বাংলাদেশি নাট্য উৎসব ‘পূবের নাট্যগাথা’ চলেছে কলকাতায়

Moimonsingha Gitika
‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: স্টার

কলকাতায় প্রথম বারের মতো বাংলাদেশি নাটক, নাটকের বিষয়বস্তু ও রচনা নিয়ে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী নাট্য উৎসব ‘পূবের নাট্যগাথা’।

নতুন শহর সল্টলেকের পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের আরও একজন মন্ত্রী ও নাট্যকার-অভিনেতা ব্রাত্য বসু, অভিনেতা কৌশিক সেন, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান প্রমুখ।

গত ২২ জুন সন্ধ্যায় সাড়ম্বর এই আয়োজনে কলকাতার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাট্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

উৎসবের আবহ শুধু মঞ্চেই পাওয়া যায়নি বরং আয়োজকরা প্রেক্ষাগৃহের বাইরেও দর্শকদের সামনে পূবের নাটকের সংক্ষিপ্ত বিবরণী তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিবেশী দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। বাণিজ্য, শিল্প-সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের জন্য নাটক একটি অন্যতম মাধ্যম। আর বাংলাদেশের নাটক মানেই মন ছুঁয়ে যাওয়া।”

তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রাচ্য সম্মাননা ২০১৮ প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, “এই ধরণের আয়োজন দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনকেও সুদৃঢ় করবে।”

তবে আগের বক্তাদের কথার সঙ্গে একটু দ্বিমত প্রকাশ করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান। তিনি আয়োজকদের এই নাট্য উৎসব আয়োজন করা এবং তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “আসলে দুই দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম টেলিভিশন চ্যানেল। কলকাতায় বাংলাদেশের কোনও চ্যানেলই দেখার সুযোগ নেই। তাই কলকাতার মানুষের পক্ষে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য জানার বিষয়ে একটা গ্যাপ থাকছে।” তিনি উপস্থিত মন্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কলকাতায় বাংলাদেশি চ্যানেল দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানান।

উপরাষ্ট্রদূতের কথার পর অবশ্য মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জানাবেন বলে উপস্থিত দর্শকদের আশ্বাস দেন।

নাট্য উৎসবের প্রথম দিন উদ্বোধনী নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ হয় কবি জসীমউদদীন প্রণীত ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’। নাটকের মুখ্য অভিনেতা ও নির্দেশক গৌতম হালদারের অভিনয় মুগ্ধ করে দর্শকদের।

আয়োজক প্রাচ্য-এর সম্পাদক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “মোট সাতটি নাটক নিয়ে নাট্য উৎসবটি সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সৈয়দ শামসুল হক এর ‘নুরুলদিনের সারাজীবন’, যার প্রযোজনা করেছে কল্যানী নাট্যচর্চা কেন্দ্র এবং নির্দেশনায় রয়েছেন কিশোর সেনগুপ্ত। এরপর, অবন্তী চক্রবর্তীর নির্দেশনায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস ‘লালসালু’ অবলম্বনে নাটক মঞ্চস্থ করবে আয়োজক সংস্থা প্রাচ্য।”

আগামী ২৮ জুন সন্ধ্যায় ঢাকার স্বপ্নদলের ‘হেলেন কেলার’ নাটকের মধ্য দিয়ে সাতদিনের এই নাট্য উৎসবের পর্দা নামবে। এর আগে ২৫ জুন সিরাজগঞ্জের নাট্য লোকের ‘রূপসুন্দরী’, ২৬ জুন ঢাকার শব্দ নাট্যচর্চার ‘চম্পাবতী’ এবং ২৭ জুন যশোরের বির্বতন নাট্য গোষ্ঠীর ‘মাতব্রিং’ মঞ্চস্থ করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বপ্নদল নাট্য গোষ্ঠীর প্রধান সচিব ও ‘হেলেন কেলার’ নাটকের একক অভিনেতা জাহিদ রিপন। উৎসব নিয়ে বলতে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে এই অভিনেতা বললেন, “এই ধরণের উদ্যোগে অংশ হতে পেরে গর্ববোধ করছি। পশ্চিমবঙ্গে এর আগে পূর্ববঙ্গের তথা বাংলাদেশের নাটক কিংবা প্রযোজনা অথবা রচনা নিয়ে এই ধরণের নাট্য উৎসব হয়নি।”

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

18m ago