পদ্মা সেতুর পৌনে ১ কিলোমিটার দৃশ্যমান হচ্ছে
পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসছে আজ (২৯ জুন)। তাই সব প্রস্তুতি এখন শেষ হয়েছে। দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে ‘৭এফ’ নম্বর স্প্যানটি সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির উপর বসানোর কথা রয়েছে। এর মধ্যে সেতুটি স্পর্শ করতে যাচ্ছে জাজিরা প্রান্তের তীর। আর পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে পৌনে এক কিলোমিটার।
দেড়শো মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি বসানোর জন্য নানা রকম প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো হয়েছে এখানে। এর আগে গতকাল বিকালে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির কাছে পৌঁছে যায় ‘৭এফ’ নম্বর স্প্যানটি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ জেটি থেকে ৩৬শ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি প্রায় ৩২শ টন ওজনের স্প্যানটি বয়ে নিয়ে আসে। যদিও এটি রওনা হওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু পদ্মায় অস্বাভাবিক ঢেউ থাকায় জাহাজটি রওনা হয় পরের দিন।
সব প্রস্তুতি শেষ করার পর পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় নিশ্চিত করেছেন সব ঠিকঠাক থাকলেও শুক্রবার সকালেই স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া হবে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটিতে।
সেতুর মোট ৪২টি খুঁটির মধ্যে দুই তীরে ১৬টি করে পাইল রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে ২০টি সম্পন্ন হয়েছে। আর নদীতে ৪০টি খুঁটির ২২টিতে সাতটি করে এবং ১৮টির ছয়টি করে মোট ২৬২টি পাইল রয়েছে। যার অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১৫০টি বসে গেছে।
এদিকে, ৫ম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেতুর কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সেতুর চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ৩৭ নম্বর খুঁটি থেকে ৪১ নম্বর খুঁটিতে সেতুর এই চারটি স্প্যান প্রতিটি ১৫০ মিটার করে ৬০০ মিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। আর এই স্প্যানটি বসানোর পর সেতুটির ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে।
সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ফিটিং করার পর ভাসমান ক্রেন দিয়ে ধূসর রঙের স্প্যানটি গন্তব্যে নেওয়া হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। পরে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। সর্বশেষ ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে।
খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট খুঁটির সংখ্যা হবে ৪২টি। ১৫০ মিটার লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। মোট ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। এরপর সেগুলো ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে।
Comments