নিয়ে বলছি,তাহলে,সংবিধানের ১২৫(গ) অনুচ্ছেদ নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিল, তার কী হবে বা হলো?

সংবিধান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, ‘কোন আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এইরূপ কোন নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসংগত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনরূপে কোন আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না।’

সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে তার যদি ব্যতিক্রম হয়, করণীয় কী? কিছু কী করণীয় আছে নির্বাচন কমিশনের?

আদালত যে রায় বা নির্দেশনা দেবেন, তা ব্যক্তি- প্রতিষ্ঠান সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে। আবার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি মনে করেন, রায় বা নির্দেশনার মধ্য দিয়ে আইনগত ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, আদালতের কাছেই প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে। বিশেষ করে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হলে তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিকার চাওয়ার অধিকার আছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী আদালতের কাছে গিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন।জনস্বার্থ সর্বোচ্চ বিবেচনায় রেখেই অ্যাটর্নি জেনারেলকে, বাংলাদেশের যে কোনো আদালতে গিয়ে প্রতিকার চাওয়ার অধিকার বা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।এই অধিকার প্রয়োগ করার জন্যে ‘রায় বা নির্দেশনা’র লিখিত কপি পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করা, অপরিহার্য বা নিয়ম নয়।অ্যাটর্নি জেনারেলরা সব সময়ই সেই ক্ষমতা বা অধিকার প্রয়োগ করেন। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলও অনেকবার তা করেছেন।

এক্ষেত্রে আবার উল্লেখ করা দরকার মনে করছি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও বিষয়।সেই বিবেচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধানের আলোকে আদালতের কাছে তাৎক্ষনিকভাবে যেতে পারতেন, যেতে পারেন।

এক্ষেত্র তা করা হচ্ছে না, যা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

২. ‘আগে জানতাম না’ ‘ওকালতনামা দেওয়ার সুযোগ ছিল না’ ‘অফিসিয়ালি আদেশ পাইনি’- কথাগুলো নির্বাচন কমিশনের জন্যে সম্মানজনক নয়, লজ্জাজনক। দেশের মানুষের যে অধিকার সংরক্ষণের ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে, তারা তা রক্ষা করছেন না বা পারছেন না।’লিখত নির্দেশনা’ পাওয়ার আগে নির্বাচন স্থগিত করতে তাদের সমস্যা হয়নি। নিজেরা সরাসরি শোনেনও নি আদালত তাদের কী করতে বলেছেন, গণমাধ্যম থেকে দেখে- শুনেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।কাজটি করেছেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। প্রমাণ হয়েছে, ইচ্ছে করলে তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষেত্রে যা করছেন, প্রতিকার চাওয়ার ক্ষেত্রে তা করছেন না।স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনের দুই দিন সময় লাগলো।

জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে তারা তাৎক্ষনিকভাবে আদালতে না গিয়ে, সময় ক্ষেপণ করছেন। যা ইতিপূর্বে আরও একবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে করেছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের একটি আইনজীবী প্যানেল আছে।অথচ নির্বাচনের আগে সেই আইনজীবীদের সতর্ক রাখা হয়নি।রিট বিষয়ে জানার পরে নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত থাকার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে।জনগণ তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, এর নাম আর যাইহোক ‘দায়িত্ব পালন’ নয়।

মনে রাখতে হবে দায়িত্ব পালন করার জন্যে জনগণ তাদের, সামাজিক সম্মান এবং আর্থিক সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। জনগণের দেওয়া সব সুযোগ- সুবিধা নিয়ে যদি জনগণের পক্ষে দায়িত্ব পালন না করেন বা করতে না পারেন, পদে থাকা না থাকা বিষয়ক নীতি- নৈতিকতার প্রশ্ন সামনে চলে আসে।এখানে সবচেয়ে বড় নৈতিকতার প্রশ্ন, পদে থেকে নির্বাচন কমিশনাররা জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারছেন না। তারচেয়েও বড় বিষয়, জনগণের অধিকার বিষয়ে কথাও বলছেন না।

Comments