‘কারা লুটপাট করেছে, কীভাবে করেছে, অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করতে চান না’

​ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্যের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
finance minister ama muhith
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। স্টার ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্যের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

গতকাল রোববার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাতজন সাংসদ আলোচনায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছয় জনই ব্যাংক খাতে লুটপাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ব্যাংকিং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান, সরকারি দলের সদস্য আলী আশরাফ, স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজি বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশীদ ব্যাংক খাতে লুটতরাজকে গজনীর সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির লুটের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, সোমনাথ মন্দিরের পর আর এত বড় লুট হয়নি।

বাজেট ঘোষণার আগে ব্যাংক সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনা তৈরি হওয়ার পরও এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর নীরবতার সমালোচনা করেন পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন গঠিত হলে কারা লুটপাট করেছে, কীভাবে করেছে, সব বেরিয়ে আসত। নিশ্চয় অর্থমন্ত্রী এটা প্রকাশ করতে চান না।

আর আলী আশরাফ ব্যাংক লুটপাটকারীদের কঠোর সাজা ও সুশাসন নিশ্চিত করে জনগণের আস্থা ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।

আরও পড়ুন: সুখেই আছে বেসিক ব্যাংক লুণ্ঠনকারীরা

বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে নিজের একটানা দশম বারের বাজেটে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ নানা আশার বানী শোনালেও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে পুরোপুরি নীরব ছিলেন। কানাডা সফরে যাওয়া সংসদ নেতার অনুপস্থিতিতে এই সমালোচনার পর গতকালও একইভাবে নীরব থাকতে দেখা যায় অর্থমন্ত্রীকে।

আলী আশরাফ বলেন, ব্যাংকিং খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না হলে আর্থিক খাত ভেঙে পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে না। তিনি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ব্যাংক, বিমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করেন স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজি। তিনি বলেন, আবার ব্যাংক মালিকদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এক পরিবার থেকে চারজনকে ব্যাংকের পরিচালক করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আবার তাদের কর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চললে ব্যাংক বলতে কিছু থাকবে না।

রুস্তম আলী ফরাজী আগামী সরকারের জন্য না রেখে অর্থমন্ত্রীকেই ব্যাংক খাতে সংস্কার আনার জন্য কমিশন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে নিরাপত্তার জন্য কিন্তু এখন মানুষ ভীত হয়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ২-৩ বছর ধরে বারবার ব্যাংক লুট নিয়ে তারা কথা বলে যাচ্ছেন। লুটকারীরা টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মানুষের করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ করে যাচ্ছেন।

গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতি ধরা পড়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঋণের নামে এই ব্যাংকগুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সরবরাহের সরকারি নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago