কেন অমন উদযাপন শাকিরি-শাকার?
গতকাল রাতে সুইজারল্যান্ড-সার্বিয়া ম্যাচ যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই সুইজারল্যান্ডের দুই গোলের পরে উদযাপনটাও দেখেছেন। দুই গোলদাতা গ্রানিথ শাকা ও জেরদান শাকিরি, দুজনেই গোলের পর একই রকম উদযাপন করেছেন। দুই হাত বুকের কাছে এনে ঈগল পাখির মতো অঙ্গভঙ্গি করেছেন দুজনেই। কিন্তু কেন এমন উদযাপন দুজনের?
শাকিরি-শাকার এমন উদযাপনের পেছনে আসলে জড়িয়ে আছে রাজনীতি। শাকা এবং শাকিরি দুজনেই হাত দিয়ে যে ঈগল দেখিয়েছেন, সেটি আসলে আলবেনিয়ার পতাকার একটি অংশ। শাকা ও শাকিরি, দুজনেরই জন্মস্থান কসোভো, যেটি কি না আগে আলবেনিয়ার অংশ ছিল। ১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে সার্বিয়ার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যুদ্ধ করে তারা। অবশেষে ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে কসোভো, তবে স্বাধীন দেশ হিসেবে কসোভোকে এখন স্বীকৃতি দেয়নি সার্বিয়া।
এমন উদযাপনের মাধ্যমে তাই সার্বিয়াকে কোন বার্তা দিতে চেয়েছেন কি না, ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিরি খোলাখুলি কিছু বলতে না চাইলেও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, উদযাপনটা তাঁর আবেগের সাথে ভীষণভাবে জড়িত, ‘আমি এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। ফুটবলের সাথে আবেগ সবসময়ই জড়িত। আমারও আবেগ আছে। আমি কী করেছি সেটা তো আপনারা নিজ চোখেই দেখেছেন।’
শুধু তাই নয়, ম্যাচে শাকিরি খেলতে নেমেছিলেন এক পায়ে সুইজারল্যান্ড ও আরেক পায়ে কসোভোর পতাকা সম্বলিত বুট পরে! সার্বিয়াকে যে বার্তা দিতেই মাঠে নেমেছিলেন তিনি, সেটা এক প্রকার পরিষ্কারই বলা যায়।
আরেক গোলদাতা গ্রানিথ শাকার আদি নিবাসও ওই কসোভো। ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে সমতায় ফেরানো গোলটি এসেছে এই আর্সেনাল মিডফিল্ডারের কাছ থেকেই। তিনিও ঠিক একই রকমের উদযাপন করেছেন গোলের পর। সার্বিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় গত শতাব্দীর আশির দশকে জেল খাটতে হয়েছিল শাকার বাবাকে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই শাকার অমন উদযাপন।
তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্যের এমন আচরণে খুব একটা তুষ্ট হতে পারেননি সুইস কোচ ভ্লাদিমির পেতকোভিচ। ম্যাচশেষে সুইস কোচ বলেছেন, ‘খেলার সাথে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলা কখনোই উচিত নয়। সমর্থক হওয়া ভালো, তবে সকলের প্রতি সম্মান দেখানোটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবল মাঠের পরিবেশ সবসময়ই দারুণ, আর এখানে ইতিবাচক আবেগ দেখানোটাই ভালো। এটা শুধু আমার মতামতই নয়, পুরো বিশ্বেরই একই মনোভাব দেখানো উচিত। কারণ ফুটবল মাঠে আমরা রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে আসি না।’
Comments