বিশ্বকাপের কলঙ্ক ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’

ভাবতেও অবাক লাগে কোনও একজন খেলোয়াড় উড়ে এসে রীতিমতো ফ্লাইং কিক মারেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে। ফাউল হওয়ার পরও লাথি মারতে থাকেন। আহত খেলোয়াড় আবার উঠে উল্টো ঘুষিও মারেন। হাতাহাতি-মারামারি হয় পুরো ম্যাচের স্বাভাবিক চিত্র। বহিষ্কার করলেও মাঠ ছাড়তে নারাজ খেলোয়াড়রা। পুলিশের সাহায্য নিয়েই তাদের বের করতে হয়।
Battle of Santiago
১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি ইতালি ও স্বাগতিক চিলি। তাদের সেই খেলাটি ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’ হিসেবে কুখ্যাতি পায়। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

ভাবতেও অবাক লাগে কোনও একজন খেলোয়াড় উড়ে এসে রীতিমতো ফ্লাইং কিক মারেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে। ফাউল হওয়ার পরও লাথি মারতে থাকেন। আহত খেলোয়াড় আবার উঠে উল্টো ঘুষিও মারেন। হাতাহাতি-মারামারি হয়ে যায় পুরো ম্যাচের স্বাভাবিক চিত্র। বহিষ্কার করলেও মাঠ ছাড়তে নারাজ খেলোয়াড়রা। পুলিশের সাহায্য নিয়েই তাদের বের করতে হয়।

আবার এতো ঘটনার পর ম্যাচ শেষ হয় সমান ৯০ মিনিটে। যেখানে মাঠের মাঝেই প্রায় অর্ধেক সময় থাকতে হয়েছে পুলিশকে। মাঠ যেন রণক্ষেত্র। এতো এতো ঘটনার জন্ম দেওয়া ম্যাচটি বিশ্বকাপের কলঙ্ক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্যাটল অব সান্তিয়াগো’।

১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয় ইতালি ও স্বাগতিক চিলি। ভূমিকম্পে অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়া দেশের জন্য বিশ্বকাপ উপহার দিতে চেয়েছিল চিলির খেলোয়াড়রা। তাই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই তারা বেশ আগ্রাসী। আর তাদের ঠেকাতে আগ্রাসনটা যেন বাড়িয়ে দেন ইতালীয়রা। ফলে ম্যাচের শুরু থেকেই চলে শরীরী লড়াই।

ম্যাচের ১২ সেকেন্ডেই প্রথম ফাউল। লাথি-পাল্টা লাথি তো চলছিলোই। এক পর্যায়ে শুরু হয় ঘুষি। ম্যাচের ১২ মিনিটে চিলির হনোরিনো লান্ডাকে লাথি মারলে ইতালির জর্জিও ফেরারিকে বহিষ্কার করেন রেফারি কেন এস্টন। ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ায় শুরুতে বুঝতে পারেননি ফেরারি। পরবর্তীতে হাতের ইশারায় যখন বুঝলেন উল্টো খেপে যান তিনি। মাঠ থেকে বের হবেন না বলেই সাফ জানিয়ে দেন। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাকে মাঠ থেকে বের করতে সময় লাগে ১০ মিনিট।

আর এ ঘটনা যখন হয় তখন আরেক প্রান্তে ইতালির অধিনায়ক মাশ্চিওর নাকে ঘুষি মারেন চিলির লিওনেল সানচেজ, যার বাবা ছিলেন পেশাদার বক্সার। ঘটনাটি এড়িয়ে যায় রেফারির। তাতে উত্তেজনা বাড়ে। প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন ইতালীয়রা। ম্যাচের ৪২ মিনিটে সানচেজকে ফাউল করেন মারিও ডেভিড। উঠে ডেভিডকে ঘুষি দেন সানচেজ। তাতে রেফারি শুধু ফাউলের সিদ্ধান্ত দিলে ক্ষেপে যায় ইতালির খেলোয়াড়রা।

মাঠে তখন যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার নামতে হয় পুলিশকে। খেলা শুরু হলেও ঘটনা ভুলে যাননি ডেভিড। কিছুক্ষণ পর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগও পেয়ে যান। হওয়ায় ভাসানো বলে হেড দিতে গেলে তার মাথায় লাথি মারেন ডেভিড। রীতিমতো ফ্লাইং কিক দিয়ে। এবার ডেভিডকে বহিষ্কার করেন রেফারি। আবারো প্রয়োজন হয় পুলিশের হস্তক্ষেপের।

শেষ পর্যন্ত ১১ জনের চিলির বিপক্ষে খেলতে হয় ৯ জনের ইতালিকে। প্রায় ৭২ মিনিট পর্যন্ত রক্ষণ আগলে রেখেছিলো তারা। কিন্তু এরপর আর পেরে ওঠেনি। ঠিক ৭৩ মিনিটে জেমি রামিরেজের হেডে এগিয়ে যায় চিলি। এরপর ৮৭ মিনিটে দূরপাল্লার শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জর্জ তোরো। ম্যাচের ভয়াবহতা এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিলো যে ৯০ মিনিট হওয়ার পর শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। অতিরিক্ত কোনও সময় না দেওয়াতেও ক্ষোভ ঝাড়েন ইতালীয়রা।

ইতালীয়দের দাবি পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন রেফারি এস্টন। আর চিলিকে ‘ক্যানিবাল’ নামে আখ্যায়িত করেন তারা। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে এ ম্যাচের স্মৃতিচারণ করে এস্টন বলেছিলেন, ‘আমি কোনও ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করছিলাম না; আমি যেন মিলিটারি অপারেশনে দায়িত্ব পালন করছিলাম।’

এস্টনের কথা মিথ্যে ছিল না। কারণ ঘটনা তখনও শেষ হয়নি। চিলিতে সেবার বাজার, বার, রেস্তোরাঁ সব জায়গায় নিষিদ্ধ করা হয় ইতালীয়দের। ম্যাচেতো বটেই, এমনকি অনুশীলনের সময়ও পুলিশি পাহারায় থাকতে হয় তাদের। আর ইতালিতেও চিলির দূতাবাস রক্ষার্থে মোতায়েন করতে হয় সেনাবাহিনী।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago