‘জার্মান ফুটবলের কালো দিন’
গত দুই বিশ্বকাপেই আগের আসরের চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। জার্মানির গ্রুপের যা অবস্থা ছিল, তাতে এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকার শঙ্কা ছিলই। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কাই বাস্তবতায় রূপ নিলো। ইতালি ও স্পেনের পর টানা তৃতীয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছে জার্মানি।
এমন বিদায়ে মুষড়ে পড়েছেন দলের সবাই। শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও মাত্র এক গোলের ব্যবধানে জিতলেই পরের পর্বে চলে যেত জার্মানরা। কিন্তু এদিন আর ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গেছে। ম্যাচে কমপক্ষে তিনটি পরিষ্কার গোলের সুযোগ পাওয়া হামেলস ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা খুব, খুব কঠিন। আজও আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করেছি আমরা পারব। যখন এক গোল খেয়ে গেলাম, তখনও আমরা হাল ছেড়ে দেইনি, প্রাণপণ চেষ্টা করেছি।’
বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন কি না সেটি নিয়েই সন্দেহ ছিল ম্যানুয়েল নয়্যারের। শেষ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচেই খেলেছেন, তাও আবার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে। ১৯৩৮ সালের পর জার্মানির এই প্রথম এত তাড়াতাড়ি বিশ্বকাপ থেকে বাড়ির পথ ধরেছে তারই অধিনায়কত্বে। নয়্যার তাই এমন বিদায়ের পর স্তব্ধ। এক কথায় যেন বলে দিয়েছেন সব জার্মানের মনের কথাটাই, ‘জার্মানির ফুটবলের জন্য এক কালো দিন এটি।’
চার বছর আগে তাঁর হাত ধরেই ২৪ বছরের শিরোপা ঘুচেছিল জার্মানির। সেই জোয়াকিম লো’র অধীনেই এবার প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়তে হলো। স্বাভাবিকভাবেই তাই হতাশ, অপমানিত লো। ম্যাচ শেষে নিজের হতাশা গোপন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করেননি, ‘এমন ঘটনা ঐতিহাসিক। নিশ্চিতভাবেই এই ফলাফল জার্মানিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি করবে।’
জার্মানির এমন বিদায় প্রাপ্য বলেও মন্তব্য করেছেন লো, ‘আমরা জানতাম সুইডেন এগিয়ে গেছে। আমাদের তাই কোরিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করার দরকার ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারিনি, আমাদের খেলায় ক্লাসিক সেই জার্মানির ছাপ ছিল না। আমাদের তাই বাদ পড়াই উচিত।’
জার্মানির হয়ে এক যুগ কোচের দায়িত্ব পালনকালে কখনোই কোন টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালের আগে বাদ না পড়া লো নিজেদের সমালোচনা করতেও পিছপা হননি, ‘এই টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে করে আমাদের শেষ ষোলোতে যাওয়াটা প্রাপ্য না। আমরা বাদ পড়েছি, কারণ আমরা গোল করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগই তৈরি করতে পারিনি। প্রতিবারই আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছি।’
গতকালের ম্যাচে লো প্রথম একাদশে রাখেননি অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড থমাস মুলারকে। এটি নিয়েও কথা বলতে হয়েছে লোকে, ‘আমার কাছে আজকের লাইন-আপকে বেশ ভালো মনে হয়েছে। মুলার আগের দুই ম্যাচে তেমন কিছু করে দেখাতে পারেনি। আমাদেরকে আজ ঝুঁকি নিতেই হতো। গোলের অপেক্ষায় বসে থাকতে পারতাম না আমরা। আর সে কারণেই আমাদের রক্ষণভাগে ফাটল তৈরি হয়ে গেছে।’
তবে ভবিষ্যতে এই জার্মান দলই আবার সমর্থকদের গর্বিত করবে, এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি, ‘আমাদের জন্য এই ফলাফল চরম হতাশার। কিন্তু এই দলে কিছু তরুণ ফুটবলার আছে, যাদের তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো প্রতিভা আছে। এমন ঘটনা আমাদের সাথেই প্রথম ঘটেনি। আমাদের এখন সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’
Comments