আমির খান: বলিউডের ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’

Aamir Khan
বলিউড সুপারস্টার আমির খান। ছবি: সংগৃহীত

ধনকপুর গ্রাম। ধনরাজ সিং। তাঁর ছেলে রাজ- ত্রিশ বছর আগের কথা। মুম্বাইয়ের মাটিতে তৈরি হলো এক নতুন গল্প। আর বলিউডের আকাশে আচমকা আবির্ভাব হলো এক নতুন নক্ষত্রের। ধীরে ধীরে সেই নক্ষত্রের আলো মুম্বাই ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মহাদেশেও।

সেই নক্ষত্রের নাম আমির খান। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে পরিচালক মনসুর খানের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডের মূলধারার চলচ্চিত্রে নিজের আবির্ভাব ঘটান আমির। এরপর আর মুম্বাইয়ের গণপরিবহনে উঠতে পারেননি তিনি। তারকা-খ্যাতির সেই ত্রিশ বছর পূর্তিতে বলিউডের আজকের দিনের মহাতারকাকে মুখোমুখি হতে হয়েছিলো ভারতীয় গণমাধ্যমের।

সম্প্রতি, মুম্বাইয়ে এই সাক্ষাৎকারে আমির বলেন, “যখন আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এলাম, তখন নতুন- বালক। একা একা ঘুরে বেড়াই। চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছবি করবো এমন বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু, কেউই যেন আমার বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না।”

এরপর, অনেক দূর গড়িয়েছে কাবেরি নদীর জল। আরব সাগরের অনেক ঢেউ আছড়ে পড়েছে পশ্চিমঘাটে। চলার পথে তবুও যেন একবার পেছনে ফিরে তাকাতে হয় সবাইকে!

তাই, যখন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক বলিউডপ্রেমীদের অন্তরে স্থায়ী আসন লাভ করে; পরে, ‘যো জিতা ওহি সিকান্দর’, ‘বাজি’, ‘আর্থ’, ‘সারফারোশ’, ‘লগন’ এবং ‘দঙ্গল’ আমিরকে নিয়ে যায় নতুন উচ্চতায়, তখনও আমিরের মনের গভীরে থেকে যায় সেই শুরুর দিনের বেদনাবোধ। বলেন, “তারকাখ্যাতির পথটি মোটেও সহজ ছিলো না।”

তাঁর মন্তব্য, “আমি যে ধরণের চলচ্চিত্রে বিশ্বাস করি তা করতে প্রতিনিয়ত স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে হচ্ছে। তবে সময় বদলে গেছে। সেদিন আমি যে রকমের চলচ্চিত্রে বিশ্বাস করতাম এবং যা তখন কেউই করতে চাইতেন না, এখন সেগুলোই যেন মূলধারার চলচ্চিত্র হয়ে উঠছে।”

কেমন চলচ্চিত্র আমিরের পছন্দ, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, “সিনেমা এমন হতে হবে যা আমাকে চমকে দেয়, আমাকে বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে নেয়। সেই সিনেমাটি বাণিজ্যিক কিনা তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। সিনেময়া কোনো বিশেষ বার্তা থাকলো কি থাকলো না- তা নিয়েও আমি ভাবতে চাই না। আমি মনে করি, আমার সিনেমা ভালো হতে হবে। এবং যত বেশি সম্ভব মানুষকে তা আনন্দ দিবে।”

চলচ্চিত্র নিয়ে আমিরের দর্শন যাই থাক না কেনো, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এ আকস্মিক সফলতা পেয়ে থমকে যান আমির। বুঝতে পারেন, শহরের গণপরিবহনে উঠার দিন শেষ হয়ে গেছে। অথচ, পকেট ফাঁকা!

সেসব দিনের কথা স্মরণ করে ভারতীয় চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেতা বলেন, “ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর আমি জনপ্রিয় হয়ে উঠলাম। কিন্তু যেন পাগল হওয়ার দশা! আমি একটি সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি অথচ গাড়ি কেনার টাকা নেই।”

“তখন আমি বাস, ট্রেন বা অটোরিকশায় চলাফেরা করতাম। কিন্তু, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ মুক্তি পাওয়ার পর তা আর পারছিলাম না। তাই চাচার কাছে গাড়ি ধার চাইতাম!”

আমিরের সেই দিনও আর নেই। তবে রয়ে গেছে সেই পুরনো দিনের একাকীত্ববোধ। ভারতীয় চলচ্চিত্রে নতুন মাত্রা দেওয়া সেই অভিনেতা অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে আজো যেন রয়ে গেলেন এক ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’। তাই ত্রিশ বছর পর বলিউডে তাঁর ‘নিঃসঙ্গতার’ কথাই গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরলেন ‘ধনকপুর গ্রামের ধনরাজ সিংয়ের ছেলে রাজ’!

Comments

The Daily Star  | English

Lives on hold: Workers await reopening of closed jute mills

Five years on: Jute mill revival uneven, workers face deepening poverty

14h ago