সাধ্যের মধ্যে দেশি ব্র্যান্ড রানার নাইট রাইডার
আজকাল বাজারে ১৫০ সিসির বাইকের কোন অভাব নেই। ইয়ামাহা, সুজুকি, হোন্ডা, হিরো আর বাজাজদের ভিড়ে ১৫০ সিসির বাইকের বাজারটা প্রতিযোগিতায় টৈটুম্বুর। এতো সব নামি-দামি ব্র্যান্ডের মাঝে বাংলাদেশি কোনো বাইক কিনতে হলে অবশ্যই থাকতে হবে গভীর পর্যালোচনা আর বিবেচনা।
কষ্ট করে সেই হিসাব আর কষা লাগবে না। আপনাদের জন্য আমরা এই প্রতিযোগিতার বাজারে একটি নতুন বাইকের রিভিউ নিয়ে হাজির হচ্ছি – দেশি রানার কোম্পানির ১৫০ সিসি সেগমেন্টের প্রতিযোগী নাইট রাইডার।
কেমন দেখতে?
ঘুরে ফিরে, প্রথম দেখায় রানার নাইট রাইডার অসাধারণ কিছু নয়। এর ট্রাপিজোয়েড আকৃতির হেডলাইটগুলো সাধারণ বাইকেও আজকাল দেখা যায়। আর বডি ডিজাইনেও আহামরি কোন নতুনত্ব নেই। তবে, এক দিক দিয়ে চিন্তা করলে নাইট রাইডারের জন্য বিষয়টি খারাপ না। বাইকের সাধারণ ডিজাইনটা একজন ক্রেতার সাধারণ প্রত্যাশা মেটাবে। ধাক্কা খাওয়ার মতো কোন উদ্ভট নতুনত্ব এতে নেই। বাইকটিতে সাধারণ রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু রংয়ের সংমিশ্রণে একটি চমক আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
আমাদের টেস্ট রাইডটি ছিল নীল রংয়ের। এর সাথে কড়া কমলা আর কালোর ব্যবহার বাইকটির কিছুটা চওড়া ফুয়েল ট্যাংক আর মসৃণ পেছন ভাগটাকে খুব সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তোলে। পেছনের উঁচু সিটটার নিচে বসানো হয়েছে ব্রেক লাইট, যা দেখতে খুবই স্পোর্টি। পেছনের চাকার ওপর রয়েছে অনেকটুকু ফাঁকা যায়গা। সামনে এন্যালগ ট্যাকোমিটারের সাথে বসানো হয়েছে ডিজিটাল স্পিডমিটার। যদিও দেখতে আধুনিকই দেখায়, তবে ১৫০ সিসির অন্যান্য গাড়িগুলোতে এখন দুটো মিটারই ডিজিটাল হয়ে থাকে।
কি আছে?
রানারের নাইট রাইডারে ১৫০ সিসি গাড়িতে বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে। যেমন ধরা যাক সামনের চাকার ২৫০ মিমি: ডিস্ক ব্রেক (পেছনের চাকায় ১০ মিমি: ড্রাম ব্রেক), পেছনের চাকায় অ্যাডজাস্টেবল মোনো শক সাসপেনশন (সামনের চাকায় টেলিস্কোপিক ফর্ক), অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটারগুলোর ব্যবহার আর ১৫ লিটারের ফুয়েল ট্যাঙ্ক। যদিও পেছনের টায়ারটা আশাব্যঞ্জকভাবে পুরু নয়, তবুও পেছনের ৮০/১০০-১৭ আর পেছনের ১১০/৮০-১৭ চাকা দুটো মিলিয়ে একটা অন্যরকম আগ্রাসী করে তোলে। এর ৪-স্ট্রোক, ২-ভালভ সোক ১-সিলিন্ডারের সমন্বয়ে সৃষ্ট ইঞ্জিন তৈরি করতে পারে ৭৫০০ আরপিএম-এ ১২ এইচপি (হর্স পাওয়ার), আর ৫৫০০ আরপিএম-এ ৯ পাউন্ড পার ফিট টর্ক।
চালিয়ে কেমন?
রানারের নাইট রাইডার বেশ সাবলীলভাবেই চালানো যায়। স্বাচ্ছন্দ্যবোধের মাত্রায় অন্যান্য ১৫০ সিসির গাড়ির তুলনায় নাইট রাইডার কোনো অংশেই কম যায় না। সবচাইতে প্রশংসার বিষয়টি হলো, নাইট রাইডারের পেছনের চাকায় অ্যাডজাস্টেবল শক আছে, যা কী না অন্যান্য অনেক ভারতীয় ব্র্যান্ডের বাইকগুলোতেও নেই।
সামগ্রিকভাবে নাইট রাইডারের আরো একটি চমৎকার বিষয় হলো এর ওজন। ১৩৫ কেজি নিয়ে যদিও ইয়ামাহা এফজেডের তুলনায় এই গাড়ি কিছুটা ভারি, তবে ১৫০ সিসির সেগমেন্টের অন্যান্য গাড়িগুলোর তুলনায় নাইট রাইডার বেশ হালকা। এ কারণে, নাইট রাইডারের হ্যান্ডলিং বেশ আরামদায়ক এবং সংবেদনশীল। পেছনের চাকায় ১৭ ইঞ্চির চাকা ব্যবহারের কারণে ফুয়েল সাশ্রয়ী হলেও, আমাদের মনে হয়েছে আরো একটু মোটা চাকা হলে প্রয়োজনের সময় রাস্তা কামড়ে ধরে থাকার ক্ষমতাটা থাকত।
নাইট রাইডারে ইঞ্জিনের শব্দ একটু বিকট, কিন্তু টান দেওয়ার সময় যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করলেও ভাইব্রেশন খুব কমই লাগে। টান দেওয়ার ক্ষমতা খুব আহামরি না হলেও আমাদের মনে হয়েছে যথেষ্ট। পাশাপাশি, পেছনের প্যাসেঞ্জারের জন্য সিটটা বেশ আরামাদয়ক।
আমাদের ভাবনা
দাম, মান, যন্ত্রাংশের ব্যবহার আর দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের কথা বিবেচনা করে আমাদের কাছে রানার নাইট রাইডারকে যথেষ্ট উপযুক্ত একটা বাইক মনে হয়েছে। বাজারের শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিন মোটর, অত্যাধুনিক সকল যন্ত্রপাতি বা নামি-দামি ব্র্যান্ডের নামফলক গায়ের ওপর না থাকা সত্ত্বেও আমরা বলব এটি দেশি বাইক প্রস্তুত করার একটি চমৎকার প্রচেষ্টা। বেলা শেষে, রানার নাইট রাইডার ব্র্যান্ডটি মেড ইন বাংলাদেশের এক গর্বিত পণ্য।
রানার নাইট রাইডার ১৫০সিসি। দাম এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
Comments